প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম! আমার প্রশ্ন হলো, স্বামী যদি স্ত্রীকে একসাথে তিন তালাক দেয় তাহলে কয় তালাক পতিত হবে ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَد
ইসলামী শরীয়তে একসাথে তিন তালাক দেওয়ার বিধান নেই। কেউ একসাথে তিন তালাক দিলে তা হারাম ও বিদআত হবে। এরপরেও কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীকে একসাথে তিন তালাক দেয় তাহলে তিন তালাকই পতিত হবে এবং ঐ স্ত্রী তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তার মৌখিক ভাবে ফিরিয়ে আনার অথবা নতুন করে বিবাহ করার সুযোগ থাকবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত অন্যত্র বিবাহ না হবে এবং ঐ স্বামী তাকে তালাক না দিবে। ততক্ষণ পর্যন্ত পুনরায় তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয নয়। এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীগণ, মুজতাহিদ ৪ ইমামগণ ও অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম, সেই সাথে বর্তমান সৌদি আরবের নির্ভরযোগ্য সকল ওলামায়ে কেরামগণ এক মজলিসে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হয়, এক তালাক নয় মর্মে ফতোয়া দিয়েছেন। যারা বলেন একসাথে তিন তালাক দিলে এক তালাক পতিত হয় তাদের দাবি ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক। কারণ তিন কখনোই এক হয় না, তিন সর্বদাই তিন হয়। বিস্তারিত দলিল-প্রমাণ নিচে বর্ণনা করা হলো।
কুরআনের আয়াত থেকে দলিল
اَلطَّلَاقُ مَرَّتٰنِ ۪ فَاِمۡسَاکٌۢ بِمَعۡرُوۡفٍ اَوۡ تَسۡرِیۡحٌۢ بِاِحۡسَانٍ ؕ
১.অর্থ: তালাক (বেশির বেশি) দুইবার হওয়া চাই। অতঃপর (স্বামীর জন্য দু’টি পথই খোলা আছে) হয়ত নীতিসম্মতভাবে (স্ত্রীকে) রেখে দেবে (অর্থাৎ তালাক প্রত্যাহার করে নেবে), অথবা উৎকৃষ্ট পন্থায় তাকে ছেড়ে দেবে (অর্থাৎ প্রত্যাহার না করে বরং ইদ্দত শেষ করতে দেবে)। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ২২৯)
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
২.অর্থ: অতঃপর সে (স্বামী) যদি (তৃতীয়) তালাক দিয়ে দেয় তাহলে সে (তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী) সেই পুরুষের জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত হালাল হবে না। যতক্ষণ না সে অন্য কোনও স্বামীকে বিবাহ করবে। অতঃপর যদি সে (দ্বিতীয় স্বামী) তাকে তালাক দিয়ে দেয়। তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন গোনাহ নেই। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ২৩০)
ব্যাখ্যা: উক্ত আয়াত দুটি দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো, দুই তালাক পর্যন্ত স্বামী স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে পারবে। কিন্তু তিন তালাক দিলে চূড়ান্ত তিন তালাকই পতিত হবে এক তালাক নয়। এরপর উক্ত পুরুষের জন্য তার স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে।
রাসূল (ﷺ) এর থেকে দলিল
عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الرَّجُلِ يُطَلِّقُ امْرَأَتَهُ ثَلَاثًا فَيَتَزَوَّجُهَا الرَّجُلُ فَيُغْلِقُ الْبَابَ وَيُرْخِي السِّتْرَ ثُمَّ يُطَلِّقُهَا قَبْلَ أَنْ يَدْخُلَ بِهَا قَالَ لَا تَحِلُّ لِلْأَوَّلِ حَتَّى يُجَامِعَهَا الْآخَرُ
১.অর্থ: ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর নিকট এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, যে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিল। পরে অন্য এক ব্যক্তি তাকে বিবাহ করলো। সে দরজা বন্ধ করে পর্দা ঝুলিয়ে দিল। এরপর তার সাথে সহবাস করার পূর্বে তাকে তালাক দিল। নবী (ﷺ) বললেনঃ সে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না। যতক্ষণ না দ্বিতীয় স্বামী তার সাথে সহবাস করে। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫২৬৪ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৩৪১৫ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১৯৩৩ হাদীসের মান সহীহ)
أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، أَخْبَرَنِي ابْنُ شِهَابٍ، عَنِ الْمُتَلاَعِنَيْنِ، وَعَنِ السُّنَّةِ، فِيهِمَا عَنْ حَدِيثِ، سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ أَخِي بَنِي سَاعِدَةَ أَنَّ رَجُلاً، مِنَ الأَنْصَارِ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ رَجُلاً وَجَدَ مَعَ امْرَأَتِهِ رَجُلاً وَذَكَرَ الْحَدِيثَ بِقِصَّتِهِ . وَزَادَ فِيهِ فَتَلاَعَنَا فِي الْمَسْجِدِ وَأَنَا شَاهِدٌ . وَقَالَ فِي الْحَدِيثِ فَطَلَّقَهَا ثَلاَثًا قَبْلَ أَنْ يَأْمُرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . فَفَارَقَهَا عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم “ ذَاكُمُ التَّفْرِيقُ بَيْنَ كُلِّ مُتَلاَعِنَيْنِ ” .
২.অর্থ: ইবনু জুরায়জ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে ইবনে শিহাব (রহ.) বনী সা’ইদাহ গোত্রের ইবনে সা’দ বর্ণিত দুইজন লি’আনকারী ও তার বিধান সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তিনি (সাহল) বলেন, জনৈক আনসারী নবী (ﷺ) এর কাছে এলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! যদি কোন লোক তার স্ত্রীর সঙ্গে (ব্যভিচাররত) অন্য কোন পুরুষকে দেখতে পায় তাহলে সে সম্পর্কে আপনার মতামত কী? এরপর পুরো ঘটনাসহ হাদীস বর্ণনা করেন।
এতে বাড়তি বর্ণনা করেন যে, (স্বামী-স্ত্রী) উভয়ে মসজিদের ভেতরে লি’আন করল আর আমি উপস্থিত ছিলাম। আর তিনি এ হাদীসে বলেছেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে কোন নির্দেশ দেওয়ার পূর্বেই তিনি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে নবী (ﷺ) এর সম্মুখেই তাকে আলাদা করে দেন। তখন নবী (ﷺ) বললেন, এ উভয়ই লি’আনকারীর মাঝখানে বিচ্ছেদ। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫২৫৯ হাদীসের মান: সহীহ)
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীস দ্বারা বিশেষভাবে প্রমাণিত হলো যে, রাসূল (ﷺ) জীবিত থাকা অবস্থাতেই এক মজলিসে একসাথে তিন তালাককে চূড়ান্ত তালাক হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ أَنَّهُ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ تَطْلِيقَةً وَهِيَ حَائِضٌ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يُتْبِعَهَا بِتَطْلِيقَتَيْنِ أُخْرَاوَيْنِ عِنْدَ الْقُرْئَيْنِ فَبَلَغَ ذَلِكَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَقَالَ: «يَا ابْنَ عُمَرَ مَا هَكَذَا أَمَرَكَ اللَّهُ إِنَّكَ قَدْ أَخْطَأْتَ السُّنَّةَ، وَالسُّنَّةُ أَنْ تَسْتَقْبِلَ الطُّهْرُ فَيُطَلِّقَ لِكُلِّ قُرُوءٍ» , قَالَ: فَأَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَاجَعْتُهَا , ثُمَّ قَالَ: «إِذَا هِيَ طَهُرَتْ فَطَلِّقْ عِنْدَ ذَلِكَ أَوْ أَمْسِكْ» , فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ رَأَيْتَ لَوْ أَنِّي طَلَّقْتُهَا ثَلَاثًا كَانَ يَحِلُّ لِي أَنْ أُرَاجِعَهَا؟ , قَالَ: «لَا كَانَتْ تَبِينُ مِنْكَ وَتَكُونُ مَعْصِيَةً
৩.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) তার স্ত্রীকে ঋতুবতী অবস্থায় এক তালাক প্রদান করেন। এরপর তিনি ইচ্ছা করেন যে পরবর্তী দুই পবিত্রতায় তাকে বাকি দুই তালাক প্রদান করবেন। বিষয়টি নবী (ﷺ) এর কাছে পৌঁছায়। তখন তিনি বলেন, হে ইবন উমর, আল্লাহ এভাবে নির্দেশ দেননি। তুমি সুন্নতের বিপরীত কাজ করেছো। তালাকের সুন্নত হলো, তুমি স্ত্রীর পবিত্রতার জন্য অপেক্ষা করবে এবং প্রত্যেক পবিত্রতায় একবার তালাক দিবে। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নির্দেশ মোতাবেক আমি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিলাম। অতঃপর তিনি আমাকে বলেন, যখন তোমার স্ত্রী ঋতুবতী হবে এবং এরপর পবিত্র হবে তখন চাইলে তুমি তালাকও দিতে পারবে বা তাকে নিজের কাছে রাখতে পারবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি তাকে তিন তালাক প্রদান করতাম তাহলে কি আর ফিরিয়ে নিতে পারতাম? তিনি বলেন, না। সেক্ষেত্রে সে স্থায়ীভাবে তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত এবং এভাবে তালাক দেওয়া গোনাহ হতো। (সুনানে দারাকুতনী হাদীস নং ৩৯৭৪ সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫২৫২ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ২১৭৯)
তাহকীক: ইবনে কুদামাহ (রহ.) বলেন, এই হাদীসের সনদ সহীহ। ইবনে মুলাক্কিন (রহ.) বলেন, এর সনদ জাইয়্যেদ। (আল-মুগনী ইবনে কুদামাহ ১০/৩২৮ শারহুল বুখারী ইবনে মুলাক্কিন ২৫/১৮৮)
عَنْ عَامِرٍ الشَّعْبِيِّ قَالَ قُلْتُ لِفَاطِمَةَ بِنْتِ قَيْسٍ حَدِّثِينِي عَنْ طَلَاقِكِ قَالَتْ طَلَّقَنِي زَوْجِي ثَلَاثًا وَهُوَ خَارِجٌ إِلَى الْيَمَنِ فَأَجَازَ ذَلِكَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
৪.অর্থ: আমির শা’বী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ফাতিমা বিনতে কায়াসকে বলেছিলামঃ তোমার তালাকের ঘটনাটি আমাকে বলতো। সে বলল আমার স্বামী ইয়েমেন যাবার প্রাক্কালে আমাকে তিন তালাক দিয়েছিল। রসূলুল্লাহ (ﷺ) এটাকে বৈধ গণ্য করে ছিলেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ২০২৪ হাদীসের মান: সহীহ)
أَنَّ عَائِشَةَ، أَخْبَرَتْهُ: أَنَّ امْرَأَةَ رِفَاعَةَ القُرَظِيِّ جَاءَتْ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ رِفَاعَةَ طَلَّقَنِي فَبَتَّ طَلاَقِي، وَإِنِّي نَكَحْتُ بَعْدَهُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الزَّبِيرِ القُرَظِيَّ، وَإِنَّمَا مَعَهُ مِثْلُ الهُدْبَةِ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَعَلَّكِ تُرِيدِينَ أَنْ تَرْجِعِي إِلَى رِفَاعَةَ؟ لاَ، حَتَّى يَذُوقَ عُسَيْلَتَكِ وَتَذُوقِي عُسَيْلَتَهُ»
৫.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রিফা’আ কুরাযীর স্ত্রী রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! রিফা’আ আমাকে পূর্ণ সম্পর্কচ্ছেদের (তিন) তালাক দিয়েছে। পরে আমি আব্দুর রহমান ইবনে যুবাইর কুরাযীকে বিবাহ করি। কিন্তু তার কাছে রয়েছে কাপড়ের আঁচললের মত নরম কিছু (অর্থাৎ পুরুষত্ব নেই)। রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন সম্ভবতঃ তুমি রিফা’আর নিকট ফিরে যেতে ইচ্ছা করছো। কিন্তু তা তো সম্ভব নয়, যতক্ষণ না সে তোমার স্বাদ গ্রহণ করে এবং তুমি তার স্বাদ গ্রহণ করো। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৬০ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৩৪০৯ হাদীসের মান: সহীহ)
ব্যাখ্যা: উক্ত পাঁচটি হাদীস ছাড়াও অসংখ্য হাদীস রয়েছে যেগুলো দ্বারা স্পষ্ট হয়। রাসূল (ﷺ) এর যুগেও সহবাস পরবর্তী একসাথে এবং পৃথক পৃথক তিন তালাককে চূড়ান্ত তালাক তথা তিন তালাক হিসেবেই ধরা হতো।
সাহাবায়ে কেরাম থেকে দলিল
أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ إِنِّي طَلَّقْتُ امْرَأَتِي مِائَةَ تَطْلِيقَةٍ فَمَاذَا تَرَى عَلَيَّ فَقَالَ لَهُ ابْنُ عَبَّاسٍ طَلُقَتْ مِنْكَ لِثَلَاثٍ وَسَبْعٌ وَتِسْعُونَ اتَّخَذْتَ بِهَا آيَاتِ اللَّهِ هُزُوًا
১.অর্থ: এক ব্যক্তি ইবনে আব্বাস (রা.) এর নিকট জিজ্ঞাসা করল আমি আমার স্ত্রীকে একশত তালাক দিয়েছি। আমার সম্পর্কে এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী ? তখন ইবনে আব্বাস (রা.) তাকে বললেন, তুমি যা দিয়েছ তা থেকে তিন তালাক তোমার স্ত্রীর উপর পতিত হয়েছে। আর অবশিষ্ট সাতানব্বই তালাকের মাধ্যমে তুমি আল্লাহর আয়াতকে উপহাস করেছো। (মুয়াত্তা মালেক হাদীস নং ১১৫৭ হাদীসের মান: সহীহ)
তাহকীক: শুয়াইব আরনাউত (রহ.) বলেন, এর বর্ণনাকারীগণ নিরবিচ্ছিন্ন এবং নির্ভরযোগ্য। আলবানী (রহ.) বলেন, এই হাদীসের সনদ সহীহ। (তাখরীজু শারহুস সুন্নাহ ৯/২১৪ হিদায়াতুর রুওয়া ৩২২৮)
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِيَاسٍ، أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ، وَأَبَا، هُرَيْرَةَ وَعَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ سُئِلُوا عَنِ الْبِكْرِ، يُطَلِّقُهَا زَوْجُهَا ثَلاَثًا فَكُلُّهُمْ قَالُوا لاَ تَحِلُّ لَهُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ
২.অর্থ: মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াস (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ইবনে আব্বাস, আবু হুরায়রা ও আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.)-কে ঐ কুমারী স্ত্রীলোক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, যাকে তার স্বামী তিন তালাক প্রদান করেছে। এর জবাবে তাঁরা সকলেই বলেন, ঐ স্ত্রী তার জন্য ততক্ষণ হালাল হবে না, যতক্ষণ না তাকে অন্য স্বামীর সাথে বিবাহ দেয়া হয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২১৯৮ হাদীসের মান: সহীহ)
وَقَالَ اللَّيْثُ حَدَّثَنِي نَافِعٌ قَالَ كَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا سُئِلَ عَمَّنْ طَلَّقَ ثَلاَثًا قَالَ لَوْ طَلَّقْتَ مَرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ فَإِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَمَرَنِي بِهٰذَا فَإِنْ طَلَّقْتَهَا ثَلاَثًا حَرُمَتْ حَتّٰى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَكَ
৩.অর্থ: লাইস (রহ.) নাফে (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন, ইবনে উমর (রা.) এর কাছে এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া (রুজু করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো। তখন তিনি বলেন যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে রুজু (তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা) করতে পারো। কারণ রসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে। যতক্ষণ না সে স্ত্রী তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামীকে বিয়ে করে। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫২৬৪ হাদীসের মান: সহীহ)
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসগুলো দ্বারাও জানতে পারলাম আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সহ অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের মতেও একসাথে তিন তালাক দিলে চূড়ান্ত তালাক হয়ে স্ত্রী চিরতরে হারাম হয়ে যাবে।
উম্মতের ইজমা থেকে দলিল
১. হাফেয ইবনে রজব (রহ.) বলেন, জেনে রাখো! কোন সাহাবা, কোন তাবেঈ ও সালফে সালেহীনের মধ্যে যাদের কথা হালাল-হারাম ও ফতোয়ার ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য হয়। তাদের কারো থেকে এ ধরনের সুস্পষ্ট কথা বর্ণিত হয়নি যে, স্বামী তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়ার পর একসাথে তিন তালাক দিলে এক তালাক ধরা হবে। (ইলাউস সুনান: ৭/৭১০)
২.ইবনে তাইমিয়া রহ. (যিনি এক তালাকের প্রবক্তা) বলেন, একসাথে তিন তালাক দিলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে এবং তিন তালাকপ্রাপ্ত হয়ে যাবে। এটা ইমাম মালেক, ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম আহমাদের শেষ উক্তি এবং অধিকাংশ সাহাবা ও তাবেঈ থেকে বর্ণিত। (ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়াহ: ১৭/৮)
সৌদী আলেমদের সর্বসম্মত ফতোয়া
লাজনাতুত দায়িমা লিল বুহুস ওয়াল ইফতা পরিষদ সৌদী আরব কর্তৃক নির্বাচিত ‘এক শব্দে তিন তালাক’ বিষয়ে গবেষণা কর্মে দায়িত্বরত শীর্ষ আলেমদের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত গবেষণাপত্র ও এ বিষয়ে গভীর অধ্যয়ন, প্রতিটি উক্তির বাছ বিচার ও তার পক্ষে-বিপক্ষে উপস্থাপিত সকল প্রশ্নের উত্তর উত্থাপিত হওয়ার পর অধিকাংশ ওলামায়ে কিরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিষদ এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়। এক শব্দে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হবে। (মাজাল্লাতুল বুহুসিল ইসলামিয়্যা, প্রথম খন্ড, তৃতীয় সংখ্যা, ১৩৯৭ হিজরী)
একসাথে তিন তালাক দিলে এক তালাক হয় দাবিদারদের দলিলের অসারতা।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : طَلَّقَ رُكَانَةُ بْنُ عَبْدِ يَزِيدَ أَخُو بَنِي الْمُطَّلِبِ امْرَأَتَهُ ثَلَاثًا فِي مَجْلِسٍ وَاحِدٍ، فَحَزِنَ عَلَيْهَا حُزْنًا شَدِيدًا. قَالَ : فَسَأَلَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” كَيْفَ طَلَّقْتَهَا ؟ ” قَالَ : طَلَّقْتُهَا ثَلَاثًا. قَالَ : فَقَالَ : ” فِي مَجْلِسٍ وَاحِدٍ ؟ ” قَالَ : نَعَمْ. قَالَ : ” فَإِنَّمَا تِلْكَ وَاحِدَةٌ، فَارْجِعْهَا إِنْ شِئْتَ ”
১.অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত রুকানা (রা.) তার স্ত্রীকে এক মজলিসে তিন তালাক দিলেন। তারপরে তিনি খুব মর্মাহত হলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি কীভাবে তালাক দিয়েছো? তিনি বললেন, আমি তিন তালাক দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন, এক মজলিসে দিয়েছো ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূল (ﷺ) বললেন, এটা এক তালাক, যদি চাও তাহলে তাকে ফিরিয়ে নাও। (মুসনাদে আহমাদ: হাদীস নং ২৩৮৭)
তাহকীক: শুয়াইব আরনাউত রহ বলেন হাদীসটি যয়ীফ, ইবনুল জাওযী রহ. বলেন, হাদীসটি সহীহ নয়, যাহাবী রহ. ইবনে আব্দুল বার রহ. ও ইবনুল বাত্তাল রহ. বলেছেন হাদীসটি মুনকার। (তাখরীজুল মুসনাদ লিশুয়াইব ২৩৮৭, আল-ইলাল মুতানাহিয়া ২/৬৪০, তালখীসুল ইলাল মুতানাহিয়া ২১৬, আল-ইসতিসকার ৫/১১ শারহুল বুখারী ইবনুল বাত্তাল ৭/৩৯১)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ طَلَّقَ عَبْدُ يَزِيدَ – أَبُو رُكَانَةَ وَإِخْوَتِهِ – أُمَّ رُكَانَةَ وَنَكَحَ امْرَأَةً مِنْ مُزَيْنَةَ فَجَاءَتِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ مَا يُغْنِي عَنِّي إِلاَّ كَمَا تُغْنِي هَذِهِ الشَّعْرَةُ . لِشَعْرَةٍ أَخَذَتْهَا مِنْ رَأْسِهَا فَفَرِّقْ بَيْنِي وَبَيْنَهُ فَأَخَذَتِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم حَمِيَّةٌ فَدَعَا بِرُكَانَةَ وَإِخْوَتِهِ ثُمَّ قَالَ لِجُلَسَائِهِ ” أَتَرَوْنَ فُلاَنًا يُشْبِهُ مِنْهُ كَذَا وَكَذَا مِنْ عَبْدِ يَزِيدَ وَفُلاَنًا يُشْبِهُ مِنْهُ – كَذَا وَكَذَا ” . قَالُوا نَعَمْ . قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِعَبْدِ يَزِيدَ ” طَلِّقْهَا ” . فَفَعَلَ ثُمَّ قَالَ ” رَاجِعِ امْرَأَتَكَ أُمَّ رُكَانَةَ وَإِخْوَتِهِ ” . فَقَالَ إِنِّي طَلَّقْتُهَا ثَلاَثًا يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ ” قَدْ عَلِمْتُ رَاجِعْهَا ” . وَتَلاَ ( يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ )
২.অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রুকানার পিতা আব্দু ইয়াযীদ উম্মে রুকানাকে তালাক প্রদান করেন এবং মুযায়না গোত্রের জনৈক স্ত্রীলোক কে বিবাহ করেন। সেই মহিলা নবী করীম (ﷺ) এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বলে, সে সহবাসে অক্ষম, যেমন আমার মাথার চুল অন্য চুলের কোন উপকারে আসে না। কাজেই আপনি তার ও আমার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিন। এটা শুনে নবী করীম (ﷺ) রাগান্বিত হন এবং তিনি রুকানা ও তার ভাইদিগকে আহবান করেন। এরপর তিনি সেখানে উপস্থিত করে সাথীদের সম্বোধন করে বলেন, তোমরা লক্ষ্য করে দেখ যে, এদের মধ্যে অমুক অমুকের বিশেষ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাদের পিতা আব্দু ইয়াযীদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঙ্গে কি মিল খাচ্ছে না? তখন তারা বলেন, হ্যাঁ।
নবী করীম (ﷺ) আব্দু ইয়াযীদকে বলেন, তুমি তাকে (দ্বিতীয় স্ত্রীকে) তালাক দিয়ে দাও। তিনি তাকে তালাক দিলেন। এরপর তিনি তাকে নির্দেশ দেন যে, তুমি (প্রথম স্ত্রী অর্থাৎ) উম্মে রুকানাকে পুনরায় গ্রহণ কর। তখন তিনি বলেন, আমি তো তাকে তিন তালাক প্রদান করেছি, হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বলেন আমি তোমার তালাক প্রদানের কথা অবগত আছি। তুমি তাকে পুনরায় গ্রহণ কর। এরপর তিনি কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেন, হে নবী! যখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের তালাক প্রদান করবে, তখন তাদেরকে ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিবে। সূরা আত-তলাক: আয়াত নং ১। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২১৯৬)
তাহকীক: ইবনুল হাযম রহ. বলেন, হাদীসটি যয়ীফ, ইমাম আহমদ রহ. বলেন, এই হাদীসের সবগুলোতেই দুর্বলতা রয়েছে, শুয়াইব আরনাউত রহ. বলেন হাদীসটি যয়ীফ, খাতাবী রহ. বলেন এর সনদে অভিযোগ রয়েছে তাই দলিলযোগ্য নয়। (আল-মাহাল্লী ১০/৬০ মুখতাসার সুনানে আবু দাউদ ২/৫১ তাখরীজু যাদুল মা’আদ ৫/১৬৪ মায়ালিমুস সুনান ৩/২০৩)
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস দুটি যয়ীফ তাই দলিলযোগ্য নয়। তর্কের খাতিরে যদি সহীহও ধরে নেয় এরপরেও এই হাদীস দুটি দিয়ে একসাথে তিন তালাক দিলে এক তালাক পতিত হওয়ার দলিল দেওয়া যাবে না। কেননা হাদীসে বর্ণিত ঘটনা ছিল সূরা বাকারার ২২৯ ও ২৩০ নং আয়াত নাযীলের পূর্বের সময়কার। অতএব ঐ হুকুমটি রহিত হয়ে গেছে।
عَنِ ابْنِ طَاوُسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ كَانَ الطَّلاَقُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبِي بَكْرٍ وَسَنَتَيْنِ مِنْ خِلاَفَةِ عُمَرَ طَلاَقُ الثَّلاَثِ وَاحِدَةً فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ إِنَّ النَّاسَ قَدِ اسْتَعْجَلُوا فِي أَمْرٍ قَدْ كَانَتْ لَهُمْ فِيهِ أَنَاةٌ فَلَوْ أَمْضَيْنَاهُ عَلَيْهِمْ . فَأَمْضَاهُ عَلَيْهِمْ
৩.অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে এবং আবু বকর (রা.) এর যুগে ও উমর (রা.) এর খিলাফতের প্রথম দুই বছর (অন্য বর্ণনায় তিন বছর) পর্যন্ত তিন তালাক এক তালাক সাব্যস্ত হত। পরে উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বললেন, লোকেরা এমন বিষয়ে তাড়াহুড়া করছে, যে বিষয়ে তাদের অবকাশ ছিল। এখন যদি বিষয়টি তাদের জন্য কার্যকর সাব্যস্ত করে দেই …(তবে তাই কল্যাণকর হবে)। সুতরাং তিনি তা তাদের জন্য বাস্তবায়িত ও কার্যকর সাব্যস্ত করলেন (অর্থাৎ তিন তালাকে পরিণত করেন)। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫৪১,৩৫৪৩, সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস নং ২২০০)
জবাব: ক. হাফেয আবু যুরআহ (রহ.) বলেন, এ হাদীসের অর্থ হলো, বর্তমানে লোকদের একসাথে তিন তালাক দেয়ার যে প্রচলন দেখা যাচ্ছে, তা রাসূল (ﷺ) এর যুগে, আবু বকর (রা.) এর যুগে ও খিলাফতে উমর (রা.) এর প্রথম দুই বছরে ছিল না। তখন মানুষেরা সুন্নত তরীকায় তিন তুহুরে তিন তালাক দিতেন। (সুনানে বাইহাকী: ১৪৯৮৪)
জবাব: খ. এ হাদীস একটি বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন যদি কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বলতো, তুমি তালাক, তুমি তালাক, তুমি তালাক এবং বিচারকের সামনে দাবি করতো যে, দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার বলে প্রথমটির তাকীদ করা আমার উদ্দেশ্য ছিলো; ভিন্ন তালাক উদ্দেশ্য ছিলো না। তাহলে বিচারক তার দাবি কবুল করতেন এবং তার কথাকে বিশ্বাস করে এক তালাকের ফতোয়া দিতেন। কিন্তু উমর (রা.) এর যুগে মানুষজন বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের দ্বীনদারী কমতে থাকে। তখন উমর (রা.) বিচার ব্যবস্থায় এ ধরনের দাবি কবুল না করার আইন কার্যকর করেন এবং ঐ শব্দ দ্বারা তার বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য নেন। তথা তিন তালাক হওয়ার ফতোয়া কার্যকর করেন। (তাকমিলাহ: ১/১১৪, ফাতহুল বারী: ৯/৪৫৬)
যদি তাই না হতো এবং উমর (রা.) এর এ সিদ্ধান্ত শরীয়তে মুহাম্মদীর বিপরীত হতো। তাহলে ইবনে আব্বাস (রা.) সহ সকল সাহাবায়ে কেরাম কখনোই তা মেনে নিতেন না। যেমন- উম্মে ওলাদকে বিক্রি করা, এক দিনারকে দুই দিনারের মাধ্যমে বিক্রি করা এবং হজ্জে তামাত্তু এর মাসয়ালায় ইবনে আব্বাস (রা.) স্পষ্ট ভাষায় উমর (রা.) এর বিরোধিতা করেছেন। (আহসানুল ফতোয়া: ৫/৩৬৯)
জবাব: গ.আর যদি হাদীসের অর্থ এই হয় যে, এক সাথে তিন তালাক দিলে বর্তমানে তিন তালাক ধরা হবে, অথচ রাসূল (ﷺ) এর যুগে, আবু বকর (রা.) এর যুগে ও খিলাফতে উমর (রা.) এর প্রথম দুই বছর তা এক তালাক ধরা হতো। তাহলে এর উত্তর হলো: এ বিষয়ের তিনটি হাদীস, তিনটিই ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। অথচ তার ফতোয়া হলো, একসাথে বা এক মজলিসে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই হয়ে যায়। যার দলিল উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। আর ইয়াহইয়া বিন মাঈন, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান, আহমদ বিন হাম্বল ও আলী ইবনুল মাদীনীর মতো বড় বড় মুহাদ্দিসীনের মত হলো, যখন কোনো রাবী তার হাদীসের বিপরীত আমল করেন বা ফতোয়া দেন। তখন তার বর্ণিত হাদীসটি আমলযোগ্য থাকে না। সুতরাং ইবনে আব্বাস (রা.) এর হাদীস তিনটি আমলের যোগ্য নয়; বিভিন্ন আপত্তির কারণে তা অগ্রহণযোগ্য। (ইলাউস সুনান: ৭/৭১৬)
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মো. রুহুল আমিন।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শায়েখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply