এক মসজিদে একাধিক নামাযের জামাত করা যাবে কি ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম ! এক মসজিদে একাধিক নামাযের জামাত করা যাবে কি ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

এক মসজিদে একই সময়ে একাধিক জামাত করা নাজায়েয। কেননা এতে করে প্রথম জামাতের গুরুত্ব আর অবশিষ্ট থাকে না। অবশ্য মসজিদ ছোট হওয়ার কারণে জায়গা সংকুলান না হলে এবং অন্য মসজিদে জামাত না হওয়ার ধারণা নিশ্চিত হলে। কিংবা মসজিদে নির্দিষ্ট ইমাম না থাকলে অথবা পথের ধারে বা হাট-বাজারে মসজিদ হলে যেখানে একেরপর এক লোকজন এসে নামায পড়তে থাকে। তাহলে সেখানে জামাত শেষ হওয়ার পরও ইকামত দিয়ে একাধিক জামাত করা জায়েয আছে। এ ছাড়াও কারো যদি বিশেষ কোন কারণে জামাত ছুটে যায়। তাহলে সেও মসজিদে এসে অন্য লোক পেলে, তাদের সাথে নিয়ে জামাতের ফযীলত লাভের জন্য, মসজিদের বারান্দায় বা একপাশে ইকামত দিয়ে জামাত করতে পারবে।

عَنْ أبي بَكْرَة رَضِيَ الله عَنْهُ أنّ رسولَ اللهِ ﷺ أقبلَ من نواحي المدينةِ يريدُ الصَّلاةَ فوجدَ النّاسَ قد صلَّوا فمالَ إلى منزلهِ فجمعَ أهلَهُ فصلّى بهم.

অর্থ: আবু বাকরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসূল (সা.) মদীনার উপকণ্ঠ থেকে ফিরে এলেন। এমতাবস্থায় তিনি নামায পড়তে চাইলেন অথচ লোকেরা (সাহাবীগণ) সবেমাত্র জামাত শেষ করেছে। তখন তিনি ঘরে ফিরে গেলেন এবং বাড়ির লোকদের একত্র করে জামাতে নামায পড়ালেন। (আল মু’জামুল আওসাত তাবারানী: হাদীস নং ৪৬০১ হাদীসের মান: সহীহ)

তাহকীক: হায়সামী (রহ.) বলেন, এই হাদীসটির বর্ণনাকারীগণ নির্ভরশীল। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ২/৪৮)

قَالَ سَمِعْتُ أُبَىَّ بْنَ كَعْبٍ، يَقُولُ صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا صَلاَةَ الصُّبْحِ فَقَالَ ” أَشَهِدَ فُلاَنٌ الصَّلاَةَ ” . قَالُوا لاَ . قَالَ ” فَفُلاَنٌ ” . قَالُوا لاَ . قَالَ ” إِنَّ هَاتَيْنِ الصَّلاَتَيْنِ مِنْ أَثْقَلِ الصَّلاَةِ عَلَى الْمُنَافِقِينَ وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا وَالصَّفُّ الأَوَّلُ عَلَى مِثْلِ صَفِّ الْمَلاَئِكَةِ وَلَوْ تَعْلَمُونَ فَضِيلَتَهُ لاَبْتَدَرْتُمُوهُ وَصَلاَةُ الرَّجُلِ مَعَ الرَّجُلِ أَزْكَى مِنْ صَلاَتِهِ وَحْدَهُ وَصَلاَةُ الرَّجُلِ مَعَ الرَّجُلَيْنِ أَزْكَى مِنْ صَلاَتِهِ مَعَ الرَّجُلِ وَمَا كَانُوا أَكْثَرَ فَهُوَ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ ”

অর্থ: উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফজরের নামায আদায় করলেন। পরে তিনি বললেন, অমুক কি নামাযে উপস্থিত হয়েছে? উপস্থিত মুসল্লীগণ বললেন, না। তিনি বললেনঃ অমুক ব্যক্তি? তাঁরা বললেন, না। তিনি বললেন, এ দুটি নামায (ইশা ও ফজর) মুনাফিকদের উপর অত্যন্ত কঠিন। তাতে কি মর্যাদা রয়েছে তারা যদি তা জানতো তাহলে নিশ্চয়ই তারা তাতে উপস্থিত হতো হামাগুড়ি দিয়ে হলেও। আর প্রথম সারি হলো ফেরেশতাদের সারির ন্যায়। যদি তোমরা তার মর্যাদা জানতে তাহলে তোমরা তাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করতে। একজন লোকের সাথে নামায আদায় করা একাকী নামায আদায় করা থেকে উত্তম। আর দুইজন লোকের সাথে কোন ব্যক্তির নামায আদায় করা এক ব্যক্তির সাথে নামায আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর সংখ্যা যতই বৃদ্ধি পাবে ততই আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় হবে। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৫৫৪ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৮৪৪ হাদীসের মান: হাসান)

মোটকথা কোন ওজরে জামাত ছুটে গেলে আর লোকজন বেশি হলে, মহল্লার মসজিদে একাধিক জামাত করতে কোন অসুবিধা নেই। আর যেখানে একেরপর এক লোকজন আসে। যেমন: রাস্তা-ঘাট, বাজার, টার্মিনাল, মার্কেট, বিমানবন্দর ইত্যাদি স্থানের মসজিদে লোকজন বেশি না হলেও একাধিক জামাত করা জায়েয আছে।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মো. সালাহ উদ্দিন
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *