জামাতে নামায না পড়ার ভয়াবহ পরিণাম

(১) ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনল অত:পর কোন শরঈ ওযর না থাকা সত্ত্বেও জামাতে নামায আদায় হতে বিরত থাকে। তার অন্যত্র একাকী নামায কবুল হবে না। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন ওযর কী? রাসূল (সা.) বললেন অসুস্থতা বা ভয়ভীতি। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৫৫১ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৭৯৩ হাদীসের মান: সহীহ)

(২) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার কসম! আমার মনে চায় যে, কিছু লোককে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের নির্দেশ দেই। তারপর নামায কায়েমের নির্দেশ দেই, এরপর নামাযের আযান দেওয়া হোক, তারপর এক ব্যাক্তিকে লোকদের ইমামতি করার নির্দেশ দেই। এরপর আমি লোকদের কাছে যাই এবং তাদের (যারা জামাতে হাজির হয়নি) তাদের ঘর-বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬১৬ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৩৫৭ হাদীসের মান: সহীহ)

(৩) আবু দারদা (রা.) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, কোন গ্রামে বা মাঠে তিনজন লোক থাকে অথচ তারা সেখানে জামাতের সাথে নামায আদায় করে না। তাদের উপর শয়তান প্রভাব বিস্তার করে, সুতরাং তোমরা জামাতকে জরুরী মনে কর। কেননা দলত্যাগী বকরীকে বাঘে খেয়ে ফেলে। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৫৪৭ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৮৪৮ হাদীসের মান: হাসান)

(৪) ইবনে আব্বাস ও ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত: তারা উভয়ে নবী (সা.) কে তার মিম্বারের উপর থেকে বলতে শুনেছেন, লোকেরা অবশ্যই যেন জামাত ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকে। অন্যথায় আল্লাহ অবশ্যই তাদের অন্তরে সীলমোহর মেরে দিবেন, অতঃপর তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৮৭৫ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৭৯৪ হাদীসের মান: সহীহ)

(৫) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন মুসলমান হিসেবে আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাৎ করে আনন্দিত হতে চায়। সে যেন নামায-সমূহকে এমন স্থানে আদায়ের প্রতি যত্নবান হয় যেখানে আযান দেয়া হয় (অর্থাৎ মসজিদে)। কারণ আল্লাহ তোমাদের নবীকে হেদায়াতের সকল পথ বাতলে দিয়েছেন। আর এই সমস্ত নামায হলো হেদায়াতের পথ-সমূহের অন্যতম। তোমরা যদি এই সকল নামায ঘরে আদায় কর, যেমন একদল লোক জামাত ছেড়ে ঘরে নামায আদায় করে। তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নতকে ছেড়ে দিলে। তোমরা যদি নবীর সুন্নত ছেড়ে দাও, তাহলে তোমরা অবশ্যই গোমরাহ হয়ে যাবে। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৩৬৩ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৭৭৭ হাদীসের মান: সহীহ)

(৬) আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিছু লোক সব সময়ই নামাযে প্রথম কাতার থেকে পিছনে থাকে। ফলে আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামের নিম্নস্তরে পতিত করবেন। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৬৭৯ মিশকাতুল মাসাবীহ হাদীস নং ১১০৪ হাদীসের মান: সহীহ)

(৭) উসামা ইবনে যায়েদ (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, লোকেরা অবশ্যই জামাত ত্যাগ করা হতে বিরত হোক, না হয় আমি তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিব। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬১৬ সুনানে ইবনে মাজা হাদীস নং ৭৯৫ হাদীসের মান: সহীহ)

উল্লেখিত হাদীস-সমূহের আলোকে ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ জামাতের সাথে নামায আদায় করা সক্ষম পুরুষদের জন্য ওয়াজিব বলেছেন। সুতরাং জামাতের সাথে নামায আদায় করার ব্যাপারে খুবই গুরুত্ব প্রদান করা জরুরী। বর্তমানে অধিকাংশ লোকেরা জামাতের ব্যাপারে অলসতা করে ঘরে দোকানে বা অফিসে একাকী নামায পড়ে নিচ্ছে। তা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তা স্পষ্ট পথভ্রষ্টতা। (আলবাহরুর রায়েক ১/৬০২ আল ফিকহুল ইসলামী ২/১১৬৭)

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *