ওযু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে কি ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম ! আমার জানার বিষয় হলো,অযু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে কি ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

আমাদের সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ প্রচার করছে, কুরআন অপবিত্র অবস্থায় স্পর্শ করা যাবে ! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, তাদের এই দাবির পক্ষে মনগড়া কথা ছাড়া কুরআন হাদীসের কোন দলিল প্রমাণ নেই। এর পরেও তারা এই ভিত্তিহীন কথা প্রচার করছে। কুরআন আল্লাহ তা’আলার পবিত্র কালাম। এ পবিত্র কালাম কোন অপবিত্র ব্যক্তির জন্য ধরা জায়েয নেই। এ বিধান মূলত মুসলমানদের জন্য।যেমন: নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদির বিধান মুসলমানদের জন্য। এ বিধান অমুসলিম কোন ব্যক্তি পালন নাও করতে পারে। কিন্তু মুসলমানদের জন্য এ বিধান লংঘন করার কোন সুযোগ নেই। এ বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

لَّا یَمَسُّہٗۤ اِلَّا الۡمُطَہَّرُوۡنَ ؕ

১.অর্থ: যারা পাক পবিত্র তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। (সূরা ওয়াকিয়া আয়াত: নং ৭৯)

ব্যাখ্যা: শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) উল্লেখিত আায়াত সম্পর্কে বলেন,আমাদের কাছে যে কুরআন রয়েছে এটি সেই কুরআনই যা লৌহে মাহফুযে রয়েছে। যেমন কুরআন তাই, যা কুরআনের মাঝে রয়েছে। চাই তার স্থান পাতা হোক, বা চামড়া হোক, বা পাথর হোক বা মোড়ক হোক। সুতরাং আসমানে অবস্থিত লিখিত কিতাবের হুকুম যেহেতু তা পবিত্র ছাড়া কেউ স্পর্শ করে না। জমিনে থাকা কুরআনের ক্ষেত্রে একই বিধানকে আবশ্যক করে। কেননা এ (জমিনে থাকা) কুরআনের সম্মান সে (আসমানে থাকা) কুরআনের মতই। অথবা আয়াতে কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হল ইসমে জিনস। যা কুরআনকে বুঝাচ্ছে, চাই তা আসমানে থাকুক বা জমিনে থাকুক। (শারহুল উমদাহ ৩৮৪)

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ: أَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم لعَمْرو بن حزم: أَن لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ

২.অর্থ: আমর ইবনে হাযম (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) আমর ইবনে হাযম এর কাছে, এই মর্মে চিঠি লিখেছেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া যেন কোন ব্যক্তি কুরআন স্পর্শ না করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ হাদীস নং ৪৬৫ মুয়াত্তা মালেক হাদীস নং ৪৫৫ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ عَبْدِ، اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ كَانَ يَنْهَى أَنْ يُسَافَرَ بِالْقُرْآنِ إِلَى أَرْضِ الْعَدُوِّ مَخَافَةَ أَنْ يَنَالَهُ الْعَدُوُّ

৩.অর্থ: আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ (সা.) কুরআন সাথে নিয়ে শত্রু (কাফের) দেশে সফর করতে নিষেধ করতেন। এই ভয়ে যে, কুরআন শত্রুদের (কাফেরদের) হাতে পড়বে। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৪৬৮৭ সহীহ বুখারী হাদীস নং ২৭৮২ হাদীসের মান: সহীহ)

ব্যাখ্যা: কাফেরদের হাতে কুরআন পড়লে তারা নাপাক অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করবে। এই কারণে রাসূল (সা.) কুরআন সাথে নিয়ে সফর করতে নিষেধ করতেন।

عن عبد الله بن عمر أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لا يمسُّ القرآنَ إلّا طاهرٌ

৪.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেছেন, পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। (মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং ১৫১২)

তাহকীক: আইনী (রহ.) বলেন, এর সনদ সহীহ। আলবানী (রহ.) বলেন, এর সনদ সহীহ। ইবনে মুলাককিন (রহ.) বলেন, এর সনদ জাইয়্যিদ। হায়সামী (রহ.) বলেন, এর সকল বর্ণনাকারী সিকা তথা গ্রহণযোগ্য। (উমদাতুল কারী ৩/৩৮৭, সহীহুল জামে ৭৭৮০, শারহুল বুখারী লিইবনিল মুলাককিন ৫/৩১ মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/২৮১)

َ عن أنس بن مالك…فقالتْ له أختُه: إنَّك رِجْسٌ، ولا يَمَسُّه إلّا المُطهَّرونَ، فقُمْ فاغتسِلْ أو تَوضَّأْ، فقام عُمَرُ فتَوضَّأَ، ثُمَّ أخَذَ الكتابَ فقرَأ: طه

৫.অর্থ: আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত।(ওমর রা. যখন কাফের থাকা অবস্থায়) তার বোনকে কুরআন দেখাতে বলেছিলেন, তখন তার বোন বলেছিলেন, তুমি নাপাক! আর এ গ্রন্থ পবিত্র ছাড়া কেউ স্পর্শ করতে পারে না। অতএব তুমি যাও গোসল করো অথবা অযু করো। অতঃপর ওমর (রা.) অযু করে কুরআন ধরে সূরা ত্বহা পড়লেন। (মুস্তাদরাকে হাকীম হাদীস নং ৬৮৯৭)

তাহকীক: আইনী (রহ.) বলেন, এর সনদ সহীহ মুত্তাসিল। ইমাম বায়হাকী (রহ.) বলেন, এর অনেক শাওয়াহেদ তথা প্রমাণবাহী বর্ণনা রয়েছে। আল্লামা যায়লায়ী (রহ.) বলেন, এর সনদটি জাইয়্যিদ।(উমদাতুল কারী ৩/৩৮৭, সুনানে কুবরা লিল-বায়হাকী ১/৮৮, নাসবুর রায়াহ ১/১৯৯)

উল্লেখিত কুরআনের আয়াত ও হাদীসগুলো দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, কুরআন মহান আল্লাহ তা’আলার পবিত্র বাণী। যা সর্বোচ্চ পবিত্র ও মর্যাদা সম্পন্ন। তাই কোন ব্যক্তির কুরআন স্পর্শ করতে হলে তাকে অবশ্যই দৈহিকভাবে পবিত্র হতে হবে। সুতরাং কেউ অযু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করলে তা নাজায়েয এবং গোনাহের কাজ হবে।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- আখলাকুর রহমান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *