নামাযের রাকাত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে কী করতে হবে ? 

 

 প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম! অনেক সময় নামায পড়তে পড়তে নামাযের রাকাত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তখন কী করতে হবে ? মেহেরবানী করে দলিলসহ জানাবেন।

 

উত্তরঃ

 

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ  

حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

 

যদি কারো নামাযের মধ্যে রাকাত সংখ্যা নিয়ে মাঝে মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তাহলে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে কত রাকাত হয়েছে তা নির্ণয়ের চেষ্টা করবে। যে রাকাত সংখ্যার বিষয়ে প্রবল ধারণা হবে সেই ধারণা অনুযায়ী আমল করবে। সুতরাং চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযে যদি প্রবল ধারণা হয় তিন রাকাত পড়েছে তাহলে তিন রাকাত ধরেই বাকি নামায শেষ করবে। এক্ষেত্রে নামায শেষে সাহু সিজদা দিতে হবে না। কিন্তু রাকাত সংখ্যা নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় বিলম্ব করে ফেললে সাহু সিজদা দিতে হবে। আর যদি চিন্তার পরেও কোন রাকাতের বিষয়ে প্রবল ধারণা না হয়। তাহলে সন্দিহান রাকাতগুলোর মধ্যে কম সংখ্যাটি ধরে বাকি নামায পূর্ণ করবে। উদাহরণস্বরূপ দুই রাকাত হয়েছে না তিন রাকাত এমন সন্দেহ হলে দুই রাকাত হয়েছে ধরে বাকি নামায পূর্ণ করবে। এক্ষেত্রে প্রতি রাকাতে বসে তাশাহুদ পড়তে হবে এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করতে হবে।

 

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ، قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” إِذَا سَهَا أَحَدُكُمْ فِي صَلاَتِهِ فَلَمْ يَدْرِ وَاحِدَةً صَلَّى أَوْ ثِنْتَيْنِ فَلْيَبْنِ عَلَى وَاحِدَةٍ فَإِنْ لَمْ يَدْرِ ثِنْتَيْنِ صَلَّى أَوْ ثَلاَثًا فَلْيَبْنِ عَلَى ثِنْتَيْنِ فَإِنْ لَمْ يَدْرِ ثَلاَثًا صَلَّى أَوْ أَرْبَعًا فَلْيَبْنِ عَلَى ثَلاَثٍ وَلْيَسْجُدْ سَجْدَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يُسَلِّمَ ” 

 

১.অর্থ: আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ যখন তার নামাযে ভুল করে তারপর সে বলতে পারছে না সে কি এক রাকাত আদায় করেছে না দুই রাকাত আদায় করেছে, এমতাবস্থায় সে এক রাকাতকেই ভিত্তি হিসেবে ধরবে। সে কি দুই রাকাত আদায় করেছে না তিন রাকাত তা ঠিক করতে না পারলে দুই রাকাতকেই ভিত্তি ধরবে। সে তিন রাকাত আদায় করেছে না চার রাকাত তা ঠিক করতে না পারলে তিন রাকাতকেই ভিত্তি ধরবে। (এই সবক্ষেত্রে) সে সালাম ফিরানোর আগে দুটি (সাহু) সিজদা করবে। (সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৩৯৮ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১২০৯ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” إِذَا شَكَّ أَحَدُكُمْ فِي صَلاَتِهِ فَلَمْ يَدْرِ كَمْ صَلَّى ثَلاَثًا أَمْ أَرْبَعًا فَلْيَطْرَحِ الشَّكَّ وَلْيَبْنِ عَلَى مَا اسْتَيْقَنَ ثُمَّ يَسْجُدُ سَجْدَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يُسَلِّمَ فَإِنْ كَانَ صَلَّى خَمْسًا شَفَعْنَ لَهُ صَلاَتَهُ وَإِنْ كَانَ صَلَّى إِتْمَامًا لأَرْبَعٍ كَانَتَا تَرْغِيمًا لِلشَّيْطَانِ ” 

 

২.অর্থ: আবু সাইদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ তার নামাযে সন্দেহে পতিত হয় এবং সে স্থির করতে ব্যর্থ হয় যে, তিন রাকাত পড়েছে, না চার রাকাত, তখন সে সন্দেহ পরিত্যাগ করবে এবং যে-কয় রাকাতের উপর দৃঢ় প্রত্যয় হয়, সেটিই ধারণ করবে। তারপর সালাম ফিরাবার পূর্বে দুটি সিজদা করবে যদি তার পাঁচ রাকাতই পড়া হয়ে গিয়ে থাকে, তবে এই দুই সিজদা মিলে ছয় রাকাত হয়ে যাবে। আর যদি তার নামায পূর্ণ চার রাকাতই হয়, তবে দুই সিজদা শয়তানের মুখে মাটি নিক্ষেপের শামিল হবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৭১ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، يَرْفَعُهُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِذَا شَكَّ أَحَدُكُمْ فِي صَلاَتِهِ فَلْيَتَحَرَّ الَّذِي يَرَى أَنَّهُ الصَّوَابُ فَيُتِمَّهُ ثُمَّ – يَعْنِي – يَسْجُدُ سَجْدَتَيْنِ “

 

৩.অর্থ: আব্দুল্লাহ (রা.) সূত্রে রসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের কারো যদি নামাযে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তাহলে সে যেন ভেবে দেখে। যা সে সঠিক মনে করে তা পূর্ণ করবে, তারপর দুটি (সাহু) সিজদা করে নেবে। (সুনানে নাসায়ী হাদীস নং ১২৪০ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১২১২ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا قَامَ يُصَلِّي جَاءَهُ الشَّيْطَانُ فَلَبَسَ عَلَيْهِ حَتَّى لاَ يَدْرِي كَمْ صَلَّى فَإِذَا وَجَدَ أَحَدُكُمْ ذَلِكَ فَلْيَسْجُدْ سَجْدَتَيْنِ وَهُوَ جَالِس 

 

৪. অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ নামাযে দণ্ডায়মান হয়, তখন শয়তান তার নিকট এসে তাকে ধোঁকা দিতে দিতে এমন পর্যায়ে পৌঁছে দেয় যে, সে কয় রাকাত আদায় করেছে তা স্মরণ করতে পারে না। তোমাদের কারো যখন এমন অবস্থা হবে, তখন সে যেন বসা অবস্থায় দুটি সিজদা দেয়। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ১২৩২ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১০৩০ হাদীসের মান: সহীহ)

 

উল্লেখ্য নামাযের মধ্যে এ ধরনের সংশয় মনোযোগের অভাবে হয়ে থাকে। তাই খুশু-খুযুর সাথে নামায আদায়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে। কারো যদি নামায সম্পূর্ণ শেষ করার পর নামাযের রাকাত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয় তাহলে পুনরায় নামায আদায় করতে হবে।

 

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب

উত্তর প্রদানে- মোহাম্মদ বেলাল আহমদ।

শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার। 

উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল। 

পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার। 

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *