নামাযের মধ্যে মনে মনে সূরা কিরাত পড়লে নামায সহীহ হবে কি ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম! মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই নামাযের মধ্যে মনে মনে সূরা কিরাত পড়লে নামায সহীহ হবে কি ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

নামাযের মধ্যে মনে মনে সূরা কিরাত পড়লে নামায আদায় হবে না। কারণ এতে কিরাতের মধ্যে মাখরাজ থেকে হরফের উচ্চারণ হয় না৷ অতএব কেউ যদি মনে মনে দুই ঠোঁট বন্ধ রেখে সূরা কিরাত পড়ে তাহলে সেটা কিরাত পড়ার মধ্যে গণ্য করা হবে না বরং কল্পনা ধরা হবে৷ নামাযে আস্তে কিরাত পড়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে এতটুকু আওয়াযে পড়া যে, নিজ কান শুনতে পায়। তবে এতো জোরে পড়া যাবে না যা অন্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়। আর সর্বনিম্ন পদ্ধতি হচ্ছে জিহ্বা ও ঠোঁট নাড়িয়ে সহীহ শুদ্ধভাবে হরফ উচ্চারণ করে কিরাত পড়া।

وَلَا تَجۡہَرۡ بِصَلَاتِکَ وَلَا تُخَافِتۡ بِہَا وَابۡتَغِ بَیۡنَ ذٰلِ سَبِیۡلًا

১.অর্থ: আপনি নিজের নামাযে বেশি উঁচু স্বরে পড়বেন না এবং অতি নিচু স্বরেও নয়; বরং উভয়ের মাঝামাঝি পন্থা অবলম্বন করবেন। (সূরা বনী-ইসরাঈল: আয়াত নং ১১০)

وَ رَتِّلِ الۡقُرۡاٰنَ تَرۡتِیۡلًا

২.অর্থ: আর কুরআন আবৃত্তি করো ধীরে ধীরে স্পষ্ট ও সুন্দর ভাবে। (সূরা মুযযাম্মিল: আয়াত নং ৪)

عَنْ أَبِي مَعْمَرٍ، قَالَ: سَأَلْنَا خَبَّابًا أَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الظُّهْرِ وَالعَصْرِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قُلْنَا: بِأَيِّ شَيْءٍ كُنْتُمْ تَعْرِفُونَ؟ قَالَ: «بِاضْطِرَابِ لِحْيَتِهِ»

৩.অর্থ: আবু মা’মার (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী (ﷺ) কি যোহর ও আসরের নামাযে কিরাত পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা প্রশ্ন করলাম, আপনরা কি করে তা বুঝতেন? তিনি বললেন, তাঁর দাড়ির নড়াচড়ায়। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭৬০ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৮০১ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ : اعْتَكَفَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْمَسْجِدِ فَسَمِعَهُمْ يَجْهَرُونَ بِالْقِرَاءَةِ، فَكَشَفَ السِّتْرَ وَقَالَ : ” أَلاَ إِنَّ كُلَّكُمْ مُنَاجٍ رَبَّهُ فَلاَ يُؤْذِيَنَّ بَعْضُكُمْ بَعْضًا، وَلاَ يَرْفَعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ فِي الْقِرَاءَةِ ” . أَوْ قَالَ : ” فِي الصَّلاَةِ ”

৪.অর্থ: আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদে ইতিকাফ করাকালীন সাহাবীদেরকে উচ্চস্বরে কিরাত পাঠ করতে শুনলেন। তখন তিনি পর্দা সরিয়ে বললেন, জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই তার প্রতিপালকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় নিমগ্ন রয়েছ। কাজেই তোমরা একে অন্যকে (উচ্চস্বরে কিরাত পাঠ করে) কষ্ট দিও না এবং পরস্পরের সামনে কিরাতে বা নামাযে আওয়ায উঁচু করো না। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ১৩৩২ হাদীসের মান: সহীহ)

উপরোক্ত কুরআনের আয়াত এবং হাদীসের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, নামাযে কিরাত এমনভাবে পড়া যাবে না, যার কারণে মাখরাজসহ হরফ উচ্চারণ হয় না। আবার এত জোরেও পড়া যাবে না যা অন্যের ক্ষতির কারণ হয়। বরং জিহ্বা ও ঠোঁট ব্যবহার করে সহীহ-শুদ্ধভাবে হরফ উচ্চারণ করে পড়া জরুরী। যদি এমনটি না করে মনে মনে কিরাত পড়া হয় তাহলে নামায সহীহ হবে না।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- আহমদ আব্দুল্লাহ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *