প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! নামাযে পায়ের সাথে পা লাগানোর বিধান সম্পর্কে জানতে চাই ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
জামাতে নামায আদায়কালে কাতার এমনভাবে সোজা করা যাতে মাঝে কোন ফাঁকা জায়গা না থাকে এবং কেউ আগপিছ না হয়ে থাকে। কাঁধ, হাঁটু, টাখনু ও ঘাড় পাশের জনের কাঁধ, হাঁটু, টাখনু ও ঘাড় বরাবর করে কাতার সোজা করাই মূলত হাদীসের উদ্দেশ্য পরস্পরে লাগানো উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু কেউ কেউ এসব অঙ্গ লাগানোর কথা বলে থাকেন। অথচ মুসলিম উম্মাহর সুন্নাহ-সম্মত অবিচ্ছিন্ন আমলী পদ্ধতি হলো, কাতারের মাঝে ফাঁক না রেখে পরস্পরের কাঁধ, হাঁটু, টাখনু ও ঘাড় বরাবর করার মাধ্যমে কাতার সোজা করতে হবে। পরস্পরে এসব অঙ্গ লাগানো বিদ’আত ও সুন্নতের খেলাফ। কাজেই পায়ের সাথে পা লাগানো পরিহার করতে হবে।
عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” أَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ فَإِنِّي أَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِي “. وَكَانَ أَحَدُنَا يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَقَدَمَهُ بِقَدَمِهِ
১.অর্থ: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত: নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করে নাও। কেননা আমি তোমাদেরকে আমার পিছন দিক থেকেও দেখতে পাই। আনাস (রা.) বলেন, আমাদের প্রত্যেকেই তার পাশ্ববর্তী ব্যক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়াতেন। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭২৫ হাদীসের মান: সহীহ)
সহীহ বুখারীর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাগ্ৰন্থ ফাতহুল বারীতে হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, “কাতারে পায়ে পা এবং কাঁধে কাঁধ মিলানোর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, কাতার সোজা এবং ফাঁকাস্থান পূরণ করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া। আর বহু হাদীসেই কাতারের ফাঁকাস্থান বন্ধ করার নির্দেশ ও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। (ফাতহুল বারী ২/৩৪৬)
সহীহ বুখারীর বিখ্যাত আরেকটি ব্যাখ্যাগ্ৰন্থ উমদাতুল কারীতে হাফেয বদরুদ্দীন আইনী (রহ.)ও উল্লেখিত ব্যাখ্যাই প্রদান করেছেন। (উমদাতুল কারী ৪/৩৬০- ৩৬২)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلاَ يَضَعْ نَعْلَيْهِ عَنْ يَمِينِهِ وَلاَ عَنْ يَسَارِهِ فَتَكُونَ عَنْ يَمِينِ غَيْرِهِ إِلاَّ أَنْ لاَ يَكُونَ عَنْ يَسَارِهِ أَحَدٌ وَلْيَضَعْهُمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ ”
২.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, তোমারা নামায আদায়ের সময় তোমাদের ডান পায়ের পাশে জুতা রাখবে না এবং তোমাদের বাম পায়ের পাশেও রাখবে না, কারণ সেটা অন্য ভাইয়ের ডানপাশ। তবে বামপাশে কেউ না থাকলে সেখানে রাখতে পারবে। অবশ্য জুতা জোড়া নিজের দুই পায়ের মধ্যখানে রাখাই উত্তম। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৬৫৪ মিশকাতুল মাসাবীহ হাদীস নং ৭৬৭ হাদীসের মান: হাসান)
এ হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, দুই মুসল্লীর পায়ের মাঝখানে ফাঁক থাকবে, যেখানে জুতা রাখা সম্ভব। কিন্তু বিশেষ কারণে নবী (সা.) সেখানে জুতা রাখতে নিষেধ করেছেন। দুইজনের পায়ের মাঝখানে যদি ফাঁকই না থাকে (যেমনটি সালাফী ভাইয়েরা করে থাকেন) তাহলে তো জুতা রাখতে নিষেধ করার কোন মানেই হয় না।
عَنْ أَبِي الْقَاسِمِ الْجَدَلِيِّ، قَالَ سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ، يَقُولُ أَقْبَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى النَّاسِ بِوَجْهِهِ فَقَالَ ” أَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ ” . ثَلاَثًا ” وَاللَّهِ لَتُقِيمُنَّ صُفُوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللَّهُ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ ” . قَالَ فَرَأَيْتُ الرَّجُلَ يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَرُكْبَتَهُ بِرُكْبَةِ صَاحِبِهِ وَكَعْبَهُ بِكَعْبِهِ
৩.অর্থ: আবুল কাসেম আল-জাদালী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নুমান ইবনে বশীর (রা.) কে বলতে শুনেছি। রসূলুল্লাহ (সা.) লোকদের নিকট উপস্থিত হয়ে তিনবার বলেন, তোমরা কাতার সোজা করো। আল্লাহর কসম! তোমরা কাতার সোজা করে দাঁড়াবে অন্যথায় আল্লাহ্ তোমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করে দিবেন। নুমান ইবনে বশীর (রা.) বলেন, অতঃপর আমি মুসল্লীদেরকে পরস্পরে কাঁধে কাঁধ, হাঁটুতে হাঁটু এবং টাখনুর সাথে টাখনু মিলিয়ে দাঁড়াতে দেখেছি। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৬৬২ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” رُصُّوا صُفُوفَكُمْ وَقَارِبُوا بَيْنَهَا وَحَاذُوا بِالأَعْنَاقِ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي لأَرَى الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ كَأَنَّهَا الْحَذَفُ
৪.অর্থ: আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা (নামাযের) কাতারসমূহে মিলে মিশে দাঁড়াবে। এক কাতারকে অপর কাতারের নিকট রাখবে এবং তোমরা একে অন্যের ঘাড় বরাবর করে দাঁড়াবে। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন! আমি দেখতে পাচ্ছি, কাতারের খালি জায়গাতে শয়তান যেন একটি বকরীর বাচ্চার ন্যায় প্রবেশ করছে। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৬৬৭ হাদীসের মান: সহীহ)
এসব হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, কাতার এমনভাবে সোজা করা যাতে মাঝে কোন ফাঁকা জায়গা না থাকে এবং কেউ আগপিছ না হয়ে থাকে। কাঁধ, হাঁটু, টাখনু ও ঘাড় অপর ব্যক্তির কাঁধ, হাঁটু, টাখনু ও ঘাড়ের সঙ্গে লাগিয়ে রাখা কখনো হাদীসের উদ্দেশ্য নয়। কেননা ঘাড়ের সঙ্গে ঘাড় লাগিয়ে দাঁড়ানো অসম্ভব। হাঁটুর সঙ্গে হাঁটু এবং কাঁধের সঙ্গে কাঁধ লাগিয়ে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। আর সর্বক্ষণ টাখনুর সঙ্গে টাখনু লাগিয়ে রাখা যে কতটুকু কষ্টসাধ্য এবং প্রত্যেক রাকাতে এর জন্য নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হয় তা তো বলাই বাহুল্য। এ থেকে প্রমাণিত হয় ঘাড়, কাঁধ, হাঁটু ও টাখনু এই চার জায়গায় মিলানো দ্বারা উদ্দেশ্য একটাই। আর তা হলো,বরাবর করে কাতার সোজা করা। সালাফী ভাইদের আস্থা ভাজন শায়েখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীন (রহ.)ও ফতোয়া আরকানুল ইসলাম এর ২৩৪ নং প্রশ্নের জবাবে এই মতকেই ব্যক্ত করেছেন। (ফতোয়া আরকানুল ইসলাম পৃষ্ঠা: ৩৬৮)
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মিজানুর রহমান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply