প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! নাবালেগ ছেলেকে নামাযের ইমাম বানানো যাবে কি ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
নামায ফরয হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো বালেগ হওয়া। তাই নাবালেগের উপর নামায ফরয নয়। ফলে নাবালেগের ফরয নামায নফল নামায হিসেবে গণ্য হবে। সুতরাং তার পিছনে বয়স্ক লোক ফরয নামাযের ইক্তেদা করলে তার ফরয নামাযও নফল নামায হিসেবে বিবেচ্য হবে। এ কারণে নাবালেগের পিছনে বয়স্ক লোকের ফরয নামাযের ইক্তেদা করা জায়েয নেই। এমনকি অধিকাংশ ইসলামী বিশেষজ্ঞগণের মতে, ফরয, নফল সব নামাযেই নাবালেগ ছেলের ইমামতি করা নাজায়েয। কারণ নাবালেগ ছেলের ব্যাপারে নিশ্চয়তা থাকে না সে নামাযের শর্তসমূহ পূর্ণ করেছে কিনা। হাদীসে এসেছে ইমাম মুসল্লীদের নামাযের দায়িত্ব নিয়ে থাকে অথচ নাবালেগের তো কোন দায়িত্ব নেই। তাই তার পিছনে কোন নামায আদায় করাই জায়েয নয়।
حَدَّثَنَا أَبُو حَازِمٍ، قَالَ كَانَ سَهْلُ بْنُ سَعْدٍ السَّاعِدِيُّ يُقَدِّمُ فِتْيَانَ قَوْمِهِ يُصَلُّونَ بِهِمْ فَقِيلَ لَهُ تَفْعَلُ وَلَكَ مِنَ الْقِدَمِ مَا لَكَ قَالَ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ الإِمَامُ ضَامِنٌ فَإِنْ أَحْسَنَ فَلَهُ وَلَهُمْ وَإِنْ أَسَاءَ يَعْنِي فَعَلَيْهِ وَلاَ عَلَيْهِمْ .
১.অর্থ: আবু হাযিম (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহল ইবনে সা’দ সা’য়িদী (রা.) তার গোত্রের যুবকদের ইমামতির জন্য এগিয়ে দিতেন। তারা লোকদের নিয়ে নামায আদায় করতেন। তখন তাকে বলা হলো আপনি (ইসলাম গ্ৰহণে) অগ্রবর্তীদের অন্যতম হওয়া সত্ত্বেও অন্যদের কেন এগিয়ে দিচ্ছেন ? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা.) কে বলতে শুনেছিঃ ইমাম হলেন যিম্মাদার। যদি তিনি উত্তমরূপে নামায আদায় করেন, তাহলে এর সওয়াব তার জন্য ও মুসল্লীদের জন্য রয়েছে। আর যদি তিনি ভুল করেন, তাহলে এর দায় তার উপর বর্তাবে মুক্তাদীদের উপর নয়। (ইফা. সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৯৮১ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الإِمَامُ ضَامِنٌ وَالْمُؤَذِّنُ مُؤْتَمَنٌ اللَّهُمَّ أَرْشِدِ الأَئِمَّةَ وَاغْفِرْ لِلْمُؤَذِّنِينَ
২.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ইমাম হল (মুসল্লীদের নামাযের) যিম্মাদার আর মুয়াযযিন হল আমানতদার। হে আল্লাহ ইমামকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন আর মুয়াযযিনকে মাফ করুন। (ইফা.সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ২০৭ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৫১৭ হাদীসের মান: সহীহ)
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস দুটি থেকে জানতে পারলাম ইমাম মুসল্লীদের নামাযের দায়িত্ব নিয়ে থাকে অথচ নাবালেগের তো কোন দায়িত্ব নেই। নিম্নোক্ত হাদীস প্রমাণ করে নাবালেগ দায়িত্ব থেকে মুক্ত সুতরাং সে কীভাবে নামাযের দায়িত্ব নিবে ? অতএব প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের ইমামতি করা জরুরী।
عَنْ عَلِيٍّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلاَثَةٍ عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَشِبَّ وَعَنِ الْمَعْتُوهِ حَتَّى يَعْقِلَ
৩.অর্থ: আলী (রা.) থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, নাবালেগ যতক্ষণ না সে বালেগ হয় এবং বেহুঁশ ব্যক্তি যতক্ষণ না সে হুশ ফিরে পায়। অপর বর্ণনায় আছে, পাগল যতক্ষণ না সে সুস্থ হয়। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১৪২৩ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৪৩৪৭ হাদীসের মান: সহীহ)
حَدَّثَنِي عَمْرُو بْنُ سَلِمَةَ الْجَرْمِيُّ، قَالَ كَانَ يَمُرُّ عَلَيْنَا الرُّكْبَانُ فَنَتَعَلَّمُ مِنْهُمُ الْقُرْآنَ فَأَتَى أَبِي النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ” لِيَؤُمَّكُمْ أَكْثَرُكُمْ قُرْآنًا ” . فَجَاءَ أَبِي فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِيَؤُمَّكُمْ أَكْثَرُكُمْ قُرْآنًا فَنَظَرُوا فَكُنْتُ أَكْثَرَهُمْ قُرْآنًا فَكُنْتُ أَؤُمُّهُمْ وَأَنَا ابْنُ ثَمَانِ سِنِينَ
৪.অর্থ: আমর ইবনে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের নিকট আরোহী যাত্রীগণ আসতেন আমরা তাঁদের নিকট কুরআন শিক্ষা করতাম। আমার পিতা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট আসলে তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যে কুরআন বেশি জানে সেই ইমামতি করবে। আমার পিতা এসে বললেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে বেশি কুরআন জানে, সেই ইমামতি করবে। তারা দেখলেন, আমি কুরআন অধিক জানি, তখন আমিই তাদের ইমামতি করতাম আর তখন আমি ছিলাম আট বছরের বালক। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৪৩০০ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৫৮৫ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৭৮৯ হাদীসের মান: সহীহ)
ব্যাখ্যা: আমর ইবনে সালামা (রা.) কে যারা ইমামতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন তারা সবাই ছিলেন নব মুসলমান তারা নবী (সা.) এর কাছ থেকে নামাযের মাসয়ালা মাসায়েল ও নাবালেগ-বালেগের মধ্যে কোন পার্থক্য শিক্ষা করেননি। কাজেই তাদের এ কর্ম ভুল হয়েছিল, সুতরাং এই হাদীস দিয়ে নাবালেগ ছেলেকে নামাযের ইমাম বানানোর বৈধতা দেয়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশ, বালেগ-নাবালেগ সকলের মধ্যে যেই অধিক কুরআন জানে, সেই ইমামতি করবে এমনটি নয়। বরং এ নির্দেশের মর্ম ছিল, বয়স্কদের মধ্যে যে অধিক কুরআান জানে সেই ইমামতি করবে।
عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ فَأَذِّنَا وَأَقِيمَا، ثُمَّ لِيَؤُمَّكُمَا أَكْبَرُكُمَا
৫.অর্থ: মালেক ইবনে হুওয়াইরিস (রা.) থেকে বর্ণিত: নবী (ﷺ) বলেছেন, যখন নামাযের সময় হবে তখন (তোমারা দুইজন থাকলে) তোমাদের দুইজনের একজন আযান এবং ইকামত দিবে। তারপর তোমাদের মধ্যে যে বয়সে অধিক বড় সে ইমামতি করবে। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬৫৮ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৪১১ হাদীসের মান: সহীহ)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে, নাবালেগের ইমামতি করা জায়েয নয়। সুতরাং তারাবী এবং ওয়াক্তিয়া কোন নামাযেই নাবালেগকে ইমাম বানানো যাবে না। কেননা যার উপর নামায আদায়ের হুকুমই আসেনি তাহলে সে কিভাবে ইমামতি করবে! তবে আজকাল যেহেতু অনেক বাচ্চারা নাবালেগ অবস্থায় কুরআনের হাফেয হয়ে যায়। তাই তাদের কুরআন ইয়াদের উদ্দেশ্যে আলাদা ভাবে খতম তারাবীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেখানে ইমাম ও মুক্তাদী সবাই হবে নাবালেগ।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- সালাহ উদ্দিন।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply