প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ! অযুতে যেসব অঙ্গ ধোয়া ফরয সেসব অঙ্গের কোন একটা অংশ অযু শেষ করার পর শুকনা দেখলে কি পুনরায় অযু করতে হবে নাকি ঐ অংশ ধুয়ে ফেললেই অযু হয়ে যাবে ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
অযুতে হাত, পা, চেহারা এই তিন অঙ্গ ধোয়া ফরয। কোন ব্যক্তি যদি অযু শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে তার এই তিন অঙ্গের কোথাও চুল পরিমাণ জায়গা শুকনো দেখতে পায়। তাহলে তার জন্য শুধু ঐ শুকনো জায়গা পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই অযু হয়ে যাবে, নতুন করে অযু না করলেও চলবে। তবে পরিপূর্ণ অযু করে নেওয়াই উত্তম।
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا قُمۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ فَاغۡسِلُوۡا وُجُوۡہَکُمۡ وَ اَیۡدِیَکُمۡ اِلَی الۡمَرَافِقِ وَ امۡسَحُوۡا بِرُءُوۡسِکُمۡ وَ اَرۡجُلَکُمۡ اِلَی الۡکَعۡبَیۡنِ ؕ
১. অর্থ: হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযে দন্ডায়মান হতে চাও, তখন (নামাযের পূর্বে) তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করো, আর মাথা মাসাহ করো এবং টাখনু পর্যন্ত পা ধৌত করো। (সূরা মায়েদা আয়াত: নং ৬)
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ غَسَلَ قَدَمَيْهِ بَعْدَ مَا جَفَّ وَضُوءُهُ
২.অর্থ: ইবনে উমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি অযুর অঙ্গসমূহ শুকিয়ে যাওয়ার পর দুই পা ধুয়েছিলেন। (ইফা. সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৪ পরিচ্ছেদ ১৮৪)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ رَجَعْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ مَكَّةَ إِلَى الْمَدِينَةِ حَتَّى إِذَا كُنَّا بِمَاءٍ بِالطَّرِيقِ تَعَجَّلَ قَوْمٌ عِنْدَ الْعَصْرِ فَتَوَضَّئُوا وَهُمْ عِجَالٌ فَانْتَهَيْنَا إِلَيْهِمْ وَأَعْقَابُهُمْ تَلُوحُ لَمْ يَمَسَّهَا الْمَاءُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” وَيْلٌ لِلأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ أَسْبِغُوا الْوُضُوءَ ”
৩.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে মক্কা থেকে মদীনার দিকে ফিরছিলাম। রাস্তায় এক জায়গায় পানি ছিল। তখন কিছু লোক আসর নামাযের সময়ে তাড়াহুড়া করল এরপর অযুও তাড়াহুড়া করে করল। অতঃপর আমরা যখন তাদের নিকট গিয়ে পৌঁছলাম, দেখলাম তাদের পায়ের গোড়ালি এমনভাবে প্রকাশ পাচ্ছে যে, তাতে পানি পৌঁছেনি। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ঐ গোড়ালিগুলোর জন্য দুর্ভোগ জাহান্নামের। অতএব তোমরা ভালোভাবে অযু করো। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৪৬৩ হাদীসের মান: সহীহ)
حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، أَنَّ رَجُلاً، جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَقَدْ تَوَضَّأَ وَتَرَكَ عَلَى قَدَمَيْهِ مِثْلَ مَوْضِعِ الظُّفْرِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” ارْجِعْ فَأَحْسِنْ وُضُوءَكَ ”
৪.অর্থ: আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত: এক ব্যক্তি অযু করে নবী (সা.) এর নিকট উপস্থিত হল। কিন্তু তার পায়ে নখ পরিমাণ জায়গা শুকনা ছিল। রসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, ফিরে যাও এবং উত্তমরূপে আবার (ঐ অংশ ধুয়ে) অযু করে এসো। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ১৭৩ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৪৬৯ হাদীসের মান: সহীহ)
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَأَى رَجُلاً يُصَلِّي وَفِي ظَهْرِ قَدَمِهِ لُمْعَةٌ قَدْرُ الدِّرْهَمِ لَمْ يُصِبْهَا الْمَاءُ فَأَمَرَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ يُعِيدَ الْوُضُوءَ وَالصَّلاَةَ
৫.অর্থ: নবী (সা.) দেখলেন, এক ব্যক্তি নামায আদায় করছে, অথচ তার পায়ের উপরিভাগে এক দিরহাম পরিমাণ স্থান শুকনো, (অযুর সময়) তাতে পানি পৌঁছেনি। নবী (সা.) তাকে পুনরায় অযু করে নামায আদায়ের নির্দেশ দিলেন। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ১৭৫ হাদীসের মান: সহীহ)
মোটকথা অযু পরিপূর্ণ করতে হলে যেসব অঙ্গ ধোয়া ফরয সেগুলো পরিপূর্ণ ভাবে ধৌত করতে হবে। নতুবা অযুও হবে না নামাযও হবে না। সাধারণত শীতকালে তাড়াহুড়া করে অযু করার কারণে অথবা অসতর্কতার কারণে অযুর কোন কোন অঙ্গ শুকনো রয়ে যায়। যদি কারো অযুর ফরয অঙ্গের মধ্যে কিছু অংশ শুকনো থেকে যায়। তাহলে দেখার সঙ্গে সঙ্গে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবে অথবা পরিপূর্ণ অযু করে নিবে।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- আব্দুল্লাহ আল আরাফ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply