কোন কোন জিনিস দ্বারা নামাযের সুতরা বানানো যায় ?

 প্রশ্নঃ

 

আসসালামু আলাইকুম! মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, কোন কোন জিনিস দ্বারা সুতরা বানানো যায় ? আর রুমাল বা জায়নামায দ্বারা সুতরা বানিয়ে হাঁটতে থাকা কি ঠিক ?

 

উত্তরঃ

 

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ  

حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

 

নামাযে সুতরা ব্যবহারের কথা হাদীসের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি যে, কোন জিনিস দ্বারা সুতরা বানাতে হবে। তাই সুতরা যে কোন জিনিস দ্বারা বানানো যায়। যেমন: লাঠি,খুঁটি, কাঠ, খাট, গাছ, উট, দেয়াল ইত্যাদি। কিন্তু কেউ কেউ মসজিদ থেকে দ্রুত বের হওয়ার জন্য নামাযরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে রুমাল বা হাতে থাকা জায়নামায সুতরা হিসেবে ব্যবহার করে হাঁটতে থাকে। এই ধরনের চলমান সুতরা নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার জন্য সুতরা হিসেবে যথেষ্ট হবে না। তাই এমন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অবশ্য কেউ যদি নামাযরত ব্যক্তির সামনে সুতরা রেখে অতিক্রম করে এরপর আরেক জনের সামনে ঐ সুতরা রাখে। এভাবে একাধিক ব্যক্তির সামনে সুতরা রেখে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে জায়েয আছে। কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া এমনটি করা থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ এতে নামাযী ব্যক্তির মনোযোগ বিনষ্ট হতে পারে। তাই নামাযী ব্যক্তির উচিত মানুষ চলাচলের স্থানে সুতরা সামনে রেখেই নামাযে দাঁড়ানো। 

 

عَنْ مُوسَى بْنِ طَلْحَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” إِذَا وَضَعَ أَحَدُكُمْ بَيْنَ يَدَيْهِ مِثْلَ مُؤْخِرَةِ الرَّحْلِ فَلْيُصَلِّ وَلاَ يُبَالِ مَنْ مَرَّ وَرَاءَ ذَلِكَ 

 

১.অর্থ: তালহা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের যে কেউ তার সম্মুখে হাওদার পিছনের খাড়া কাঠের পরিমাণ কিছু স্থাপন করে যেন নামায আদায় করে। এরপর সেটির পিছন দিয়ে কেউ গেলে কোন পরোয়া করবে না। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৯৯৪ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৬৮৫ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ: «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُرْكَزُ لَهُ الحَرْبَةُ فَيُصَلِّي إِلَيْهَا»

 

২.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, 

নবী (ﷺ) এর সামনে (সুতরা হিসেবে) বর্শা পুঁতে রাখা হতো, আর তিনি সেদিকে নামায আদায় করতেন। (ইফা.সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৭৪ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ «كَانَ يُعَرِّضُ رَاحِلَتَهُ، فَيُصَلِّي إِلَيْهَا» ، قُلْتُ: أَفَرَأَيْتَ إِذَا هَبَّتِ الرِّكَابُ؟ قَالَ: «كَانَ يَأْخُذُ هَذَا الرَّحْلَ فَيُعَدِّلُهُ، فَيُصَلِّي إِلَى آخِرَتِهِ – أَوْ قَالَ مُؤَخَّرِهِ -» وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَفْعَلُهُ “

 

৩.অর্থ: ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) (সুতরা হিসেবে) তাঁর উটনীকে সামনে রেখে নামায আদায় করতেন। (রাবী নাফে (রহ.) বলেন) আমি (আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) কে) জিজ্ঞাসা করলামঃ যখন সওয়ারী নড়াচড়া করতো তখন (তিনি কি করতেন)? তিনি বলেনঃ তিনি তখন হাওদা নিয়ে সোজা করে নিজের সামনে রাখতেন, আর তার শেষাংশের দিকে নামায আদায় করতেন। (নাফে (রহ.) বলেন) ইবনে উমর (রা.)-ও এরূপ করতেন। (ইফা.সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৩ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: أَعَدَلْتُمُونَا بِالكَلْبِ وَالحِمَارِ «لَقَدْ رَأَيْتُنِي مُضْطَجِعَةً عَلَى السَّرِيرِ، فَيَجِيءُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَتَوَسَّطُ السَّرِيرَ، فَيُصَلِّي، فَأَكْرَهُ أَنْ أُسَنِّحَهُ، فَأَنْسَلُّ مِنْ قِبَلِ رِجْلَيِ السَّرِيرِ حَتَّى أَنْسَلَّ مِنْ لِحَافِي»

 

৪.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ তোমরা আমাদেরকে কুকুর, গাধার সমান করে ফেলেছ! আমি নিজে এ অবস্থায় ছিলাম যে, আমি চৌকির উপর শুয়ে থাকতাম আর নবী (ﷺ) এসে চৌকির মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতেন। এভাবে আমি সামনে থাকা পছন্দ করতাম না। তাই আমি চৌকির পায়ের দিকে সরে গিয়ে চুপি চুপি নিজের লেপ থেকে বেরিয়ে পড়তাম। (ইফা.সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৪ হাদীসের মান: সহীহ)

 

حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ أَبِي عُبَيْدٍ، قَالَ: كُنْتُ آتِي مَعَ سَلَمَةَ بْنِ الأَكْوَعِ فَيُصَلِّي عِنْدَ الأُسْطُوَانَةِ الَّتِي عِنْدَ المُصْحَفِ، فَقُلْتُ: يَا أَبَا مُسْلِمٍ، أَرَاكَ تَتَحَرَّى الصَّلاَةَ عِنْدَ هَذِهِ الأُسْطُوَانَةِ، قَالَ: فَإِنِّي «رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى الصَّلاَةَ عِنْدَهَا»

 

৫.অর্থ: ইয়াযিদ ইবনে আবু উবাইদা (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি সালামা ইবনুল আকওয়া (রা.) এর কাছে আসতাম। তিনি সর্বদা মসজিদে নববীর সেই স্তম্ভের কাছে নামায আদায় করতেন যা ছিল মাসহাফের নিকটবর্তী। আমি তাঁকে বললামঃ হে আবু মুসলিম! আমি আপনাকে সর্বদা এই স্তম্ভ খুজে বের করে সামনে রেখে নামায আদায় করতে দেখি (এর কারণ কি?) তিনি বললেনঃ আমি নবী (ﷺ)কে এটি খুঁজে বের করে এর কাছে নামায আদায় করতে দেখেছি। (ইফা.সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৭৮ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ: «كَانَ بَيْنَ مُصَلَّى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبَيْنَ الجِدَارِ مَمَرُّ الشَّاةِ»

 

৬.অর্থ: সাহল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত,

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নামাযের স্থান ও দেওয়ালের মাঝখানে একটা বকরী চলার মত ব্যবধান ছিল। (ইফা.সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৭২ হাদীসের মান: সহীহ)

 

উল্লেখিত হাদীস-সমূহ থেকে জানতে পারলাম যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কর্তৃক বিভিন্ন প্রকার সুতরা প্রমাণিত। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সুতরা রেখে নামায পড়ছেন। যেমন:- কখনো মসজিদের খুঁটিকে, কখনো ফাঁকা ময়দানে বর্শা গেড়ে, কখনো নিজের উটকে আড়াআড়ি ভাবে দাঁড় করিয়ে সুতরা বানাতেন। আবার কখনো উটের পিঠে বসার জিনপোশ, গাছ ও শোয়ার খাটকে সুতরা বানিয়ে নামায পড়েছেন। অতএব এ কথা বলা যায় যে, নামাযের সুতরা হিসেবে চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি জাতীয় জিনিসগুলোও ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু স্থির নয় এমন কোনো জিনিসকে সুতরা বানানো যাবে না। সুতরাং হাতে থাকা জায়নামায বা রুমালকে সুতরা হিসেবে ব্যবহার করলে তা সহীহ হবে না।

 

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب

উত্তর প্রদানে- মো. আসাদুজ্জামান।

শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার। 

উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল। 

পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।  

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *