সুতরা কতটুকু লম্বা হতে হবে ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় মুফতী সাহেব আপনার কাছে আমার প্রশ্ন হলো সুতরার উচ্চতা কতটুকু হতে হবে ? দলিলসহ জানালে খুশি হবো।

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

সুতরার উচ্চতা কতটুকু হবে তার পরিমাণ নির্ধারণ করার ব্যাপারে হাদীসে বলা হয়েছে যে তা হাওদার পিছনের কাঠের সমান হতে হবে। এই হাদীসের ব্যাখ্যায় অধিকাংশ ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, সুতরা কমপক্ষে এক আঙ্গুল পরিমাণ মোটা এবং এক হাত লম্বা হতে হবে। তবে ইমাম নববী (রহ.) বলেছেন, “সুতরা কমপক্ষে হাওদার পিছনের লাঠির সমান হতে হবে, যা হাতের কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত বা এক হাতের দুই তৃতীয়াংশ পরিমাণ হতে হবে”। তাহলেই সেটি সুতরা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। সুতরাং এই পরিমাণ কোন বস্তু নামাযীর সামনে থাকলে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয আছে। যখন সুতরা বানানোর মত কোন কিছু পাওয়া না যায়। তখন সুতরার স্থানে দাগ না টেনে কমপক্ষে টুপিটা হলেও রাখবে, যেন কিছু একটা রাখা হয়। যেখানে কোন মানুষ যাওয়া আসার ভয় থাকবে না। সেখানে যদি টুপিও না থাকে তাহলে সুতরার স্থানে মাটিতে একটি দাগ টেনে নিবে। আর এই দাগই তখন সুতরার স্থলাভিষিক্ত হবে।

عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ سُتْرَةِ الْمُصَلِّي فَقَالَ ” مِثْلُ مُؤْخِرَةِ الرَّحْلِ ”

১.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে নামায আদায়কারীর সামনে সুতরা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি উত্তরে বললেন, সুতরা হাওদার পিছনের কাঠের সমান হতে হবে। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫০০ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৭৪৬ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ عَطَاءٍ، قَالَ آخِرَةُ الرَّحْلِ ذِرَاعٌ فَمَا فَوْقَهُ

২.অর্থ: আতা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাওদার পিছনের কাঠ এক হাত বা তার চেয়ে কিছুটা লম্বা হয়ে থাকে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৮৬ হাদীসের মান: সহীহ)

حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، قَالَ رَأَيْتُ شَرِيكًا صَلَّى بِنَا فِي جَنَازَةٍ الْعَصْرَ فَوَضَعَ قَلَنْسُوَتَهُ بَيْنَ يَدَيْهِ – يَعْنِي – فِي فَرِيضَةٍ حَضَرَتْ

৩.অর্থ: সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শারীক (রহ.)-কে দেখেছি, তিনি এক জানাযার নামায আদায় করতে এসে আমাদের সাথে আসরের নামায পড়েন। তিনি (উক্ত ফরয নামাযে সুতরা না থাকায়) নিজের টুপি (খুলে) সামনে রাখেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৯১ হাদীসের মান: সহীহ)

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلْيَسْتَتِرْ لِصَلَاتِهِ وَلَوْ بِسَهْمٍ

৪.অর্থ: রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যখন নামায আদায় করে, সে যেন একটি তীর দিয়ে হলেও সুতরা করে নেয়। (মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ১৫৩৪০ হাদীসের মান: হাসান)

ব্যাখ্যা: এই হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, সুতরা কমপক্ষে এক আঙ্গুল পরিমাণ মোটা হতে হবে। কারণ তীর সাধারণত এক আঙ্গুল পরিমাণ মোটা হয়ে থাকে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلْيَجْعَلْ تِلْقَاءَ وَجْهِهِ شَيْئًا فَإِنْ لَمْ يَجِدْ فَلْيَنْصِبْ عَصًا فَإِنْ لَمْ يَكُنْ مَعَهُ عَصًا فَلْيَخْطُطْ خَطًّا ثُمَّ لاَ يَضُرُّهُ مَا مَرَّ أَمَامَهُ ”

৫.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন (কোন খোলা স্থানে) নামায আদায় করে তখন সে যেন তার সামনে কিছু (সুতরা হিসেবে) রেখে দেয়। কিছু যদি না পায় তাহলে তার লাঠিটা যেন দাঁড় করিয়ে দেয়। যদি তার সাথে লাঠিও না থাকে, তাহলে যেন সামনের মাটিতে একটা দাগ টেনে দেয়। এরপর তার সামনে দিয়ে কোন কিছু যাতায়াত করলেও তার (নামাযের) কোন ক্ষতি হবে না। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৬৮৯ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৯৪৩)

তাহকীক: ইবনে হিব্বান রহ. তার সহীহ ইবনে হিব্বানে ২৩৭৬ নং হাদীসে। আলী ইবনুল মাদীনী রহ. শারহুয যুরাকশি আ’লা মুখতাসারিল খারকীর ২/১২৫ নং হাদীসে। ইমাম আহমদ রহ.শারহুয যুরাকশি আ’লা মুখতাসারিল খারকীর ২/১২৫ নং হাদীসে উক্ত হাদীসকে সহীহ বলেছেন। এ ছাড়াও ইবনে হাজার আসকালানী বুলুগুল মারামে ৭০ নং হাদীসে, উক্ত হাদীসকে হাসান বলেছেন। ইবনে বায তার ফাতোয়ায়ে ইবনে বাযের ৯/৩১৭ পৃষ্ঠাতে এর সনদকে জাইয়েদ বলেছেন।

উপরোক্ত হাদীসগুলো দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সুতরার বেশি পরিমাণের ক্ষেত্রে কোন পরিমাপ নির্ধারণ করা নেই। তবে সর্বনিম্ন পরিমাণ হচ্ছে হাওদার কাষ্ঠ পরিমাণ হতে হবে। যখন এই পরিমাণ কোন কিছু না পাওয়া যাবে তখন তার থেকে ছোট কোন কিছু হলেও দিতে হবে। যদি ছোট কোন কিছুও পাওয়া না যায় এবং মানুষ চলাচল না করে। তাহলে সুতরার স্থানে মাটিতে একটি দাগ টেনে নিবে। আর এই দাগই তখন সুতরার স্থলাভিষিক্ত হবে।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে- আব্দুর রাকীব।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *