গরিব মানুষের উপর কুরবানী ওয়াজিব হলে তারা কী করবে ?

প্রশ্ন:

নিম্নমধ্যবিত্ত মহিলারা সাধারণত এক দুই ভরি স্বর্ণ স্বামীর কাছ থেকে পেয়ে থাকে। সাথে অল্প রুপা কিছু নগদ টাকা থাকে। এ ক্ষেত্রে তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হলে তারা কী করবে ? তাদের তো সাধারণত কোন ইনকাম সোর্স থাকে না, আবার স্বামীরও এমন অবস্থা থাকে না যে তারটা আদায় করে দেবে। ফলে স্বর্ণ বিক্রি করে আদায় করলে দেখা যাবে দুই তিন বছর পর সে নিজেই ফকির হয়ে যাবে তাহলে তাদের করণীয় কী ?

উত্তর:

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

যে ব্যক্তির কাছে জিলহজ্ব মাসের দশ এগার ও
বার তারিখের সূর্য অস্ত যাবার আগ পর্যন্ত প্রয়োজন অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা বা এর সমমূল্য টাকা কিংবা সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা এর সমমূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকে এবং তা ঋণ বহির্ভূত হয়, তাহলে উক্ত ব্যক্তির উপর কুরবানী করা আবশ্যক। সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থায় নিম্নমধ্যবিত্ত মহিলাদের যেহেতু স্বর্ণ,রূপা ও নগদ টাকা মিলিয়ে রূপার নেসাব পরিমাণ হয়ে যায়। তাই তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যাবে এবং যে কোন অবস্থাতে কুরবানী করা আবশ্যক হবে।

বর্তমানে কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগল বা ভেড়ার বাজার মূল্য খুব বেশি নয়। এ অবস্থায় সারা বছর ধরে নিজেদের মাসিক খরচ থেকে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে কুরবানীযোগ্য একটি ছাগল বা ভেড়া কিনে তা কুরবানী করে দিবে। যদি কারও জন্য এটাও কষ্টকর হয়, তাহলে রূপা ও নগদ টাকার বিনিময়ে স্বর্ণ ক্রয় করে নিবে। এতে নিসাবের পরিমাণ বেড়ে যাবে কুরবানী ওয়াজিব হবে না। কেননা শুধুমাত্র স্বর্ণের ক্ষেত্রে যাকাত বা কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য সাড়ে সাত ভরি পরিমাণ হওয়া আবশ্যক। উল্লেখ্য আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করলে আল্লাহ সম্পদের মধ্যে বরকত দান করেন এবং অভাব-অনটন দূর করে দেন। এজন্য যথাসম্ভব সন্তুষ্টচিত্তে সাধ্য অনুযায়ী আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা উচিত।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلمـ قَالَ ‏ “‏ مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلاَ يَقْرَبَنَّ مُصَلاَّنَا ‏”‏ ‏‏
১.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও না আসে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩১২৩ হাদীসের মান: হাসান)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ وَمَا زَادَ اللَّهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ إِلاَّ عِزًّا وَمَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ لِلَّهِ إِلاَّ رَفَعَهُ اللَّهُ ”

২.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ সাদকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা উঁচুতে তুলে দেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৩৫৬ হাদীসের মান: সহীহ)

মোটকথা বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য হবে। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোন একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। যদি কেউ গরিব ব্যক্তির ওয়াজিব কুরবানী আদায় করে দিতে চাই। তাহলে ওই গরিব ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে নতুবা কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা উত্তম।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে: মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *