প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হলো জামাতে নামায চলাকালীন কারো অযু ছুটে গেলে সে মুসল্লীদের সামনে দিয়ে অযু করার জন্য যেতে পারবে কি ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
জামাতে নামায চলাকালীন কারো অযু ছুটে গেলে
সে মুসল্লীদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে অযুর
জন্য যেতে পারবে। এর দ্বারা তার নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার কোন গোনাহ হবে না। কারণ ইমামের সুতরা সবার পক্ষ থেকে সুতরা হয়ে যায়। তাই জামাত শুরু হবার পর থেকে ইমামের সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে না যদি তার সামনে সুতরা না থাকে। কিন্তু মুসল্লীদের সামনে দিয়ে প্রয়োজনে অতিক্রম করা জায়েয আছে। এতে কোন সমস্যা নেই।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا خَرَجَ يَوْمَ الْعِيدِ أَمَرَ بِالْحَرْبَةِ فَتُوضَعُ بَيْنَ يَدَيْهِ، فَيُصَلِّي إِلَيْهَا وَالنَّاسُ وَرَاءَهُ، وَكَانَ يَفْعَلُ ذَلِكَ فِي السَّفَرِ
১.অর্থ: ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিন যখন বের হতেন তখন তার সামনে ছোট নেযা (বল্লম) পুঁতে রাখতে নির্দেশ দিতেন। সেদিকে মুখ করে তিনি নামায আদায় করতেন।
আর লোকজন তার পেছনে (বিনা সুতরায়) নামাযে দাঁড়াত। তিনি সফরে থাকাকালীন সময়েও এমন করতেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৪৭০ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৯৯৮ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّهُ قَالَ أَقْبَلْتُ رَاكِبًا عَلَى حِمَارٍ أَتَانٍ، وَأَنَا يَوْمَئِذٍ قَدْ نَاهَزْتُ الاِحْتِلاَمَ، وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي بِالنَّاسِ بِمِنًى إِلَى غَيْرِ جِدَارٍ، فَمَرَرْتُ بَيْنَ يَدَىْ بَعْضِ الصَّفِّ، فَنَزَلْتُ وَأَرْسَلْتُ الأَتَانَ تَرْتَعُ، وَدَخَلْتُ فِي الصَّفِّ، فَلَمْ يُنْكِرْ ذَلِكَ عَلَىَّ أَحَدٌ.
২.অর্থ: আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি একটা মাদী গাধার উপর সওয়ার হয়ে এলাম, তখন আমি ছিলাম সাবালক হবার নিকটবর্তী। আল্লাহর রসূল (সা.) সামনে দেয়াল ব্যতীত অন্য কিছুকে সুতরা বানিয়ে মিনায় লোকদের নিয়ে নামায আদায় করছিলেন। কাতারের কিছু অংশ অতিক্রম করে আমি সওয়ারী হতে অবতরণ করলাম। গাধীটিকে চরাতে দিয়ে আমি কাতারে শামিল হয়ে গেলাম। আমাকে কেউই এ কাজে বাঁধা দেয়নি। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৪৬৯ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” إِذَا أَحْدَثَ أَحَدُكُمْ فِي صَلاَتِهِ فَلْيَأْخُذْ بِأَنْفِهِ ثُمَّ لْيَنْصَرِفْ ”
৩.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন: যখন তোমাদের কারো নামাযের মধ্যে অযু নষ্ট হয়, তখন সে যেন তার নাক ধরে বের হয়ে যায়।(নাক ধরা অযু নষ্টের পরিচায়ক)। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ১১১৪ সুনানে ইবনে মাজাহ ১২২২ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا رَعَفَ انْصَرَفَ فَتَوَضَّأَ ثُمَّ رَجَعَ فَبَنَى وَلَمْ يَتَكَلَّمْ
৪.অর্থ: নাফে (রহ.) থেকে বর্ণিত: যখন আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) এর নাক দিয়ে রক্ত বের হত,
তখন তিনি নামায হতে ফিরে যেতেন। অতঃপর অযু করতেন এবং পুনরায় এসে অবশিষ্ট নামায আদায় করতেন, আর তিনি এই অবস্থায় কথা বলতেন না। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক হাদীস নং ৭৬ হাদীসের মান: সহীহ)
তাহকীক: শুয়াইব আরনাউত (রহ.) বলেন, এই হাদীসটির সনদ সহীহ। বায়হাকী (রহ.) বলেন, এর সনদ সহীহ। ( তাখরীজু শারহিস সুন্নাহ ৩/২৭৮, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী ২/২৫৬)
মোদ্দা কথা হলো জামাতে নামায পড়া অবস্থায় যদি কোন মুসল্লীর অযু ভঙ্গ হয়ে যায়। তাহলে তার জন্য অযু ছাড়া বাকি নামায পরা জায়েয নেই। সে নাক ধরে অযু করার জন্য মসজিদ থেকে বের হয়ে যাবে। যাতে মুসল্লীরা বুঝতে পারে তার অযু নষ্ট হয়ে গেছে।অযু করে এসে ইমাম সাহেবের সাথে আবার শরীক হবে যদি নামায শেষ না হয়। আর যদি নামায শেষ করে ফেলে, তাহলে বাকি নামায একাকী আদায় করে নিবে। তবে শর্ত হলো অযুতে যাওয়া আসার সময় নামায ভঙ্গের কোন কিছু করা যাবে না। করলে পূর্ণ নামায আদায় করতে হবে।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে- আব্দুর রহমান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply