ছেলেদের চুল রাখার সুন্নতী ও জায়েয পদ্ধতি কী ? 

 

 

 প্রশ্নঃ 

 

আসসালামু আলাইকুম! হযরত আমি একটি প্রশ্নের উত্তর অনেক দিন ধরে জানতে চাচ্ছি কিন্তু এ পর্যন্ত কারো থেকে যথাযথ উত্তর পাইনি তাই আপনার কাছে প্রশ্নটি করলাম। সেই প্রশ্নটি হলো চুল রাখার সুন্নতী ও জায়েয পদ্ধতি কী ?

 

উত্তরঃ

 

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

 

পুরুষদের জন্য বাবরি চুল রাখা সুন্নত। কেননা, রসূলুুল্লাহ (সা.) সর্বদা বাবরি চুল রাখতেন। নবীজীর বাবরি কেমন ছিল এ বিষয়ে তিন পদ্ধতির কথা হাদীসে এসেছে। এক. উভয় কাঁধ বরাবর। দুই. ঘাড়ের মাঝামাঝি। তিন. উভয় কানের লতি পর্যন্ত।

 

حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ الْبَرَاءِ، قَالَ: مَا رَأَيْتُ مِنْ ذِي لِمَّةٍ أَحْسَنَ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَادَ مُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمَانَ: لَهُ شَعْرٌ يَضْرِبُ مَنْكِبَيْهِ قَالَ أَبُو دَاوُدَ: كَذَا رَوَاهُ إِسْرَائِيلُ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، قَالَ: يَضْرِبُ مَنْكِبَيْهِ، وَقَالَ شُعْبَةُ:يَبْلُغُ شَحْمَةَ أُذُنَيْهِ

 

১.অর্থ: বারাআ (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কারুকার্য খচিত লাল চাঁদর পরিহিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেয়ে সুন্দর কোনো বাবরি চুল ওয়ালাকে দেখিনি। মুহাম্মাদের বর্ণনায় রয়েছেঃ তাঁর বাবরি চুল কাঁধ পর্যন্ত ছিলো। শু‘বাহর বর্ণনায় রয়েছেঃ কানের লতি পর্যন্ত ছিলো। (ইফা.সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫৮৫৬ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৪১৩৫ উভয় হাদীসের মান: সহীহ)

 

حَدَّثَنَا ابْنُ نُفَيْلٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِ الزِّنَادِ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوْقَ الْوَفْرَةِ، وَدُونَ الْجُمَّةِ

 

২.অর্থ: আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথার চুল কানের লতির নীচে এবং ঘাড়ের উপর পর্যন্ত লম্বা ছিল। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৪১৩৮ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১৭৬১ উভয় হাদীসের মান: হাসান)

 

এই হাদীসগুলো থেকে জানতে পারলাম রাসূল (সা.) থেকে উপরোক্ত তিন পদ্ধতির বাবরি রাখাই প্রমাণিত। তাই অন্য কোন পদ্ধতি রাসূল (সা.) থেকে প্রমাণিত সুন্নত বলা যাবে না। রাসূল (সা.) কেবল দুইবার চুল কামিয়েছেন এ মর্মে হাদীস পাওয়া যায়। আর দু’টিই হজ্বের সময়কার।

 

عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ، قَالَ حَلَقَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَحَلَقَ طَائِفَةٌ مِنْ أَصْحَابِهِ وَقَصَّرَ بَعْضُهُمْ ‏

 

৩.অর্থ: আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্বে তাঁর মাথা মুণ্ডন করলেন। তাঁর কিছু সংখ্যক সাহাবীও মাথা মুণ্ডন করলেন আর কিছু সংখ্যক সাহাবী চুল ছোট করলেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৪০৬৯ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৩০১৪ উভয় হাদীসের মান: সহীহ)

 

কিছু সংখ্যক সাহাবী থেকে হজ্ব ছাড়াও চুল কামিয়ে ফেলা প্রমাণিত। যা চুল কামানোকে জায়েয প্রমাণিত করে। কিন্তু এটি রাসূল (সা.) এর সুন্নত বলা যাবে না। তবে সাহাবায়ে কেরামের সুন্নত বলা যাবে। চুল রাখার ক্ষেত্রে একটি নিষিদ্ধ পদ্ধতি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। সেটি হল, মাথার এক পাশের চুল কামিয়ে ফেলা, আরেকদিকের চুলকে রেখে দেয়া। এ পদ্ধতি নিষিদ্ধ তথা হারাম। তাই এ পদ্ধতিতে চুল রাখা জায়েয নয়।

 

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنِ الْقَزَعِ‏.‏

 

৪.অর্থ: ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘কযা’ করতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ মাথার কিছু অংশের চুল কামিয়ে ফেলতে ও কিছু অংশের চুল রেখে দিতে নিষেধ করেছেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫৪৯৭ 

সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫৩৭৬ উভয় হাদীসের মান: সহীহ)

 

আর কোন পদ্ধতির জায়েয বা নাজায়েযের কোন কথা স্পষ্ট ভাষায় হাদীসে বর্ণিত হয়নি। তাই উপরোক্ত নিষিদ্ধ পদ্ধতি বাদ দিয়ে যে কোন পদ্ধতিতে চুল রাখা জায়েয আছে। তবে কাফের বা ফাসিকের অনুসরণে রাখা জায়েয হবে না।

 

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

 

৫.অর্থ: হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন বিজাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই দলভুক্ত হবে। (ইফা.সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯৮৯ হাদীসের মান: হাসান) 

 

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ ” . قَالَ رَجُلٌ إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً . قَالَ ” إِنَّ اللَّهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ 

 

৬.অর্থ: আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা. ) থেকে বর্ণিত নবী (সা.) বলেছেন, যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, মানুষের মন চায় যে, তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, এটাও কি অহংকার ? রাসূল (সাঃ) বললেন ‘আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে ভালোবাসেন। প্রকৃতপক্ষে অহংকার হচ্ছে দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা। (ইফা. সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৭ হাদীসের মান: সহীহ)

 

উল্লেখিত হাদীস-সমূহের আলোকে আমরা জানতে পারলাম তিন তরিকায় বাবরী রাখা সুন্নত আর মাথার চুল ছোট করে রাখা বা মুণ্ডানো জায়েয। এ ছাড়া সমস্ত মাথার চুল সমান করে কাটা বা সামনে খানিক বড় পিছনে ছোট। অথবা একদিকে বড় আরেক দিকে ছোট ইত্যাদি পদ্ধতি যতক্ষণ না কোন কাফের বা ফাসিকের অনুসরণে করা না হবে ততক্ষণ তা নাজায়েয বলার কোন সুযোগ নেই। কেউ যদি এই সমস্ত হেয়ার কাটিং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য করে তাহলে জায়েয আছে। কারণ আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন।

 

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب

উত্তর প্রদানে- আব্দুল কুদ্দুস।

শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।

পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।  

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *