কর্মচারীদেরকে জামাতে নামায আদায় করতে বাঁধা দেওয়া যাবে কি ? 

 প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম জনাব, আশা করি ভালো আছেন, আমি জামাতে নামায আদায় করতে বাঁধা দেওয়া সম্পর্কে জানতে চাই। কোন কোন মানুষকে দেখা যায় তারা নিজ প্রাইভেট ড্রাইভার কিংবা দোকানের কর্মচারীদেরকে জামাতে নামায আদায় করতে বাঁধা দিয়ে থাকে। এমন করা কি জায়েয ?

 

উত্তরঃ

 

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

 

কোন মুসলমানের জন্য তার নিজ প্রাইভেট ড্রাইভার কিংবা দোকানের কর্মচারীদেরকে জামাতে নামায আদায় করতে বাঁধা দেওয়া জায়েয নয়। বরং মারাত্মক গোনাহের কাজ। কারণ জামাতে নামায আদায় করা ওয়াজিব। রাসূল (সা.) জামাতে নামায আদায়ের অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন, এমনকি জামাত তরক-কারীদের ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছেন। তাই বিশেষ কোনো ওযর ছাড়া জামাতে নামায পড়তে বাঁধা দেওয়া জায়েয হবে না।

 

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا ٱسْمُهُۥ وَسَعَىٰ فِى خَرَابِهَآ ۚ أُوْلَٰٓئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَن يَدْخُلُوهَآ إِلَّا خَآئِفِينَ ۚ لَهُمْ فِى ٱلدُّنْيَا خِزْىٌ وَلَهُمْ فِى ٱلْءَاخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ.

 

১.অর্থ: যে ব্যাক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে তার নাম উচ্চারণ করতে বাঁধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় যালেম আর কে? এদের পক্ষে মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বিধেয় নয়,অবশ্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়। ওদের জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ১১৪) 

 

اَلَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللَّهِ أَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ-

 

২.অর্থ: যারা কুফরী করে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে, আল্লাহ তাদের সকল কর্ম ব্যর্থ করে দেন। (সূরা মুহাম্মাদ: আয়াত নং ১)

 

 اِتَّخَذُوْا أَيْمَانَهُمْ جُنَّةً فَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللَّهِ فَلَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ-

 

৩.অর্থ: তারা তাদের শপথকে ঢাল করে রেখেছে, অতঃপর তারা আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বাঁধা প্রদান করে। অতএব তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা মুজাদালাহ: আয়াত  

নং ১৬)

 

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ

 

৪.অর্থ: তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ায় পরস্পরের সহযোগিতা করো। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। (সূরা মায়েদা: আয়াত নং ২)

 

وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ وَ ارْكَعُوْا مَعَ الرّٰكِعِیْنَ

 

৫.অর্থ: তোমরা নামায কায়েম করো, যাকাত দাও এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো। ( অর্থাৎ মসজিদে জামাতের সাথে নামায আদায় করো )। (সূরা বাকারা আয়াত নং ৪৩ তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৮৮) 

 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِحَطَبٍ فَيُحْطَبَ، ثُمَّ آمُرَ بِالصَّلاَةِ فَيُؤَذَّنَ لَهَا، ثُمَّ آمُرَ رَجُلاً فَيَؤُمَّ النَّاسَ، ثُمَّ أُخَالِفَ إِلَى رِجَالٍ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوتَهُمْ

 

৬.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার কসম! আমার মনে চায় যে, কিছু লোককে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের নির্দেশ দেই। তারপর নামায কায়েমের নির্দেশ দেই, এরপর নামাযের আযান দেওয়া হোক, তারপর এক ব্যাক্তিকে লোকদের ইমামতি করার নির্দেশ দেই। এরপর আমি লোকদের কাছে যাই এবং তাদের (যারা জামাতে হাজির হয়নি) তাদের ঘর-বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬১৬ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৩৫৭ হাদীসের মান: সহীহ)

 

 ابْنُ عَبَّاسٍ، وَابْنُ، عُمَرَ أَنَّهُمَا سَمِعَا النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ عَلَى أَعْوَادِهِ ‏ “‏ لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجَمَاعَاتِ أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُونُنَّ مِنَ الْغَافِلِينَ ‏”‏ ‏.‏ 

 

৭.অর্থ: ইবনে আব্বাস ও ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত: তারা উভয়ে নবী (সা.) কে তার মিম্বারের উপর থেকে বলতে শুনেছেন, লোকেরা অবশ্যই যেন জামাত ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকে। অন্যথায় আল্লাহ অবশ্যই তাদের অন্তরে সীলমোহর মেরে দিবেন, অতঃপর তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (ইফা.সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৭৯৪ হাদীসের মান: সহীহ) 

 

মোটকথা উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা আমরা জানতে পারলাম। জামাতে নামায আদায় করতে বাঁধা দেওয়া জঘন্যতম অপরাধ। এর জন্য পরকালে রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। তাই কোন ঈমানদার মুসলমানের জন্য জামাতে নামায পড়তে বাঁধা দেওয়া মোটেও ঠিক নয়।

 

 وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب

উত্তর প্রদানে- আব্দুল কুদ্দুস।

শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।

পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।  

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *