প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় মুফতী সাহেব! ওয়াক্ত হওয়ার আগে আযান দিলে ঐ আযান হবে কিনা দলিলসহ জানালে খুশি হবো।
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
আযান ইসলামী শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সুতরাং যে আযানের দায়িত্বে থাকবে তার অবশ্যই নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান থাকতে হবে। যদি নামাযের ওয়াক্ত আসার পূর্বে আযান দেওয়া হয় তাহলে সেই ওয়াক্তের নামাযের জন্য ঐ আযানটি যথেষ্ট হবে না। বরং ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর পুনরায় আবার আযান দিতে হবে। কারণ আযানের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মানুষকে নামাযের ওয়াক্তের ব্যাপারে ঘোষণা দেওয়া। অতএব যদি ওয়াক্ত আসার পূর্বেই আযান দেওয়া হয় তাহলে তো সেটা মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলবে। তাই সময় হবার পর আবার আযান দিতে হবে। যদি পুনরায় আযান না দিয়ে নামায পড়া হয় তাহলে নামায আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু আযান দেওয়ার সুন্নতটি তরক হবে।
أَخْبَرَنَا نَافِعٌ، عَنْ مُؤَذِّنٍ، لِعُمَرَ يُقَالُ لَهُ مَسْرُوحٌ أَذَّنَ قَبْلَ الصُّبْحِ فَأَمَرَهُ عُمَرُ فَذَكَرَ نَحْوَهُ
১.অর্থ: নাফে (রহ.) বলেন, উমর (রা.)-এর মাসরূহ নামক এক মুয়াযযিন ছিল। একদা তিনি সুবহে সাদিকের পূর্বেই আযান দিলে উমর (রা.) তাকে (পুনরায় আযান দেওয়ার) নির্দেশ দিলেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৩৩ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ بِلاَلاً، أَذَّنَ قَبْلَ طُلُوعِ الْفَجْرِ فَأَمَرَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَرْجِعَ فَيُنَادِيَ ” أَلاَ إِنَّ الْعَبْدَ قَدْ نَامَ أَلاَ إِنَّ الْعَبْدَ قَدْ نَامَ ”
২.অর্থ: ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা বিলাল (রা.) সুবহে সাদিকের আগেই ফজরের আযান দিয়ে ফেলেছিলেন। নবী (ﷺ) তাকে পুনরায় আযান দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি তা পুনরায় দিলেন। প্রকাশ থাকে যে, বিলাল (রা.) ঘুমের কারণে আযানের সময় সম্পর্কে অমনোযোগী হয়ে পড়েছিল।(সুনানে আবু দাউদ: হাদীস নং ৫৩২ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ بِلاَلٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَهُ ” لاَ تُؤَذِّنْ حَتَّى يَسْتَبِينَ لَكَ الْفَجْرُ هَكَذَا ” . وَمَدَّ يَدَيْهِ عَرْضًا
৩.অর্থ: বিলাল (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাকে বলেছেন, দিগন্তে ফজরের আলো স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তুমি আযান দিবে না এই বলে তিনি তার উভয় হাত উত্তর ও দক্ষিণ দিকে প্রসারিত করেন। (সুনানে আবু দাউদ: হাদীস নং ৫৩৪ হাদীসের মান: হাসান)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ بِلاَلًا يُنَادِي بِلَيْلٍ، فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُنَادِيَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ»
৪.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, বিলাল (রা.) রাত থাকতে আযান দিয়ে থাকেন। কাজেই তোমরা (সাহরী) পানাহার করতে থাক; যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতূম (রা.) আযান দেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২০ হাদীসের মান: সহীহ)
উপরোক্ত হাদীস-সমূহের আলোকে আমরা বুঝতে পারলাম। ভুলবশত ওয়াক্ত হওয়ার আগে আযান দিলে আযান সহীহ হবে না। ওয়াক্ত হওয়ার পর পুনরায় আযান দিতে হবে। যদি লজ্জায় বা অন্য কোন কারণে পুনরায় আযান না দিয়ে নামায পড়া হয়। তাহলে নামাযের ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে তবে সুন্নতের খেলাফ হবে৷
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে- মো.আরিয়ান খাঁন।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply