প্রশ্ন:
আসসালামু আলাইকুম! আমার প্রতিবেশী দাদা মারা গিয়েছে। তার আত্মীয়-স্বজন তার ঈসালে সওয়াবের জন্য কুরআন খতম করেছে। এখন জানার বিষয় হলো, কুরআন খতম করে ঈসালে সওয়াব করা যায় কি ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
শরীয়ত সমর্থিত যে কোন নেক কাজের মাধ্যমেই মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সওয়াব করা জায়েয। সুতরাং কুরআনের কোন একটা সূরা বা কিছু অংশ পড়ে অথবা কুরআন খতম করেও ঈসালে সওয়াব করা জায়েয আছে। কিন্তু ঈসালে সওয়াবের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করে কিংব তাসবীহ তাহলীল পড়ে কোন ধরনের বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয নেই। বিনিময় গ্রহণ করলে সেটা আর সওয়াব হিসেবেই গণ্য হবে না। বরং বিনিময় নিয়ে পড়ার কারণে টাকাদাতা ও গ্রহীতা উভয়ে গোনাহগার হবে। অতএব শুধু তিলাওয়াতকারী বা তাসবীহ পাঠকারীর জন্যই খাবারের ব্যবস্থা করা হলে তা বিনিময় বলেই গণ্য হবে এবং তাদের জন্য তা খাওয়া নাজায়েয হবে। আর যদি ব্যাপকভাবে খাওয়ার আয়োজন করা হয়। সেক্ষেত্রে পাঠকারীদের জন্য খাবার খাওয়াটা বিনিময় হিসেবে বিবেচিত হবে না এবং অন্যদের ন্যায় তারাও খেতে পারবে।
উল্লেখ্য, যদি কেবলমাত্র দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে তিলাওয়াত করা হয়। যেমন: রোগমুক্তি, বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিনিময় দেওয়া নেওয়া জায়েয আছে। অবশ্য এক্ষেত্রেও অনেক ইসলামী বিশেষজ্ঞ বিনিময়ে কোন কিছু না নেওয়াই উত্তম বলে মত দিয়েছেন।
عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” اقْرَءُوا ( يٰسٓ) عَلَى مَوْتَاكُمْ ” .
১.অর্থ: মা’কাল ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মৃত্যু বরণকারী ব্যক্তির জন্য ’সূরা ইয়াসীন’ পাঠ করো। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১২১ হাদীসের মান: হাসান)
তাহকীক: ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেছেন এই হাদীসের সনদ হাসান। ইমাম আবু দাউদ (রহ.) এর মতে এতে দুর্বলতা নেই। (হিদায়াতুর রুওয়া ২/১৮৮ আবু দাউদ ৩১২১)
عَن عَبدِ الرَّحمنِ بنِ العلاءِ بن اللَّجلاجِ أنَّهُ قالَ لِبنيهِ إذا أدخلتُموني قبري فضعوني في اللَّحدِ وقولوا باسمِ اللَّهِ وعلى سنَّةِ رسولِ اللَّهِ ﷺ وسُنُّوا عليَّ التُّرابَ سَنًّا واقرَؤُوا عندَ رأسي أوَّلَ البقرَةِ وخاتِمتَها فإنِّي رأيتُ ابنَ عمرَ يستحِبُّ ذلكَ.
২.অর্থ: আবদুর রহমান ইবনে আলা ইবনে লাজলাজ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা সন্তানদেরকে বলেছেন, আমি মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমাকে কবরে রাখবে এবং বিসমিল্লাহি ওয়ালা সুন্নাতি রসূলিল্লাহ বলে সুন্দরভাবে মাটি বিছিয়ে দিবে। তারপর আমার মাথার কাছে সূরা বাকারার শুরু ও শেষাংশ পাঠ করবে। আমি ইবনে উমর (রা.) কে তা পছন্দ করতে দেখেছি। (তারিখে ইবনে মায়ীন, দূরী সংকলিত ২/৩৭৯-৩৮০)
তাহকীক: ইমাম বায়হাকী (রহ.) বলেন, এর সনদ হাসান। ইমাম নববী (রহ.)ও বলেছেন এর সনদ হাসান। (আদদাআওয়াতুল কাবীর ২/২৯৭; নাতাইজুল আফকার ৪/৪২৬)
حَدَّثَناَ وكيع، عن حسان بن إبراهيم، عن أمية الأزدي، عن جابر بن زيد، أنه كان يقرأ عند الميت سورة الرعد.
৩.অর্থ: আবু উমাইয়া আযদী (রহ.) থেকে বর্ণিত, জাবের ইবনে যায়েদ (রহ.) মৃত ব্যক্তির কাছে সূরা রা‘দ তিলাওয়াত করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা নং ১০৯৫৭)
তাহকীক: ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন,
এর সনদ সহীহ। (নাতাইজুল আফকার ৪/৩১২)
عن ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِذَا مَاتَ أَحَدُكُمْ فَلَا تَحْبِسُوهُ، وَأَسْرِعُوا بِهِ إِلَى قَبْرِهِ، وَلْيُقْرَأْ عِنْدَ رَأْسِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَعِنْدَ رِجْلَيْهِ بِخَاتِمَةِ الْبَقَرَةِ فِي قَبْرِهِ
৪.অর্থ: ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন: আমি নবী (ﷺ) বলতে শুনেছি, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায়, তখন তাকে আটকে রেখো না বরং দ্রুত তাকে কবরস্থ করো। আর তার কবরের মাথার পাশে দাঁড়িয়ে সূরা ফাতেহা এবং পায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সূরা বাকারার শেষ অংশ তিলাওয়াত করো। (আল-মুজামুল কাবীর তাবরানী, হাদীস নং-১৩৬১৩ হাদীসের মান: হাসান)
তাহকীক: ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) ফাতহুল বারীতে এর সনদ হাসান বলেছেন৷
وأنه إجماع المسلمين، فإنهم في كل عصر ومصر يجتمعون ويقرؤون القرآن، ويهدون ثوابه إلى موتاهم، من غير نكير.
৫.অর্থ: ইমাম ইবনে কুদামা (রহ.) তিলাওয়াতের সওয়াব রেসানির বৈধতার দলিল আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, এতে মুসলমানদের ইজমা আছে। প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক শহরে তারা সমবেত হয়ে কুরআন তিলাওয়াত করে সওয়াব রেসানি করেছেন। এতে কেউ কোন আপত্তি করেনি। (আলমুগনী ৩/৫২২)
قَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ شِبْلٍ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : ” اقْرَءُوا الْقُرْآنَ، وَلَا تَغْلُوا فِيهِ، وَلَا تَجْفُوا عَنْهُ، وَلَا تَأْكُلُوا بِهِ، وَلَا تَسْتَكْثِرُوا بِهِ
৬.অর্থ: আব্দুর রহমান ইবনে শিবল (রা.) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি। তোমরা কুরআন পড়ো তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না এবং তার প্রতি বিমুখ হইও না। কুরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ বৃদ্ধির কামনা করো না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৫৫২৯ হাদীসের মান: সহীহ)
فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَحَقَّ مَا أَخَذْتُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا كِتَابُ اللَّهِ
৭.অর্থ: রসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবীদেরকে বললেন, তোমরা যে সব জিনিসের উপর পারিশ্রমিক গ্রহণ করে থাক, তার মধ্যে বিনিময় গ্রহণ করার সবচেয়ে বেশি হক রয়েছে আল্লাহর কিতাবের। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭৩৭ হাদীসের মান: সহীহ)
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَابْ
উত্তর প্রদানে-জোবায়ের হোসাইন।
শিক্ষার্থীঃ মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শায়েখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply