ছোট বাচ্চাদের পেশাব পাক না নাপাক ? 

 

 

 প্রশ্নঃ 

 

আসসালামু আলাইকুম ! প্রিয় মুফতী সাহেব আমার প্রশ্ন হলো, আমাদের গ্ৰামের কিছু মানুষ শিশু বাচ্চাদের পেশাবকে পাক মনে করে থাকেন। তাদের এই ধারণা কি সঠিক ? দলিলসহ জানতে চাই।

 

উত্তরঃ

 

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ 

 

যারা ছোট বাচ্চাদের পেশাবকে পাক মনে করে তাদের ধারণা সঠিক নয়। বরং শিশু,যুবক, বৃদ্ধ সকলের পেশাবই নাপাক। আবার কেউ কেউ বলেন,দুগ্ধপোষ্য মেয়ে শিশুর পেশাব কাপড়ে লাগলে ঐ স্থানটুকু ধুয়ে ফেলবে, ছেলে শিশু হলে সেখানে পানির ছিটা দিবে। অথচ পেশাবের উপর শুধু পানির ছিটা দেওয়াই যথেষ্ট নয়। কারণ শুধু পানির ছিটা দেওয়ার দ্বারা পেশাব দূর হয় না। বরং নাপাকি যথাস্থানে বহাল থাকে। সুতরাং কাপড়ে পেশাব লাগলে তা পবিত্র করতে ধুতে হবে। কিংবা উক্ত কাপড় খুলে পবিত্র কাপড় পরিধান করে নামায আদায় করতে হবে।

 

عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ، أَنَّهَا قَالَتْ أُتِيَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ بِصَبِيٍّ، فَبَالَ عَلَى ثَوْبِهِ، فَدَعَا بِمَاءٍ فَأَتْبَعَهُ إِيَّاهُ

 

১.অর্থ: উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সা.) এর কাছে একটি ছেলে শিশুকে আনা হল। শিশুটি তাঁর কাপড়ে পেশাব করে দিল। তিনি পানি আনালেন এবং এর উপর ঢেলে (ধুয়ে) দিলেন। (ইফা.সহীহ বুখারী হাদীস নং ২২২ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫৫৬ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ عَائِشَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُؤْتَى بِالصِّبْيَانِ فَيُبَرِّكُ عَلَيْهِمْ وَيُحَنِّكُهُمْ فَأُتِيَ بِصَبِيٍّ فَبَالَ عَلَيْهِ فَدَعَا بِمَاءٍ فَأَتْبَعَهُ بَوْلَهُ وَلَمْ يَغْسِلْهُ ‏.‏

 

২.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এর কাছে শিশুদেরকে নিয়ে আসা হত। তিনি তাদের জন্য বরকতের দু’আ করতেন এবং কিছু চিবিয়ে তাদের মুখে দিতেন। একবার একটি শিশুকে তাঁর কাছে আনা হল। অতঃপর শিশুটি তাঁর শরীরে পেশাব করে দিল। এরপর তিনি পানি আনিয়ে পেশাবের জায়গায় ঢেলে দিলেন। আর (ভালো করে) তা ধুলেন না। (ইফা. সহীহ মুসলিম ৫৫৫ সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫০৭২ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ أُمِّ الْفَضْلِ، قَالَتْ: ” لَمَّا وُلِدَ الْحُسَيْنُ , قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَعْطِنِيهِ , أَوِ ادْفَعْهُ إِلَيَّ فَلِأَكْفُلْهُ أَوْ أُرْضِعْهُ بِلَبَنِي فَفَعَلَ. فَأَتَيْتُهُ بِهِ فَوَضَعَهُ عَلَى صَدْرِهِ فَبَالَ عَلَيْهِ فَأَصَابَ إِزَارَهُ , فَقُلْتُ لَهُ: يَا رَسُولَ اللهِ , أَعْطِنِي إِزَارَكَ أَغْسِلْهُ. قَالَ: «إِنَّمَا يُصَبُّ عَلَى بَوْلِ الْغُلَامِ , وَيُغْسَلُ بَوْلُ الْجَارِيَةِ»

 

৩.অর্থ: উম্মে ফযল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন হুসাইন (রা.) জন্মগ্রহণ করেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাঁকে আমাকে দান করুন, যেন আমি তার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করতে পারি অথবা বলেছেন, আমি তাকে আমার দুধ পান করাতে পারি। তিনি অনুমতি দিলেন। তারপর আমি তাঁকে (একদিন) নিয়ে এলাম এবং তিনি তাকে তাঁর বুকে নিলেন, শিশুটি তখন পেশাব করেছে, যা তাঁর চাদরে লেগে যায়। আমি বললাম! হে আল্লাহর রাসূল! আপনার চাদরটি আমাকে দিন, আমি তা ধৌত করে দিব। 

তিনি বললেন, দুগ্ধপোষ্য ছেলের পেশাবে পানি 

ঢেলে দিতে হবে এবং দুগ্ধপোষ্য মেয়ের পেশাব ধৌত করতে হবে। (তহাবী শরীফ হাদীস নং ৬০৫ হাদীসের মান: সহীহ) 

 

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ مَرَّ بِقَبْرَيْنِ يُعَذَّبَانِ فَقَالَ ” إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ، وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ “

 

৪. অর্থ: ইবনু আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ﷺ এমন দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যে কবর দু’টির বাসিন্দাদের আযাব দেওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, এদের দু’জনকে আযাব দেওয়া হচ্ছে অথচ তাদের এমন গোনাহের জন্য আযাব দেওয়া হচ্ছে না যা থেকে বিরত থাকা দুঃরূহ ছিল। তাদের একজন পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না আর অপরজন চোগলখুরী করে বেড়াত। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ১২৭৮, হাদিসের মান: সহীহ)

 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ “‏ أَكْثَرُ عَذَابِ الْقَبْرِ مِنَ الْبَوْلِ ‏”‏ ‏.‏

 

৫.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, বেশির ভাগ কবরে আযাব পেশাব থেকে অসতর্কতার কারণেই হয়ে থাকে। (ইফা. সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৩৪৮ হাদিসের মান: সহীহ)

 

عَنْ أُمِّ قَيْسٍ بِنْتِ مِحْصَنٍ، أَنَّهَا أَتَتْ بِابْنٍ لَهَا صَغِيرٍ، لَمْ يَأْكُلِ الطَّعَامَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم، فَأَجْلَسَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي حِجْرِهِ، فَبَالَ عَلَى ثَوْبِهِ، فَدَعَا بِمَاءٍ فَنَضَحَهُ وَلَمْ يَغْسِلْهُ‏.‏

 

৬.অর্থ: উম্মে কায়েস বিনতে মিহসান (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি তার এক ছোট ছেলেকে নিয়ে রাসূল (সা.) এর কাছে এলেন। যে তখনো খাবার খেতে শিখেনি, রাসূল (সা.) শিশুটিকে তাঁর কোলে বসালেন। তখন সে তাঁর কাপড়ে পেশাব করে দিল। তিনি পানি আনিয়ে এর উপর ছিটিয়ে দিলেন এবং তা (ভাল করে) ধৌত করলেন না। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ২২৩ হাদীসের মান: সহীহ)

 

উল্লেখিত হাদীসগুলোতে লক্ষ্য করলে দেখা যায়।পেশাবের কারণে কবরে আজাব হয় ও ছেলে শিশু নবীজীর কোলে পেশাব করার কারণে পানি দিয়ে ধুয়েছেন আবার কখনো পানির ছিটাও দিয়েছেন। 

এই সব হাদীস সামনে রেখে ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন। শিশু যদি ছেলে হয়, তবে তার পেশাব হালকা ধৌত করলেই হবে। আর ছেলে শিশুর পেশাবে পানির ছিটা দেওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হালকাভাবে ধৌত করা। কিন্তু শিশু যদি মেয়ে হয়, তাহলে হালকা ধৌত করলে চলবে না। বরং বেশি পানি দিয়ে বড়দের পেশাবের মত করে ভালোভাবে ধৌত করতে হবে। কারণ ছেলের পেশাবের থেকে মেয়ের পেশাবে নাপাকি বেশি থাকে। 

 

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب

উত্তর প্রদানে- জিয়াউর রহমান।

শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।

পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।  

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *