প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! আমার প্রশ্ন হলো, আমি যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও আমার ঘুষ ছাড়া চাকরি হচ্ছে না! এমন পরিস্থিতিতে আমি ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতে পারবো কি ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে। সরকারি বা বেসরকারি যে কোন ধরনের চাকরি বা কাজ পাওয়ার আশায়,কাউকে ঘুষ দেওয়া জায়েয নয়। চাকরি বা কাজটা যদি হালাল হয়। আর এর জন্য যে ধরনের যোগ্যতা প্রয়োজন তা আপনার মধ্যে যথাযথ থাকে এবং কারো হক নষ্ট না করা হয়। কিন্তু এরপরও কর্তৃপক্ষ যদি ঘুষ ছাড়া চাকরি বা কাজটা না দেয়। তাহলে সে ক্ষেত্রে ঘুষ দিয়ে চাকরি বা কাজ নিলে তা আপনার জন্য ঘুষ হিসেবে বিবেচিত হবে না। কারণ আপনি এর দ্বারা কারো হক নষ্ট করেননি এবং আপনি নিজে উক্ত কাজের উপযুক্ত। এ ক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে ঘুষ দাবি করার কারণে কর্তৃপক্ষ গোনাহগার হবে কিন্তু ঘুষ দেওয়ার কারণে আপনি গোনাহগার হবেন না। কিন্তু আপনি যদি অযোগ্য হোন এবং যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হোন। তাহলে ঘুষ দিয়ে চাকরিতে থাকা এবং বেতন নেওয়া জায়েয হবে না। বরং এখান থেকে উপার্জিত সব কিছুই আপনার হারাম হবে।
وَ لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ وَ تُدۡلُوۡا بِہَاۤ اِلَی الۡحُکَّامِ لِتَاۡکُلُوۡا فَرِیۡقًا مِّنۡ اَمۡوَالِ النَّاسِ بِالۡاِثۡمِ وَ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡن
১.অর্থ: তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ খেয়ো না। এবং বিচারকদেরকে (ঘুষ হিসেবে) প্রদান করো না। যাতে মানুষের সম্পদের কোন অংশ পাপের মাধ্যমে জেনে বুঝে খেয়ে ফেলতে পারো।(সূরা বাকারা, আয়াত নং ১৮৮)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الرَّاشِيَ وَالْمُرْتَشِيَ
২.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা এবং ঘুষ গ্রহীতার উপর অভিশাপ দিয়েছেন। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৩৫৪২ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১৩৪১ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ “ أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا اللَّهَ وَأَجْمِلُوا فِي الطَّلَبِ فَإِنَّ نَفْسًا لَنْ تَمُوتَ حَتَّى تَسْتَوْفِيَ رِزْقَهَا وَإِنْ أَبْطَأَ عَنْهَا فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَجْمِلُوا فِي الطَّلَبِ خُذُوا مَا حَلَّ وَدَعُوا مَا حَرُمَ ” .
৩.অর্থ: জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো। কেননা কোন ব্যক্তিই তার জন্য নির্ধারিত রিযিক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মরবে না, যদিও তার রিযিক প্রাপ্তিতে কিছু বিলম্ব হয়। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো, যা হালাল তাই গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন করো। (ইফা. সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ২১৪৪ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ مَسْرُوقٍ قَالَ الْقَاضِي إِذَا أَكَلَ الْهَدِيَّةَ فَقَدْ أَكَلَ السُّحْتَ وَإِذَا قَبِلَ الرِّشْوَةَ بَلَغَتْ بِهِ الْكُفْرَ وَقَالَ مَسْرُوقٌ مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ فَقَدْ كَفَرَ وَكُفْرُهُ أَنْ لَيْسَ لَهُ صَلَاةٌ
৪.অর্থ: মাসরূক (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন বিচারক যখন কোন উপঢৌকন গ্রহণ করে, তখন সে যেন হারাম খায়, আর যখন সে ঘুষ গ্রহণ করে, তখন সে কুফরী পর্যন্ত পৌঁছায়। মাসরুক (রহঃ) আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি শরাব পান করে, সে কাফের হয়ে যায়। তার কুফরী এই যে, তার নামায কবুল হয় না। (ইফা. সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৫৬৬৫ হাদীসের মান: সহীহ)
উল্লেখিত কুরআনের আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, কোন চাকরি বা কাজে ঘুষ প্রদান করা এবং গ্রহণ করা উভয়টা হারাম। কিন্তু আপনি যদি ঐ চাকরি বা কাজের উপযুক্ত হোন এবং অন্যের হক নষ্ট না করা হয়। এ ক্ষেত্রে ঘুষ ছাড়া চাকরি না হলে এমন পরিস্থিতিতে ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়া জায়েয আছে।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- খালেদ সাইফুল্লাহ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply