কবর পাকা করা কিংবা তার উপর গম্বুজ নির্মাণ করা যাবে কি ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম! আমাদের গ্ৰামের কবরস্থানে এক ব্যক্তির কবর তার আত্মীয় স্বজন পাকা করেছে এবং তার উপর গম্বুজ তৈরি করেছে এ বিষয়ে শরীয়তের বিধান কী জানতে চাই ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

মৃত ব্যক্তির কবর পাকা করা,সুসজ্জিত করা অথবা কবরের উপর বা পাশে কুরআনের আয়াত, দু’আ, কবিতা কিংবা প্রশংসা মূলক বাক্য লিখে রাখা। অথবা কবরের উপর গম্বুজ তৈরি করা শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েয ও গোনাহের কাজ। মূলত এগুলো করার মাধ্যমেই একসময় কবর-মাযার কেন্দ্রিক শিরক ও বিদআতের আখড়া হয়ে ওঠে। তাই এসব কাজ অবশ্যই পরিত্যাজ্য। অবশ্য কখনো কবর সনাক্ত করার প্রয়োজন হলে মৃত ব্যক্তির নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় কবরের পাশে লিখে রাখার অনুমতি রয়েছে।

اِذۡ یَتَنَازَعُوۡنَ بَیۡنَہُمۡ اَمۡرَہُمۡ فَقَالُوا ابۡنُوۡا عَلَیۡہِمۡ بُنۡیَانًا

১.অর্থ: (অতঃপর সেই সময়ও আসল) যখন লোকে তাদের সম্পর্কে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করছিল। কিছু লোক বলল, তাদের উপর সৌধ নির্মাণ করো। (সূরা কাহাফ: আয়াত নং ২১)

عَنْ جَابِرٍ، قَالَ نَهَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ تُجَصَّصَ الْقُبُورُ وَأَنْ يُكْتَبَ عَلَيْهَا وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهَا وَأَنْ تُوطَأَ

২.অর্থ: জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) কবর পাকা করতে, তার উপর কোন কিছু লিখতে ও তার উপর ঘর নির্মাণ করতে এবং কবর পদদলিত করতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৭০ সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ১০৫২ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَبِي هَيَّاجٍ الأَسَدِيِّ، قَالَ بَعَثَنِي عَلِيٌّ قَالَ لِي أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ لاَ أَدَعَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتُهُ وَلاَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتُهُ

৩.অর্থ: আবু হায়য়াজ আসদী (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আলী (রা.) আমাকে পাঠান এবং বলেনঃ আমি কি তোমাকে এমন একটি কাজের জন্য প্রেরণ করবো যে কাজের জন্য আমাকে রসূলুল্লাহ (ﷺ) পাঠান ? তা হলো আমি যেন কোন উঁচু কবর সমান করা ছাড়া এবং কোন মূর্তি ভেঙ্গে জমিনের সাথে মিশিয়ে দেওয়া ছাড়া, নিবৃত্ত না হই। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৬৯ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩২১৮ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم زَائِرَاتِ الْقُبُورِ وَالْمُتَّخِذِينَ عَلَيْهَا الْمَسَاجِدَ وَالسُّرُجَ

৪.অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (ﷺ) কবর যিয়ারতকারী মহিলাদের উপর অভিশাপ করেছেন। আর যারা কবরের উপর মসজিদ বানায় এবং বাতি জ্বালায়, তাদের উপরও তিনি অভিশাপ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩২৩৬ সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৩২০ হাদীসের মান: হাসান)

তাহকীক: সুয়ূতী (রহ.) ও আহমদ শাকের (রহ.) বলেন, এর সনদ সহীহ। শুয়াইব আরনাউত রহ ও ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন, এর সনদ হাসান। (আল জামেউস সগীর ৭২৫৮ তাখরীজুল মুসনাদ লিশাকের ৪/২০৬ তাখরীজু মুশকিল আসার ৪৭৪২ তিরমিযী ৩২০)

عَنِ الْمُطَّلِبِ، قَالَ لَمَّا مَاتَ عُثْمَانُ بْنُ مَظْعُونٍ أُخْرِجَ بِجَنَازَتِهِ فَدُفِنَ أَمَرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم رَجُلاً أَنْ يَأْتِيَهُ بِحَجَرٍ فَلَمْ يَسْتَطِعْ حَمْلَهُ فَقَامَ إِلَيْهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَحَسَرَ عَنْ ذِرَاعَيْهِ – قَالَ كَثِيرٌ قَالَ الْمُطَّلِبُ قَالَ الَّذِي يُخْبِرُنِي ذَلِكَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ – كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى بَيَاضِ ذِرَاعَىْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ حَسَرَ عَنْهُمَا ثُمَّ حَمَلَهَا فَوَضَعَهَا عِنْدَ رَأْسِهِ وَقَالَ أَتَعَلَّمُ بِهَا قَبْرَ أَخِي وَأَدْفِنُ إِلَيْهِ مَنْ مَاتَ مِنْ أَهْلِي

৫.অর্থ: মুত্তালিব (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন উছমান ইবনে মাযউন (রা.) মারা গেলেন, তখন তাঁর লাশ বের করে আনা হলো। অতঃপর দাফন করা হয়। তখন নবী (ﷺ) জনৈক ব্যক্তিকে একখণ্ড পাথর আনার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু সে তা বহন করতে অক্ষম হয়। তখন রসূলুল্লাহ (ﷺ) সেটি নিজে আনার জন্য অগ্রসর হোন এবং তাঁর দুই হাতের জামার আস্তিন গুটিয়ে ফেলেন। বর্ণনাকারী কাসীর (রহ.) বলেনঃ মুত্তালিব বললেন, যে ব্যক্তি আমার কাছে রসূলুল্লাহ (ﷺ) হতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেনঃ এ সময় আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উভয় বগলের সাদা অংশ দেখতে পাই, যখন তিনি তাঁর দুই হাতের জামার আস্তিন গুটান এবং সে পাথর বয়ে নিয়ে এসে তার (উসমান ইবনে মাযউনের) শিয়রে রাখেন। আর তিনি বলেনঃ এর দ্বারা আমি আমার ভাইয়ের কবর চিহ্নিত করছি। আমার পরিবারের কেউ মারা গেলে তার পাশে দাফন করবো। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩২০৬ হাদীসের মান: হাসান)

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَابْ
উত্তর প্রদানে- মুহাম্মাদ নাসরুল্লাহ নাফিস।
শিক্ষার্থীঃ মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শায়েখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *