নামাযে কুরআন দেখে পড়া যাবে কি ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম! কুরআন বেশি মুখস্থ না থাকলে নামাযে কুরআন দেখে দেখে পড়া যাবে কি ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

নামাযে কুরআন দেখে দেখে পড়া যাবে না। কেননা হাদীসে কুরআন মুখস্থ না থাকলে, দেখে না পড়ে বিভিন্ন তাসবীহ পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবুও কুরআন দেখে পড়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। যদি নামাযে কুরআন দেখে পড়ার অনুমতি থাকতো তাহলে যাদের কুরআন মুখস্থ নেই তাদের অনুমতি দেয়া হতো। যেহেতু অক্ষমতা সত্ত্বেও তাদেরকে দেখে পড়ার অনুমতি প্রদান করা হয়নি। সেহেতু এ থেকে বুঝা যায় যে, নামাযে কুরআন দেখে দেখে পড়া যাবে না। এছাড়াও নামাযে কুরআন দেখে পড়লে আমলে কাসীর হয় যা সর্ব সম্মতিক্রমে নামায ভঙ্গের কারণ। আরও এমন অনেক সমস্যা রয়েছে তাই কোনভাবেই নামাযে কুরআন দেখে পড়া জায়েয নয়। নিম্নে বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ আলোচনা করা হলো।

صَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي، فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ فَلْيُؤَذِّنْ لَكُمْ أَحَدُكُمْ، وَلْيَؤُمَّكُمْ أَكْبَرُكُمْ»

১.অর্থ: রাসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা আমাকে যেভাবে নামায আদায় করতে দেখেছ সেভাবে নামায আদায় করো। যখন নামাযের সময় উপস্থিত হয়, তখন যেন তোমাদের কোন একজন তোমাদের উদ্দেশ্যে আযান দেয়, আর তোমাদের মধ্যে যে বড় সে যেন তোমাদের ইমামতি করে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭২৪৬ হাদীসের মান: সহীহ)

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীস অনুযায়ী রাসূল (ﷺ) এর মত নামায পড়তে হলে, নামাযে কুরআন দেখে দেখে পড়া যাবে না। কারণ রাসূল (ﷺ) পুরো জিন্দেগীতে কোন দিন কুরআন দেখে নামায পড়েননি এবং পড়তেও বলেননি। এমনকি সাহাবায়ে কেরাম উনার উপস্থিতি পড়েছেন এমন কোন প্রমাণও নেই। সুতরাং রাসূল (ﷺ) এর মত নামায পড়তে হলে কুরআন দেখে দেখে পড়ার কোন সুযোগ নেই।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى، قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنِّي لاَ أَسْتَطِيعُ أَنْ آخُذَ مِنَ الْقُرْآنِ شَيْئًا فَعَلِّمْنِي مَا يُجْزِئُنِي مِنْهُ . قَالَ ” قُلْ سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ ”

২. অর্থ: আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.) সূত্রে বর্ণিত: তিনি বলেন, নবী (সা.) এর নিকট এক
লোক এসে বলল, আমি কুরআন মুখস্থ করতে পারি না। অতএব আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা কুরআনের পরিবর্তে যথেষ্ট হবে। নবী (সা.) বললেন, তুমি বলো ‘সুবহানাল্লাহ, অয়ালহামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লহু ওয়াল্লহু আকবার ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৮৩২ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৯২৪ হাদীসের মান: হাসান)

عَنْ رِفَاعَةَ بْنِ رَافِعٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَصَّ هَذَا الْحَدِيثَ قَالَ فِيهِ ‏”‏ فَتَوَضَّأْ كَمَا أَمَرَكَ اللَّهُ جَلَّ وَعَزَّ ثُمَّ تَشَهَّدْ فَأَقِمْ ثُمَّ كَبِّرْ فَإِنْ كَانَ مَعَكَ قُرْآنٌ فَاقْرَأْ بِهِ وَإِلاَّ فَاحْمَدِ اللَّهَ وَكَبِّرْهُ وَهَلِّلْهُ ‏”‏.

৩.অর্থ: রিফা ইবনে রাফে (রা.) থেকে বর্ণিত।
রাসূল (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী অযু করো, তারপর কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করো। তারপর দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার বলার পরে কুরআনের কিছু যদি মুখস্থ থাকে তবে তা পড়বে। তা না থাকলে আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করবে। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৮৬১ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৩০২ হাদীসের মান: সহীহ)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস দুটিতে রাসূল (ﷺ) কুরআন মুখস্ত থাকলে ঐ মুখস্থ অংশ থেকে নামাযে পড়তে বলেছেন। আর যদি কুরআন মুখস্ত না থাকে তাহলে বিভিন্ন তাসবীহ পড়ার আদেশ দিয়েছেন। এরপরেও নামাযে কুরআন দেখে পড়তে বলেননি। অতএব বুঝা গেল নামাযে কুরআন দেখে পড়া যাবে না।

وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى ظَهْرِ كَفِّهِ الْيُسْرَى وَالرُّسْغِ وَالسَّاعِدِ

৪.অর্থ: রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) নিজের ডান হাত দ্বারা বাম হাতের কব্জি ও এর জোড়া (নামাযে) আঁকড়ে ধরেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৭২৭ হাদীসের মান: সহীহ)

ব্যাখ্যা: কুরআন হাতে রেখে পড়লে অথবা সামনে কিছুর উপর রেখে পড়লে পৃষ্ঠা শেষ হলে পাল্টাতে হবে। তখন এই হাদীসের উপর আমল করা সম্ভব
হবে না। ফলে রাসূল (ﷺ) এর মত নামায হবে না। অতএব উক্ত হাদীস দ্বারাও বুঝা গেল নামাযে কুরআন দেখে দেখে পড়া যাবে না।

كانَ ﷺ إِذَا صَلَّى، طَأْطَأَ رَأْسَهُ وَرَمَى بِبَصَرِهِ نَحْوَ الأَرْضِ

৫.অর্থ: রাসূল (ﷺ) যখন নামাযে দাঁড়াতেন, তখন মাথাটা নিচু করে ঝুঁকিয়ে রাখতেন এবং দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন জমিনের দিকে। (মুসতাদরাকে হাকীম, হাদীস নং ১/৪৭৯ হাদীসের মান: সহীহ)

ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসে নামায পড়া অবস্থায় দৃষ্টি নিচের দিকে রাখার কথা বলা হয়েছে। এখন যদি নামাযের মধ্যে দেখে দেখে কুরআন তিলাওয়াত করা হয় তাহলে দৃষ্টি কুরআনের দিকে দিতে হবে। ফলে রাসূল (ﷺ) এর মত নামায হবে না। অতএব নামাযে কুরআন দেখে দেখে পড়া যাবে না।

قَالَ: حَدَّثَنِي مُعَيْقِيبٌ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فِي الرَّجُلِ يُسَوِّي التُّرَابَ حَيْثُ يَسْجُدُ، قَالَ: «إِنْ كُنْتَ فَاعِلًا فَوَاحِدَةً»

৬.অর্থ: মু’আইকীব (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) সে ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছেন, যে সিজদার স্থান থেকে মাটি সমান করে। তিনি বলেন, যদি তোমার একান্তই করতে হয়, তাহলে একবার। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২০৭ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ” مَا لِي أَرَاكُمْ رَافِعِي أَيْدِيكُمْ كَأَنَّهَا أَذْنَابُ خَيْلٍ شُمْسٍ اسْكُنُوا فِي الصَّلاَةِ ”

৭.অর্থ: জাবের ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের নিকট আগমন করে বললেন, তোমরা চঞ্চল ঘোড়ার লেজের মত হাত উঠাচ্ছ কেন? নামাযের মধ্যে স্থির থাকবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩০ হাদীসের মান: সহীহ)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস দুটির আলোকে বুঝা গেল যে, নামাযের ভিতর আমলে কাসীর হয়ে গেলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। আর সকল মাযহাবের ফুকাহায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, আমলে কাসীর হলে নামায নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং নামাযের মধ্যে কুরআন দেখে পড়তে গেলে যেহেতু আমলে কাসীর হয়ে যায়। তাই কুরআন দেখে পড়ার কোন সুযোগ নেই।

মোটকথা কুরআনের যতটুকু অংশ মুখস্থ আছে ততটুকুই নামাযে পড়তে হবে। কোনভাবেই নামাযে কুরআন দেখে পড়া যাবে না। কারণ রাসূল (ﷺ) ও চার খলীফার যুগে এমন কোন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (ﷺ) অথবা সাহাবায়ে কেরামের কেউ নামাযে কুরআন দেখে দেখে তিলাওয়াত করেছেন। শুধু আয়েশা (রা.) এর গোলাম যাকওয়ানের ব্যাপারে একটি মত পাওয়া যায় তিনি নামাযে কুরআন দেখে পড়েছেন। তার এই কাজকে ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা অভিহিত করেছেন। আর এর বিপক্ষে নানা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তাই এটা দিয়ে দলিল দেওয়া যাবে না। সুতরাং কেউ নামাযে কুরআন দেখে পড়লে তার অসংখ্য হাদীস অমান্য করা হবে এবং আমলে কাসীর হওয়ার কারণে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। অতএব কুরআন দেখে পড়া থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মো. রুহুল আমিন।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *