জুমার নামাযের জন্য দুইটি আযান দেওয়ার বিধান।

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই জুমার নামাযের জন্য দুইটি আযান দেওয়ার বিধান কী ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

রাসূল (ﷺ) থেকে শুরু করে হযরত আবু বকর ও হযরত উমর (রা.)-এর খেলাফত পর্যন্ত জুমার আযান একটি ছিল। যেটাকে আমরা বর্তমানে ছানী আযান বলে থাকি। এ আযান ইমামের খুতবা প্রদানের আগ মুহূর্তে দেওয়া হতো। এরপর হযরত উসমান (রা.) এর খেলাফতকালে যখন মুসলমানের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেল এবং মদীনার দূর দূরান্তে জনবসতি গড়ে উঠলো। তখন হযরত উসমান (রা.) মানুষের অবগতির জন্য খুতবার আযানের পূর্বে আরেকটি আযান চালু করেন। যাতে করে মানুষেরা পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে এসে জুমার খুতবা শুনতে পারেন। আর এভাবেই উক্ত আযান এখনো পর্যন্ত সারাবিশ্বে প্রচলিত রয়েছে। ঐ সময়ে সাহাবায়ে কেরাম কেউ তার প্রতিবাদ বা সমালোচনা করেননি। তাই আমাদের জন্য উভয় আযানের অনুকরণ করা সুন্নত হবে। কেননা হাদীসে রাসূল (ﷺ) খুলাফায়ে রাশেদার সুন্নতেরও অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন।

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰہِ وَذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ

১. অর্থ: হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা উপলদ্ধি করো। (সূরা জুম’আ: আয়াত নং ৯)

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ

২.অর্থ: তোমারা ঈমান আনো যেমন লোকেরা (অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম) ঈমান এনেছে। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ১৩)

سَائِبَ بْنَ يَزِيدَ، يَقُولُ: «إِنَّ الأَذَانَ يَوْمَ الجُمُعَةِ كَانَ أَوَّلُهُ حِينَ يَجْلِسُ الإِمَامُ، يَوْمَ الجُمُعَةِ عَلَى المِنْبَرِ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، فَلَمَّا كَانَ فِي خِلاَفَةِ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، وَكَثُرُوا، أَمَرَ عُثْمَانُ يَوْمَ الجُمُعَةِ بِالأَذَانِ الثَّالِثِ، فَأُذِّنَ بِهِ عَلَى الزَّوْرَاءِ، فَثَبَتَ الأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ»

৩.অর্থ: সায়িব ইবনে ইয়াযীদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ), আবু বকর (রা.) এবং উমর (রা.) এর যুগে জুম’আর দিন ইমাম যখন মিম্বরের উপর বসতেন, তখন প্রথম আযান দেওয়া হত। এরপর যখন উসমান (রা.) এর খিলাফতের সময় এলো এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন উসমান (রা.) জুম’আর দিন তৃতীয় আযানের নির্দেশ দেন। ‘যাওরা’ নামক স্থান থেকে এ আযান দেওয়া হয়, পরে এ আযান অব্যাহত থাকে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯১৬ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১০৮৭ হাদীসের মান: সহীহ)

ব্যাখ্যা: এর আগে কেবল খুতবার আযান ও ইকামত প্রচলিত ছিল। এরপর উসমান (রা.) এর আমল থেকে তৃতীয় অর্থাৎ নামাযের জন্য বর্তমানে প্রচলিত আযানের সূচনা হয়। সেই যুগে ইকামাতকে আযান বলে গণ্য করা হতো। তাই হাদীসে এটাকে তৃতীয় আযান বলা হয়েছে।

عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَالْأُمُورَ الْمُحْدَثَاتِ، فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ”

৪.অর্থ: রাসূল (ﷺ) বলেছেন,আমার পরে অচিরেই তোমরা কঠিন মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের উপর আমার সুন্নত এবং হিদায়েতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতের উপর অবিচল থাকা অপরিহার্য। তোমরা তা শক্তভাবে আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। সাবধান! তোমরা নতুন উদ্ভাবিত জিনিস (বিদ’আত) পরিহার করবে। কেননা প্রত্যেক বিদ’আতই গুমরাহী। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৪২ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৪৬০৭ হাদীসের মান: সহীহ)

মোটকথা প্রথম আযান নবীজীর সুন্নত আর দ্বিতীয় আযান সাহাবীর সুন্নত। নবীজীর সুন্নত যেমনিভাবে আঁকড়ে ধরবে হবে তেমনিভাবে খুলাফায়ে রাশেদার সুন্নতও আঁকড়ে ধরতে হবে। সুতরাং জুমার নামাযের জন্য দুইটি আযান দেওয়া সুন্নত ও উত্তম হবে। যারা এই বিষয়টি বিদআত বলে তারা নিশ্চিত গোমরাহীর ভিতরে আছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুক আমীন।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে: মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ মাহমুদ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *