ওযুতে ঘাড় বা গর্দান মাসাহ করার বিধান।

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম। অযুতে গর্দান মাসাহ করার বিধান কতটুকু সহীহ দলিল সম্মত জানালে উপকৃত হতাম।

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

অযুতে গর্দান বা ঘাড় মাসাহ করা কোন জরুরী বিষয় নয়। বরং এটা মুস্তাহাব তাই এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা মোটেও উচিত নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু লোক হাদীস ও বিদআতের পরিভাষা ভালো ভাবে না বুঝার কারণে এই আমলকে বিদআত বলছে। এতে নিজেরাও আমলটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পাশাপাশি সাধারণ মুসলমানদেরকেও বিভ্রান্ত করছে। গর্দান মাসাহ করা সম্পর্কে যে সমস্ত হাদীস পাওয়া যায়। সেগুলোর সনদ পর্যালোচনা করলে তা দ্বারা ফরয বা ওয়াজিব প্রমাণ করা যায় না। তবে অবশ্যই তা দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। কারণ মুস্তাহাব প্রমাণের জন্য খুব বেশি সহীহ ও সরীহ হাদীস লাগে না।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَسَحَ رَأْسَهُ بِيَدَيْهِ فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ بَدَأَ بِمُقَدَّمِ رَأْسِهِ ثُمَّ ذَهَبَ بِهِمَا إِلَى قَفَاهُ ثُمَّ رَدَّهُمَا حَتَّى رَجَعَ إِلَى الْمَكَانِ الَّذِي بَدَأَ مِنْهُ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ

১.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (ﷺ) তাঁর দুই হাত দিয়ে মাথা মাসাহ করলেন। অর্থাৎ হাত দুটি সামনে ও পিছনে নিলেন। মাথার সম্মুখ ভাগ থেকে শুরু করে হাত দুটি মাথার গর্দান পর্যন্ত নিলেন। এরপর হাত দুটি আবার যে স্থান থেকে শুরু করেছিলেন সেস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে এলেন। তারপর তাঁর দুই পা ধুইলেন। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৩২ সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৮৫ হাদীসের মান: সহীহ)

উক্ত হাদীসে মাথা মাসাহের সময় হাত টেনে গর্দান পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে, পুনরায় ফিরিয়ে আনার মধ্যে গর্দানের উপরিভাগ মাসাহ হয়ে যায়। এতে গর্দান মাসাহ করার আমলটি যে সহীহ তা প্রমাণিত হয়ে গেল।

عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: “مَنْ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ بِيَدَيْهِ عَلَى عُنُقِهِ وُقِيَ الْغُلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ”

২.অর্থ: ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অযু করে এবং উভয় হাত দিয়ে গর্দান মাসাহ করে,তাকে কিয়ামতের দিন বেড়ি পরানো থেকে মুক্ত রাখা হবে। (আত-তালখীসুল হাবীর হাদীস: নং ৯৮)

তাহকীক: ইমাম আবুল হাসান ফারেছ (রহ.) বলেছেন, ইনশাআল্লাহ হাদীসটি সহীহ।(তালখীসুল হাবীর ১/৯৩)

عن موسى بن طلحةَ قال: من مسحَ قفاهُ مع رأسهِ وُقِيَ الغلِّ يومَ القيامةِ

৩.অর্থ: মুসা ইবনে তালহা থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি মাথার সাথে গর্দানকেও মাসাহ করবে, কিয়ামতের দিন জাহান্নামের বেড়ি পরানো থেকে তাকে মুক্ত রাখা হবে। (আত-তালখীসুল হাবীর হাদীস: নং ৯৭)

তাহকীক: ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন,হাদীসটি মুরসাল। (আত-তালখীসুল হাবীর ১/১৩৫)

উপরোক্ত হাদীস-সমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় গর্দান মাসাহ করার জন্য এই হাদীসগুলোই যথেষ্ট। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম সব হাদীস যয়ীফ, এর পরেও এতে কোন সমস্যা নেই। কারণ যে গর্দান মাসাহ করবে তাকে কিয়ামতের দিন জাহান্নামের বেড়ি পরানো থেকে মুক্ত রাখা হবে। আর আমরা জানি মুহাদ্দিসদের মতে যয়ীফ হাদীস তারহীব তথা কোন কাজের প্রতি ভীতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে গ্ৰহণযোগ্য। সুতরাং আমরা মুস্তাহাব মনে করে অবশ্যই গর্দান মাসাহ করতে পারি।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- গোলাম মোস্তফা।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *