জুম’আর খুতবা চলাকালে নামায পড়া এবং কথা বলা কি নিষেধ ?

প্রশ্ন:

আসসালামু আলাইকুম। শায়েখ অনেকেই বলেন, জুম’আর খুতবা চলাকালে নামায পড়া এবং কথা বলা নিষেধ। এই কথা কি সঠিক না বেঠিক দলিলসহ জানতে চাই ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

জুম’আর খুতবা মনোযোগসহ শ্রবণ করা ওয়াজিব। খুতবা চলাকালে মুসল্লীদের কথা বলা, নামায পড়া নিষেধ। এমনকি তাসবীহ-তাহলীল পড়াও নিষেধ।  কেউ যদি কথা বলে তাহলে পাশেরজন তাকে চুপ থাক এভাবেও বলবে না। তবে ইশারায় তাকে চুপ থাকার জন্য বলতে পারবে।

أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، أَخْبَرَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِذَا قُلْتَ لِصَاحِبِكَ أَنْصِتْ . يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالإِمَامُ يَخْطُبُ فَقَدْ لَغَوْتَ ”

১.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, জুম’আর দিনে ইমামের খুতবা দানকালে তুমি যদি তোমার পাশের জনকে বলো চুপ থাক তাহলে তুমিও অনর্থক কথা বললে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৩৪ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৫১ হাদীসের মান: সহীহ)

قَالَ: أَخْبَرَنِي ثَعْلَبَةُ بْنُ أَبِي مَالِكٍ الْقُرَظِيُّ ” أَنَّ جُلُوسَ الْإِمَامِ، عَلَى الْمِنْبَرِ يَقْطَعُ الصَّلَاةَ , وَكَلَامَهُ يَقْطَعُ الْكَلَامَ , وَقَالَ: إِنَّهُمْ كَانُوا يَتَحَدَّثُونَ حِينَ يَجْلِسُ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَلَى الْمِنْبَرِ حَتَّى يَسْكُتَ الْمُؤَذِّنُ , فَإِذَا قَامَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَلَى الْمِنْبَرِ , لَمْ يَتَكَلَّمْ أَحَدٌ حَتَّى يَقْضِيَ خُطْبَتَيْهِ كِلْتَيْهِمَا , ثُمَّ إِذَا نَزَلَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ الْمِنْبَرِ وَقَضَى خُطْبَتَيْهِ , تَكَلَّمُوا

২.অর্থ: সা’লাবা ইবনে আবু মালিক কুরাযী (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, নিশ্চয় মিম্বরের উপর ইমামের উপবেশন নামাযকে বন্ধ করে দেয়।আর ইমামের আলোচনা (মুসল্লীদের) কথাবার্তাকে বন্ধ করে দেয়। তিনি বলেন, উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) যখন মিম্বরের উপর বসতেন, তখন মুয়াযযিনের নীরবতা অবলম্বন পর্যন্ত তাঁরা কথাবার্তা বলতেন। উমর (রা.) যখন মিম্বরের উপর দাঁড়াতেন, তখন তাঁর দু’খুতবা সমাপ্ত করার পূর্ব পর্যন্ত আর কেউ কথাবার্তা বলত না। তারপর যখন উমর (রা.) মিম্বর থেকে অবতরণ করতেন এবং খুতবা শেষ করতেন, তখন তারা কথাবার্তা বলতেন। (তহাবী শরীফ, হাদীস নং ২১৭৪ হাদীসের মান: সহীহ)

তাহকীক: আইনী (রহ.) বলেন, এই হাদীসের সনদ সহীহ। (নাখবুলু আফকার ৬/৪৮)

عَنْ جَابِرٍ قَالَ: دَخَلَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ الْمَسْجِدَ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَجَلَسَ إِلَى جَنْبِهِ أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ فَسَأَلَهُ عَنْ شَيْءٍ أَوْ كَلَّمَهُ بِشَيْءٍ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ أُبَيٌّ، فَظَنَّ ابْنُ مَسْعُودٍ أَنَّهَا مَوْجِدَةٌ، فَلَمَّا انْفَتَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ صَلَاتِهِ، قَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ: يَا أُبَيُّ، مَا مَنَعَكَ أَنْ تَرُدَّ عَلَيَّ؟ قَالَ: إِنَّكَ لَمْ تَحْضُرْ مَعَنَا الْجُمُعَةَ، قَالَ: لِمَ؟ قَالَ: تَكَلَّمْتَ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَقَامَ ابْنُ مَسْعُودٍ فَدَخَلَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَدَقَ أُبَيٌّ أَطِعْ أُبَيًّا»

৩.অর্থ: জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রা.) মসজিদে প্রবেশ করলেন এমতাবস্থায় যে, রাসূল (ﷺ) খুতবা দিচ্ছিলেন। তখন তিনি উবাই বিন কাব (রা.) এর পাশে এসে বসলেন। বসে উবাইকে কিছু জিজ্ঞাসা করলেন বা কোন বিষয়ে কথা বললেন। কিন্তু উবাই তার কথার কোন প্রতিউত্তর করলেন না। তখন ইবনে মাসঊদ (রা.) মনে করলেন তিনি হয়তো তার উপর রাগাম্বিত। তারপর যখন রাসূল (ﷺ) নামায শেষ করে চলে গেলেন। তখন ইবনে মাসঊদ বললেন, হে উবাই! আমার কথা জবাব দিতে তোমাকে বাঁধা দিল কে? তিনি বললেন, তুমি আমাদের সাথে জুম’আর নামাযে উপস্থিত হওনি। ইবনে মাসঊদ (রা.) বললেন, তো ? উবাই (রা.) বললেন, তুমি কথা বলছিলে আর রাসূল (ﷺ) তো তখন খুতবা দিচ্ছিলেন। (তাই কথার জবাব দেইনি)

একথা শুনে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ দাঁড়িয়ে গেলেন। ছুটে গেলেন রাসূল (ﷺ) এর কাছে। জানালেন পুরো বিষয়টি। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, উবাই ঠিক কথাই বলেছে। তুমি এ বিষয়ে উবাই এর কথাকে মেনে নাও। (মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং ১৭৯৯ হাদীসের মান: সহীহ)

তাহকীক: মুনযীরী (রহ.) বলেন, এর সনদ জাইয়্যেদ। হাইসামী (রহ.) বলেন, আবী ইয়ালার সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। আলবানী (রহ.) বলেন, হাসান সহীহ। (তারগীব ওয়াত তারহীব ১/৩৪৯ মাজমাউয যাওয়ায়েদ ২/১৮৮ সহীহ তারগীব ৭১৯)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ وَزِيَادَةُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ وَمَنْ مَسَّ الْحَصَى فَقَدْ لَغَا ‏”‏ ‏

৪.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করে, এরপর জুমআয় আসে, নীরবে মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শুনল, তার তখন থেকে (পরবর্তী) জুমআ পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। যে (অহেতুক) কংকর স্পর্শ করল সে অনর্থক কাজ করল। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৫৭ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১০৫০ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ جَاءَ رَجُلٌ وَالنَّبِيُّ ـ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ فَقَالَ ‏”‏ أَصَلَّيْتَ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ لاَ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ فَصَلِّ رَكْعَتَيْنِ ‏”‏ ‏

৫.অর্থ: আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি (মসজিদে) এলো। নবী (ﷺ) তখন খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি বললেনঃ তুমি কি নামায আদায় করেছ? সে বললঃ না। তিনি বললেনঃ তুমি দুই রাকাত নামায আদায় করে নাও। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১১১৩ )

ব্যাখ্যা: লোকটি অভাবগ্রস্থ অবস্থায় মসজিদে এসেছিলেন। এ জন্য নবী (ﷺ) সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাকে দাঁড়িয়ে নামায পড়তে বলেন এবং খুতবা বন্ধ রাখেন। এ ঘটনাটি ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য সবার জন্য ব্যাপক নয়। অথবা উক্ত হাদীসটি উপরের হাদীসগুলো দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَابْ
উত্তর প্রদানে-মুহাম্মদ রহমতুল্লাহ।
শিক্ষার্থীঃ মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শায়েখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *