প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম ! আমরা জানি কিবলার দিকে মুখ করে অথবা পিঠ করে পেশাব পায়খানা করা নিষেধ। কিন্তু কিবলার দিকে আড়াল থাকলে বা টয়লেটের মধ্যে হলে তখন কিবলার দিকে মুখ করে বা পিঠ ফিরে পেশাব পায়খানা করা যাবে কি?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
কোন অবস্থাতেই কিবলার দিকে মুখ করে বা পিঠ করে পেশাব পায়খানা করা জায়েয নয়। চাই খোলা মাঠে, আড়ালে বা টয়লেটে হোক। কারণ কিবলা হলো ইসলামের একটা শেয়ার তথা নিদর্শন। আর এ দিকেই মুখ করে নামায পড়া ফরয। তাই কিবলাকে সম্মান করা সকল মুসলমানদের কর্তব্য এবং অপমান করা হারাম। রাসূল (সা.) কিবলার সম্মানার্থে তার দিকে থুথু পর্যন্ত ফেলতে নিষেধ করেছেন। তাহলে কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ করে পেশাব-পায়খানা করা অধিকরূপে নিষিদ্ধ হবে তা বলাই বাহুল্য। সুতরাং সর্বাবস্থায় কিবলার দিকে মুখ করে বা পিঠ করে পেশাব পায়খানা করা নাজায়েয।
وَ مَنۡ یُّعَظِّمۡ شَعَآئِرَ اللّٰہِ فَاِنَّہَا مِنۡ تَقۡوَی الۡقُلُوۡبِ
১.অর্থ: আর যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে এটা তার হৃদয়ের আল্লাহভীতির বহিঃপ্রকাশ। (সূরা হজ্ব আয়াত: নং ৩২)
عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الأَنْصَارِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” إِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الْغَائِطَ فَلاَ يَسْتَقْبِلِ الْقِبْلَةَ وَلاَ يُوَلِّهَا ظَهْرَهُ
২.অর্থ: আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন শৌচাগারে যায়, তখন সে যেন কিবলার দিকে মুখ না করে এবং তার পিঠও না করে। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৪৪ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫০৩ হাদীসের মান সহীহ)
عَنْ سَلْمَانَ، قَالَ قَالَ لَنَا الْمُشْرِكُونَ إِنِّي أَرَى صَاحِبَكُمْ يُعَلِّمُكُمْ حَتَّى يُعَلِّمَكُمُ الْخِرَاءَةَ . فَقَالَ أَجَلْ إِنَّهُ نَهَانَا أَنْ يَسْتَنْجِيَ أَحَدُنَا بِيَمِينِهِ أَوْ يَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ وَنَهَى عَنِ الرَّوْثِ وَالْعِظَامِ وَقَالَ “ لاَ يَسْتَنْجِي أَحَدُكُمْ بِدُونِ ثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ ”
৩.অর্থ: সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুশরিকরা একবার আমাকে বলল, আমরা দেখছি তোমাদের সঙ্গী (রাসূল সা.) তোমাদেরকে সব কাজই শিক্ষা দেন এমনকি পেশাব পায়খানার নিয়ম নীতিও তোমাদেরকে শিক্ষা দেন! (জবাবে) তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেন ডান হাতে ইস্তিনজা করতে, (ইস্তিনজার সময়) কিবলামুখী হয়ে বসতে এবং তিনি আমাদেরকে আরো নিষেধ করেছেন গোবর অথবা হাড় দিয়ে ইস্তিনজা করতে। তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন তিনটি ঢিলার কম দিয়ে ইস্তিনজা না করে। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫০০ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِذَا جَلَسَ أَحَدُكُمْ عَلَى حَاجَتِهِ فَلاَ يَسْتَقْبِلِ الْقِبْلَةَ وَلاَ يَسْتَدْبِرْهَا
৪.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেউ পেশাব-পায়খানা করতে বসলে কখনো যেন সে কিবলার দিকে মুখ করে এবং সেদিকে পিছন দিয়েও না বসে। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫০৩ হাদীসের মান: সহীহ)
قَالَ أَبُو أَيُّوبَ فَقَدِمْنَا الشَّأْمَ فَوَجَدْنَا مَرَاحِيضَ بُنِيَتْ قِبَلَ الْقِبْلَةِ، فَنَنْحَرِفُ وَنَسْتَغْفِرُ اللَّهَ تَعَالَى
৫.অর্থ: আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) বলেন,
আমরা যখন সিরিয়ায় এলাম তখন পায়খানাগুলো কিবলামুখী বানানো পেলাম। তখন আমরা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতাম এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতাম। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৩৮৬ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫০২ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَأَى نُخَامَةً فِي قِبْلَةِ الْمَسْجِدِ فَأَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ فَقَالَ ” مَا بَالُ أَحَدِكُمْ يَقُومُ مُسْتَقْبِلَ رَبِّهِ فَيَتَنَخَّعُ أَمَامَهُ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يُسْتَقْبَلَ فَيُتَنَخَّعَ فِي وَجْهِهِ
৬.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একবার) রসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদে কিবলার দিকে থুথু দেখতে পেলেন। অতঃপর লোকদের দিকে ফিরে বললেন, তোমাদের কী হয়েছে? তোমাদের একজন তো প্রভুর দিকে মুখ করে নামাযে দাঁড়ায়, তারপর সে সামনের দিকে থুথু নিক্ষেপ করতে থাকে। তোমাদের কেউ কি এটা পছন্দ করবে যে, কেউ তার দিকে মুখ করে দাঁড়াবে অতঃপর তার মুখের উপর থুথু নিক্ষেপ করবে ? (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১১১০ সহীহ বুখারী হাদীস নং ১১৪০ হাদীসের মান: সহীহ)
* দ্বিমুখী দুটি হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ ارْتَقَيْتُ فَوْقَ بَيْتِ حَفْصَةَ، فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقْضِي حَاجَتَهُ، مُسْتَدْبِرَ الْقِبْلَةِ، مُسْتَقْبِلَ الشَّأْمِ
১.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (আমার বোন) হাফসা (রা.) এর ঘরের উপর (ছাদে) আরোহণ করি। তখন আমি দেখতে পেলাম, নবী (ﷺ) কিবলাকে পেছন দিক রেখে শাম (সিরিয়া) মুখী হয়ে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে নিচ্ছেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ২৮৮৩ হাদীসের মান সহীহ)
এই হাদীসটির কয়েকটি ব্যাখ্যা হতে পারে। ১.রাসূল (সা.) কিবলার দিকে পিঠ করে ইস্তেনজা করেছেন। এই হাদীসটির হুকুম রহিত হয়ে গেছে, নিষেধাজ্ঞার হাদীস দ্বারা। ২. রাসূল (সা.) কোন সমস্যার কারণে কিবলার দিকে পিঠ করে ইস্তেনজা করেছেন। ৩. যদি রাসূল (সা.) এর কথা এবং কাজে বিপরীত দেখা যায়। এই ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো কথাটি গ্রহণযোগ্য হয় কাজের তুলনায়। কারণ এই ক্ষেত্রে দেখার মধ্যে ভুল হতে পারে যেহেতু ইস্তেনজা সাধারণত গোপন জায়গায় করা হয়।
عَنْ مَرْوَانَ الأَصْفَرِ، قَالَ رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ أَنَاخَ رَاحِلَتَهُ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ ثُمَّ جَلَسَ يَبُولُ إِلَيْهَا فَقُلْتُ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَلَيْسَ قَدْ نُهِيَ عَنْ هَذَا قَالَ بَلَى إِنَّمَا نُهِيَ عَنْ ذَلِكَ فِي الْفَضَاءِ فَإِذَا كَانَ بَيْنَكَ وَبَيْنَ الْقِبْلَةِ شَىْءٌ يَسْتُرُكَ فَلاَ بَأْسَ
২.অর্থ: মারওয়ান আল-আসফার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর (রা.)-কে কিবলার দিকে মুখ করে তাঁর উট বসাতে দেখেছি অতঃপর তিনি উটের দিকে মুখ করে পেশাব করলেন। তখন আমি তাকে বললাম, হে আবু আবদুর রহমান! কিবলার দিকে মুখ করে পেশাব করার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়নি কি ? তিনি বলেন, হ্যাঁ, তবে এই নিষেধাজ্ঞা খোলা মাঠের ব্যাপারে প্রযোজ্য। অতঃপর যখন তোমার এবং কিবলার মধ্যে আড়াল স্বরূপ কিছু থাকে, এমতাস্থায় কোন অন্যায় হবে না। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ১১ হাদীসের মান: হাসান)
এই হাদীসটির দুটি ব্যাখ্যা হতে পারে। ১. ইবনে ওমর (রা.) এর হাদীসটি হচ্ছে নিষেধাজ্ঞার পূর্বের। ২. নিষেধাজ্ঞাই প্রাধান্য পাবে, কেননা নিষেধাজ্ঞা আসল থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে। আর আসল হচ্ছে জায়েয, তাই জায়েয থেকে স্থানান্তর হয়ে নাজায়েযের বিধানই গ্রহণ করা হবে।
মোটকথা উল্লেখিত কুরআনের আয়াত ও হাদীসগুলো ছাড়াও আরো অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। যা দ্বারা প্রমাণিত হয় খোলা মাঠে বা কোন কিছুর আড়ালে অথবা টয়লেটে কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ করে পেশাব পায়খানা করা জায়েয নয়। আর এটাকেই অধিকাংশ ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ অধিক সঠিক বলে মতামত দিয়েছেন।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- আতাউর রহমান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply