তোমাকে তালাক দিলাম তিনবার বললে কয় তালাক পতিত হবে ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম! স্বামী যদি স্ত্রীকে তিনবার বলে তোমাকে তালাক দিলাম তাহলে কয় তালাক কার্যকর হবে দলিলসহ জানতে চাই ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَد

স্বামী যদি তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনবার বলে তোমাকে তালাক দিলাম। তাহলে স্ত্রীর উপর তিন তালাকই পতিত হয়ে যাবে। চাই রাগের মাথায় বলুক অথবা ঠান্ডা মাথায় বলুক। অতঃপর সেই স্বামী স্ত্রীর জন্য একসাথে ঘর সংসার করা হারাম। ইদ্দতের পর ঐ তালাকপ্রাপ্ত মহিলার যদি অন্যত্র বিবাহ হয় এবং ঘর সংসার করতে থাকে। তারপর কোনো কারণে যদি দ্বিতীয় স্বামী মারা যায় অথবা তাকে তালাক দেয়। তাহলে ইদ্দতের শেষে আগের স্বামী পুনরায় তাকে বিবাহ করতে পারবে। এ ছাড়া ইসলামী শরীয়তে দ্বিতীয় কোনো পদ্ধতি নেই।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” ثَلاَثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ النِّكَاحُ وَالطَّلاَقُ وَالرَّجْعَةُ ”

১.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ তিনটি বিষয় এমন রয়েছে যা মনেপ্রাণে করা হোক অথবা হাসি তামাশার ছলে করা হোক, তা কার্যকর হবে। তা হলোঃ বিবাহ, তালাক ও তালাক প্রত্যাহার। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২১৯৪ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ২০৩৯ হাদীসের মান: হাসান)

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

২.অর্থ: অতঃপর সে (স্বামী) যদি (তৃতীয়) তালাক দিয়ে দেয় তাহলে সে (তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী) সেই পুরুষের জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত হালাল হবে না। যতক্ষণ না সে অন্য কোনও স্বামীকে বিবাহ করবে। অতঃপর যদি সে (দ্বিতীয় স্বামী) তাকে তালাক দিয়ে দেয়। তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন গোনাহ নেই। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ২৩০)

وَقَالَ اللَّيْثُ حَدَّثَنِي نَافِعٌ قَالَ كَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا سُئِلَ عَمَّنْ طَلَّقَ ثَلاَثًا قَالَ لَوْ طَلَّقْتَ مَرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ فَإِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَمَرَنِي بِهٰذَا فَإِنْ طَلَّقْتَهَا ثَلاَثًا حَرُمَتْ حَتّٰى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَك

৩.অর্থ: লাইস (রহ.) নাফে (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন, ইবনে উমর (রা.) এর কাছে এক সাথে তিন তালাক দিলে ‎তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া (রুজু করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো। তখন তিনি বলেন যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে রুজু (তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা) করতে পারো। ‎কারণ রসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। ‎যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে। যতক্ষণ না সে স্ত্রী তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামীকে বিয়ে করে। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫২৬৪ হাদীসের মান: সহীহ)

أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، أَخْبَرَنِي ابْنُ شِهَابٍ، عَنِ الْمُتَلاَعِنَيْنِ، وَعَنِ السُّنَّةِ، فِيهِمَا عَنْ حَدِيثِ، سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ أَخِي بَنِي سَاعِدَةَ أَنَّ رَجُلاً، مِنَ الأَنْصَارِ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ رَجُلاً وَجَدَ مَعَ امْرَأَتِهِ رَجُلاً وَذَكَرَ الْحَدِيثَ بِقِصَّتِهِ ‏.‏ وَزَادَ فِيهِ فَتَلاَعَنَا فِي الْمَسْجِدِ وَأَنَا شَاهِدٌ ‏.‏ وَقَالَ فِي الْحَدِيثِ فَطَلَّقَهَا ثَلاَثًا قَبْلَ أَنْ يَأْمُرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ فَفَارَقَهَا عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ ذَاكُمُ التَّفْرِيقُ بَيْنَ كُلِّ مُتَلاَعِنَيْنِ ‏”‏ ‏.‏

৪.অর্থ: ইবনু জুরায়জ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে ইবনে শিহাব (রহ.) বনী সা’ইদাহ গোত্রের ইবনে সা’দ বর্ণিত দুইজন লি’আনকারী ও তার বিধান সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তিনি (সাহল) বলেন, জনৈক আনসারী নবী (ﷺ) এর কাছে এলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! যদি কোন লোক তার স্ত্রীর সঙ্গে (ব্যভিচাররত) অন্য কোন পুরুষকে দেখতে পায় তাহলে সে সম্পর্কে আপনার মতামত কী? এরপর পুরো ঘটনাসহ হাদীস বর্ণনা করেন। এতে বাড়তি বর্ণনা করেন যে, (স্বামী-স্ত্রী) উভয়ে মসজিদের ভেতরে লি’আন করল আর আমি উপস্থিত ছিলাম। আর তিনি এ হাদীসে বলেছেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে কোন নির্দেশ দেওয়ার পূর্বেই তিনি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে নবী (ﷺ) এর সম্মুখেই তাকে আলাদা করে দেন। তখন নবী (ﷺ) বললেন, এ উভয়ই লি’আনকারীর মাঝখানে বিচ্ছেদ। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫২৫৯ হাদীসের মান: সহীহ)

أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ إِنِّي طَلَّقْتُ امْرَأَتِي مِائَةَ تَطْلِيقَةٍ فَمَاذَا تَرَى عَلَيَّ فَقَالَ لَهُ ابْنُ عَبَّاسٍ طَلُقَتْ مِنْكَ لِثَلَاثٍ وَسَبْعٌ وَتِسْعُونَ اتَّخَذْتَ بِهَا آيَاتِ اللَّهِ هُزُوًا

৫.অর্থ: এক ব্যক্তি ইবনে আব্বাস (রা.) এর ‎নিকট জিজ্ঞাসা করল আমি আমার স্ত্রীকে একশত তালাক দিয়েছি। আমার সম্পর্কে এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী ? ‎তখন ইবনে আব্বাস (রা.) তাকে বললেন, তুমি যা দিয়েছ তা থেকে তিন তালাক তোমার স্ত্রীর উপর ‎পতিত হয়েছে। আর অবশিষ্ট সাতানব্বই তালাকের মাধ্যমে তুমি আল্লাহর আয়াতকে উপহাস ‎করেছো। (মুয়াত্তা মালেক হাদীস নং ১১৫৭ হাদীসের মান: সহীহ)

তাহকীক: শুয়াইব আরনাউত (রহ.) বলেন, এর বর্ণনাকারীগণ নিরবিচ্ছিন্ন এবং নির্ভরযোগ্য। আলবানী (রহ.) বলেন, এই হাদীসের সনদ সহীহ। (তাখরীজু শারহুস সুন্নাহ ৯/২১৪ হিদায়াতুর রুওয়া ৩২২৮)

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- তাজুল ইসলাম।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শায়েখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *