ছবিযুক্ত কাপড় পরে নামায পড়লে অথবা সামনে ছবি থাকলে নামায হবে কি ?

প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম! কোনো প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরে নামায পড়লে অথবা সামনে প্রাণীর ছবি থাকলে নামায হবে কি ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

ইসলামী শরীয়তে সব ধরনের প্রাণীর ছবিযুক্ত পোশাক পরিধান করা হারাম। তবে প্রাণহীন বস্তু যেমন গাছ পাহাড়, ঝরনা,নদী, সাগর ইত্যাদির ছবি হলে জায়েয আছে। কেউ যদি প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরে নামায পড়ে। অথবা সামনে কোন প্রাণীর ছবি, মূর্তি বা আগুন থাকে তাহলে তার নামায মাকরূহ হবে। কিন্তু কোনো কাপড় দ্বারা ঐ ছবি বা মূর্তি ঢেকে দিলে নামায মাকরূহ হবে না।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، كَانَ قِرَامٌ لِعَائِشَةَ سَتَرَتْ بِهِ جَانِبَ بَيْتِهَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمِيطِي عَنَّا قِرَامَكِ هَذَا، فَإِنَّهُ لاَ تَزَالُ تَصَاوِيرُهُ تَعْرِضُ فِي صَلاَتِي»

১.অর্থ: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, আয়েশা (রা.) এর কাছে একটা বিচিত্র রংয়ের পাতলা পর্দার কাপড় ছিল। তিনি তা ঘরের একদিকে পর্দা হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। নবী (ﷺ) বললেনঃ আমার সম্মুখ থেকে এই পর্দা সরিয়ে নাও। কারণ নামায আদায় করার সময় এর ছবিগুলো আমার সামনে ভেসে ওঠে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭৪ মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং ৭৫৮ হাদীসের মান: সহীহ )

عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ – رضى الله عنه – زَمَنَ الْفَتْحِ وَهُوَ بِالْبَطْحَاءِ أَنْ يَأْتِيَ الْكَعْبَةَ فَيَمْحُوَ كُلَّ صُورَةٍ فِيهَا فَلَمْ يَدْخُلْهَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم حَتَّى مُحِيَتْ كُلُّ صُورَةٍ فِيهَا

২.অর্থ: জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী (ﷺ) মক্কা বিজয়ের দিন, যখন তিনি ‘বাতহা’ নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন, তখন উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) কে এমর্মে নির্দেশ দেন যে, তুমি কাবা ঘরে যাও এবং সেখানে যত ছবি আছে, তা সব মুছে ফেল। আর নবী (ﷺ) সেখানে (নামায পড়ার জন্য) ততক্ষণ প্রবেশ করেননি, যতক্ষণ না সেখানকার সব ছবি নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৫৬ হাদীসের মান: হাসান)

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي فِي خَمِيصَةٍ ذَاتِ أَعْلاَمٍ فَنَظَرَ إِلَى عَلَمِهَا فَلَمَّا قَضَى صَلاَتَهُ قَالَ ” اذْهَبُوا بِهَذِهِ الْخَمِيصَةِ إِلَى أَبِي جَهْمِ بْنِ حُذَيْفَةَ وَائْتُونِي بِأَنْبِجَانِيِّهِ فَإِنَّهَا أَلْهَتْنِي آنِفًا فِي صَلاَتِي ”

৩.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একটি নকশাকৃত চাঁদর পরিধান করে নামাযে দাঁড়ালেন। চাদরের নকশাগুলি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। নামায শেষে তিনি বললেন, এই চাদরটি আবু জাহম ইবনে হুযাইফার নিকট নিয়ে যাও এবং তার মোটা চাদরটি আমাকে এনে দাও, কেননা এটি এখন আমাকে আমার নামাযে অন্যমনস্ক করেছে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭৩ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৫৬ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” لاَ تَدْخُلُ الْمَلاَئِكَةُ بَيْتًا فِيهِ تَمَاثِيلُ أَوْ تَصَاوِيرُ ”

৪.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ফেরেশতাগণ সে ঘরে প্রবেশ করেন না, যে ঘরে মূর্তি অথবা প্রাণীর ছবি থাকে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩২২ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩৬৩ হাদীসের মান: সহীহ)

উল্লেখিত আলোচনার দ্বারা আমরা জানতে পারলাম। কোনো প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরে নামায পড়লে অথবা সামনে প্রাণীর ছবি থাকলে নামায হয়ে যাবে কিন্তু নামায মাকরূহ হবে। তবে কাপড়ে যদি প্রাণীর ছবি স্পষ্ট না হয়। কিংবা অন্য কোনো কাপড় দ্বারা ঢাকা থাকে তাহলে নামায মাকরূহ হবে না। উল্লেখ্য, নামাযের ভিতরে হোক অথবা বাইরে সর্বদা ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করা হারাম। সুতরাং একজন ঈমানদারের কর্তব্য হলো সর্ব প্রকার ছবিযুক্ত জামা কাপড় পরা থেকে বিরত থাকবে।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *