প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম!কেউ চায়লে কি এক অযু দিয়ে একাধিক ওয়াক্তের নামায আদায় করতে পারবে ? নাকি প্রত্যেক নামাযের জন্য নতুন করে অযু করতে হবে ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
নামায আদায় করার জন্য অযু করা ফরয। কিন্তু অযু থাকা সত্ত্বেও প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাযের জন্য নতুন করে অযু করা ফরয নয়। যারা মনে করেন প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য অযু করা জরুরী তাদের ধারণা ঠিক নয়। তবে প্রত্যেক নামাযের জন্য নতুন করে অযু করা মুস্তাহাব এবং ফযীলতপূর্ণ। কেউ চায়লে এক অযু দিয়ে একাধিক ওয়াক্তের নামাযও আদায় করতে পারবে।
عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَتَوَضَّأُ لِكُلِّ صَلاَةٍ فَلَمَّا كَانَ عَامُ الْفَتْحِ صَلَّى الصَّلَوَاتِ كُلَّهَا بِوُضُوءٍ وَاحِدٍ وَمَسَحَ عَلَى خُفَّيْهِ . فَقَالَ عُمَرُ إِنَّكَ فَعَلْتَ شَيْئًا لَمْ تَكُنْ فَعَلْتَهُ . قَالَ عَمْدًا فَعَلْتُهُ
১.অর্থ: বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) প্রতি ওয়াক্তের নামাযের জন্য নতুনভাবে অযু করতেন। তিনি মক্কা বিজয়ের দিন একই অযু দিয়ে সব ওয়াক্তের নামায আদায় করলেন এবং মোজার উপর মাসাহ করলেন। উমর (রা.) বললেন, আপনি আজ এমন একটি কাজ করলেন যা ইতিপূর্বে কখনো করেননি। নবী (সা.) বলেন, আমি ইচ্ছা করেই এ রকম করেছি। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৬১ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫৩৫ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَتَوَضَّأُ لِكُلِّ صَلاَةٍ وَكُنَّا نَحْنُ نُصَلِّي الصَّلَوَاتِ كُلَّهَا بِوُضُوءٍ وَاحِدٍ .
২. অর্থ: আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি ওয়াক্তের নামাযের জন্য অযু করতেন এবং আমরা (সাহাবাগণ) একই অযুতে কয়েক ওয়াক্তের নামায পড়তাম। (ইফা. সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৫০৯ সহীহ বুখারী হাদীস নং ২১৪ হাদীসের মান: সহীহ)
قَالَ أَخْبَرَنِي سُوَيْدُ بْنُ النُّعْمَانِ، قَالَ خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَامَ خَيْبَرَ، حَتَّى إِذَا كُنَّا بِالصَّهْبَاءِ، صَلَّى لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْعَصْرَ، فَلَمَّا صَلَّى دَعَا بِالأَطْعِمَةِ، فَلَمْ يُؤْتَ إِلاَّ بِالسَّوِيقِ، فَأَكَلْنَا وَشَرِبْنَا، ثُمَّ قَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَى الْمَغْرِبِ فَمَضْمَضَ، ثُمَّ صَلَّى لَنَا الْمَغْرِبَ وَلَمْ يَتَوَضَّأْ
৩.অর্থ: সুওয়াইদ ইবনে নুমান (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধের বছর আমরা নবী (সা.) এর সাথে বের হলাম। সাহ্বা নামক স্থানে পৌঁছে নবী (সা.) আমাদের নিয়ে আসরের নামায আদায় করলেন। নামায শেষে তিনি খাবার আনতে বললেন। ছাতু ব্যতীত আর কিছুই আনা হল না। আমরা তা খেলাম এবং পান করলাম। অতঃপর নবী (সা.) মাগরিবের জন্য দাঁড়ালেন, অতঃপর কুলি করলেন, এরপর আমাদের নিয়ে মাগরিবের নামায আদায় করলেন অথচ তিনি (নতুন) অযু করলেন না। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ২১৫ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ১৮৬ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ مَنْ تَوَضَّأَ عَلَى طُهْرٍ كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِهِ عَشْرَ حَسَنَاتٍ
৪.অর্থ: ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অযু থাকা সত্ত্বেও অযু করবে আল্লাহ তা’আলা তার জন্য দশটি নেকী লিখবেন। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৫৯ হাদীসের মান: যঈফ)
উল্লেখিত হাদীসটি যঈফ হওয়া সত্ত্বেও এর উপর আমল করা যাবে। কারণ সকল গ্ৰহণযোগ্য মুহাদ্দিসদের মতে ফযীলতের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীসের উপর আমল করা যায়। (আল ফাতহুল মুবিন ৩২ আল আজভিবাহ ৪২)
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ
৫.অর্থ: উসমান ইবনে আফফান (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অযু করে এবং তা উত্তমরূপে করে, তার দেহ থেকে সমুদয় গোনাহ বের হয়ে যায়, এমন কি তার নখের ভিতর থেকেও (গোনাহ) বের হয়ে যায়। (ইফা. সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭১ হাদীসের মান: সহীহ)
উপরোক্ত হাদীসগুলো দ্বারা এটাই প্রতিয়মান হয় যে,এক অযুতে একাধিক ওয়াক্ত নামায যেমন পড়া যায়। তেমনিভাবে প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য অযু ভঙ্গ না হলেও নতুনভাবে অযু করা যায়। এতে কোন বাঁধা নিষেধ নেই। তবে কোন সমস্যা না থাকলে প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য নতুনভাবে অযু করাই উত্তম। কেননা এতে অযুর মাধ্যমে অনেক সওয়াব অর্জিত হয় এবং গোনাহ মাফ হয়।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- আব্দুল কাইয়ুম।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply