প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম ! প্রিয় মুফতী সাহেব আশাকরি ভালো আছেন। আমার জানার বিষয় হলো কোন কোন কারণে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয় ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
যে সব কারণে অযু ভঙ্গ হয়, ঠিক সেই কারণে তায়াম্মুমও ভঙ্গ হয়। যে সব কারণ গোসল ফরয হয় সে সব কারণে তায়াম্মুমও ভঙ্গ হয়। কেননা তায়াম্মুম হলো অযু ও গোসলের বিকল্প। এ ছাড়াও যে সব কারণে তায়াম্মুম করা হয়েছিল, সে সব কারণ দূর হয়ে গেলেও তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়। যেমন:-পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্মুম করলে পানি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে। এমনিভাবে অসুস্থতার কারণে তায়াম্মুম করলে,অসুস্থতা ভালো হয়ে যাওয়ার পর পরই তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে। কিন্তু পুনরায় অযু করে নামায আদায় করতে হবে না। কেননা পানি না পাওয়ার কারণেই অযুর পরিবর্তে, তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে নামায আদায় করা হয়েছে।
وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ جُنُبًا فَاطَّہَّرُوۡا ؕ وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡہِکُمۡ وَ اَیۡدِیۡکُمۡ مِّنۡہُ ؕ مَا یُرِیۡدُ اللّٰہُ لِیَجۡعَلَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ حَرَجٍ وَّ لٰکِنۡ یُّرِیۡدُ لِیُطَہِّرَکُمۡ
১.অর্থ: আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা সেরে আসে কিংবা তোমরা স্ত্রী সহবাস করে থাক, অতঃপর পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও। অর্থাৎ তোমাদের মুখমন্ডল ও উভয় হাত মাটি দ্বারা মাসাহ করো। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান। (সূরা মায়েদা আয়াত নং ৬)
عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ اجْتَمَعَتْ غُنَيْمَةٌ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ” يَا أَبَا ذَرٍّ ابْدُ فِيهَا ” . فَبَدَوْتُ إِلَى الرَّبَذَةِ فَكَانَتْ تُصِيبُنِي الْجَنَابَةُ فَأَمْكُثُ الْخَمْسَ وَالسِّتَّ فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ” أَبُو ذَرٍّ ” . فَسَكَتُّ فَقَالَ ” ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ أَبَا ذَرٍّ لأُمِّكَ الْوَيْلُ ” . فَدَعَا لِي بِجَارِيَةٍ سَوْدَاءَ فَجَاءَتْ بِعُسٍّ فِيهِ مَاءٌ فَسَتَرَتْنِي بِثَوْبٍ وَاسْتَتَرْتُ بِالرَّاحِلَةِ وَاغْتَسَلْتُ فَكَأَنِّي أَلْقَيْتُ عَنِّي جَبَلاً فَقَالَ ” الصَّعِيدُ الطَّيِّبُ وَضُوءُ الْمُسْلِمِ وَلَوْ إِلَى عَشْرِ سِنِينَ فَإِذَا وَجَدْتَ الْمَاءَ فَأَمِسَّهُ جِلْدَكَ فَإِنَّ ذَلِكَ خَيْرٌ ”
২.অর্থ: আবু যর (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর নিকট গনীমতের মাল (বকরীর পাল) জমায়েত হয়। তিনি বলেন, হে আবু যর! তুমি এগুলো মাঠে নিয়ে যাও। তখন আমি সেগুলিকে রাবাযা নামক স্থানে নিয়ে যাই। সেখানে আমি অপবিত্র হয়ে পড়ি। এমতাবস্থায় সেখানে আমি ৫/৬ দিন (গোসল ব্যতীত) অবস্থান করি। অতঃপর আমি নবী (ﷺ) এর নিকট ফিরে এসে (বিষয়টি জানালাম)। তখন তিনি আমাকে বলেন, হে আবু যর! এ সময় আমি (লজ্জায়) নিশ্চুপ থাকি। তিনি পুনরায় বলেন, তোমার মাতা তোমার জন্য ক্রন্দন করুক এবং তোমার মাতার জন্য আফসোস। এই বলে তিনি সাওদা নাম্নী দাসীকে ডেকে পানি আনার নির্দেশ দেন। সে পানি ভর্তি একটি বড় পাত্র আমার সম্মুখে হাযির করে এবং সে একটি কাপড়ের পর্দার দ্বারা একদিকে আমাকে আঁড়াল করে দিল। আর অপর দিকে আমি উটের পিঠের আসন রেখে পর্দা করি। অতঃপর আমি গোসল করলাম। এ সময় আমার মনে হয় যেন আমার উপর হতে একটি পাহাড় পরিমাণ বোঝা সরে গেল। নবী (ﷺ) বললেন, পবিত্র মাটি মুসলমানদের জন্য (পানির দুস্প্রাপ্যতার সময়) পানির সমতুল্য (পবিত্রতা অর্জনের জন্যে)। যদি দশ বছর ধরেও যদি পানি না পায় তাহলেও পাক মাটি একজন মুসলিমের জন্য পবিত্রতার উপকরণ বলে বিবেচ্য হবে। অতঃপর যখন সে পানি পাবে তখন গোসল করবে। কেননা এটাই উত্তম ব্যবস্থা। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৩৩২ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، أَنَّ رَجُلَيْنِ، تَيَمَّمَا وَصَلَّيَا ثُمَّ وَجَدَا مَاءً فِي الْوَقْتِ فَتَوَضَّأَ أَحَدُهُمَا وَعَادَ لِصَلاَتِهِ مَا كَانَ فِي الْوَقْتِ وَلَمْ يُعِدِ الآخَرُ فَسَأَلاَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لِلَّذِي لَمْ يُعِدْ ” أَصَبْتَ السُّنَّةَ وَأَجْزَأَتْكَ صَلاَتُكَ ” . وَقَالَ لِلآخَرِ ” أَمَّا أَنْتَ فَلَكَ مِثْلُ سَهْمِ جَمْعٍ
৩.অর্থ: আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত। দুই ব্যক্তি তায়াম্মুম করে নামায আদায় করল। পরবর্তীতে নামাযের সময় থাকতেই তারা পানি প্রাপ্ত হল। তাদের একজন অযু করে তার নামায ওয়াক্তের মধ্যেই আদায় করল। দ্বিতীয় ব্যক্তি পুনরায় আদায় করল না। তারা উভয়েই এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে প্রশ্ন করল। যে ব্যক্তি পুনরায় নামায আদায় করেনি, তিনি তাকে বললেন, তুমি বিধান মত কাজ করেছ। তোমার নামায তোমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে। অন্য বক্তিকে বললেন, তোমার জন্য উভয় কাজের সওয়াব রয়েছে। (ইফা. সুনানে নাসাঈ হাদীস ৪৩৩ হাদীসের মান: সহীহ)
মোটকথা অযুর মাধ্যমে যেভাবে পবিত্রতা অর্জন হয় এবং এই পবিত্রতা ভঙ্গ হয় অযু ভঙ্গের কারণে। ঠিক তেমনিভাবে তায়াম্মুমের কারণেও পবিত্রতা অর্জন হয় এবং এই পবিত্রতাও ভঙ্গ হয়, অযুর পবিত্রতা ভঙ্গের কারণে। আর তায়াম্মুম যেহেতু পানি না পাওয়ার কারণে বা ওজরের কারণে হয়। তাই পানি পাওয়া গেলে বা ওজর দূর হয়ে গেলে তায়াম্মুমও ভঙ্গ হয়ে যাবে।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মিজানুর রহমান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply