একই নামায দুইবার পড়া যায় কি ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম ! মুফতী সাহেব! একই নামায দুইবার পড়া যাবে কি ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

একই নামায দ্বিতীয়বার পড়া জায়েয নয়। অবশ্য কোন অসুবিধার কারণে বাসায় নামায পড়ে যদি কোন প্রয়োজনে মসজিদে এসে দেখে জামাত চলছে। অথবা এক মসজিদে নামায পড়ে যদি আরেক মসজিদে এসে দেখে জামাত চলছে। তাহলে জামাতের ফযীলত লাভের আশায় নামাযে শরীক হতে পারবে, তবে এটা নফল হিসেবে গণ্য হবে। উল্লেখ্য, শুধুমাত্র যোহর এবং ইশার ফরয নামায একবার আদায় করার পর দ্বিতীয়বার জামাতের সাথে আদায় করা যায়। আর ফজর, আসর এবং মাগরিবের নামায একবার আদায় করার পর দ্বিতীয়বার আদায় করা যায় না। কেননা ফজর এবং আসরের ফরয নামাযের পর নফল পড়া নিষেধ। আর মাগরিবের ফরয নামায যেহেতু তিন রাকাত তাই আদায় করা যাবে না। কারণ নফল তিন রাকাত বিশিষ্ট হয় না।

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ، – يَعْنِي مَوْلَى مَيْمُونَةَ – قَالَ أَتَيْتُ ابْنَ عُمَرَ عَلَى الْبَلاَطِ وَهُمْ يُصَلُّونَ فَقُلْتُ أَلاَ تُصَلِّي مَعَهُمْ قَالَ قَدْ صَلَّيْتُ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” لاَ تُصَلُّوا صَلاَةً فِي يَوْمٍ مَرَّتَيْنِ ”

১.অর্থ: সুলাইমান (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর (রা.) এর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে মদীনার নিকটবর্তী বালাত নামক স্থানে আসি। আমি তাদেরকে নামাযেরত পাই। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, আপনি কেন তাদের তাদের সাথে নামায আদায় করছেন না ? তিনি বলেন, আমি ইতিপূর্বে জামাতে নামায আদায় করেছি। আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে বলতে শুনেছি, তোমরা একই ফরয নামায একই দিনে দুইবার আদায় করো না (অর্থাৎ একই নামায ফরয হিসেবে দুইবার আদায় করা যাবে না, বরং পরবর্তী নামাযটি নফল হিসাবে আদায় করা যেতে পারে)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৭৯ হাদীসের মান: হাসান)

حَدَّثَنَا جَابِرُ بْنُ يَزِيدَ بْنِ الأَسْوَدِ الْعَامِرِيُّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ شَهِدْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حَجَّتَهُ فَصَلَّيْتُ مَعَهُ صَلاَةَ الصُّبْحِ فِي مَسْجِدِ الْخَيْفِ . قَالَ فَلَمَّا قَضَى صَلاَتَهُ وَانْحَرَفَ إِذَا هُوَ بِرَجُلَيْنِ فِي أُخْرَى الْقَوْمِ لَمْ يُصَلِّيَا مَعَهُ فَقَالَ ” عَلَىَّ بِهِمَا ” . فَجِيءَ بِهِمَا تُرْعَدُ فَرَائِصُهُمَا فَقَالَ ” مَا مَنَعَكُمَا أَنْ تُصَلِّيَا مَعَنَا ” . فَقَالاَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا كُنَّا قَدْ صَلَّيْنَا فِي رِحَالِنَا . قَالَ فَلاَ تَفْعَلاَ إِذَا صَلَّيْتُمَا فِي رِحَالِكُمَا ثُمَّ أَتَيْتُمَا مَسْجِدَ جَمَاعَةٍ فَصَلِّيَا مَعَهُمْ فَإِنَّهَا لَكُمَا نَافِلَةٌ ”

২.অর্থ: ইয়াযীদ ইবনে আসওয়াদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) এর সঙ্গে আমি হজ্বে হাযির ছিলাম। তাঁর সঙ্গে মসজিদে খায়ফে ফজরের নামায আদায় করলাম। নামায শেষে তিনি পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখলেন জামাতের শেষ প্রান্তে দুইজন লোক বসে আছে। যারা তার সঙ্গে (জামাতে) নামায আদায় করেনি। তাদের দেখে তিনি বললেন, তাদেরকে আমার নিকট নিয়ে এসো। তাদের এ অবস্থায়ই রসূলের নিকট হাজির করা হলো। ভয়ে তখন তাদের কাধের গোশত থরথর করে কাঁপছিল। রসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে প্রশ্ন করলেন। আমাদের সঙ্গে নামায আদায় করতে তোমাদেরকে কে বাঁধা দিয়েছে? তারা বলল, হে আল্লাহর রসূল। আমরা আমাদের বাড়িতে নামায আদায় করে এসেছি। রসূলুল্লাহ (সা.) এ কথা শুনে বললেন ভবিষ্যতে এ কাজ আর করবে না। তোমরা ঘরে নামায আদায় করে আসার পরও মসজিদে এসে জামাত চলছে দেখলে জামাতে নামায আদায় করে নিবে। এ নামায তোমাদের জন্যে নফল হয়ে যাবে। (সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ২১৯ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৫৭৫ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ ” كَيْفَ أَنْتَ إِذَا كَانَتْ عَلَيْكَ أُمَرَاءُ يُؤَخِّرُونَ الصَّلاَةَ عَنْ وَقْتِهَا أَوْ يُمِيتُونَ الصَّلاَةَ عَنْ وَقْتِهَا ” . قَالَ قُلْتُ فَمَا تَأْمُرُنِي قَالَ ” صَلِّ الصَّلاَةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ أَدْرَكْتَهَا مَعَهُمْ فَصَلِّ فَإِنَّهَا لَكَ نَافِلَةٌ ”

৩.অর্থ: আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বললেন, যখন তোমার উপর এমন সব আমীর হবেন, যারা নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্বে নামায আদায় করবে অথবা নামাযের সময় ফওত করে নামায আদায় করবে তখন তুমি কী করবে? আবু যর (রা.) বলেন, আমি বললাম, আপনি আমাকে কী করতে বলেন? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি নামায যথা সময়ে আদায় করে নিবে। তারপর তাদের সঙ্গে যদি পাও তবে তুমি আবার আদায় করে নিবে এবং তা হবে তোমার জন্য নফল। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৩৪০ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ نَافِعٍ قَالَ: إِنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يَقُولُ: مَنْ صَلَّى الْمَغْرِبَ أَوِ الصُّبْحَ ثُمَّ أَدْرَكَهُمَا مَعَ الْإِمَامِ فَلَا يَعُدْ لَهما

৪.অর্থ: নাফে (রহ.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলতেন, যে লোক মাগরিবের অথবা ফজরের নামায একা একা আদায় করে নিয়েছে। এরপর (অন্যত্র) ইমামকে ঐ নামায জামাতে আদায় করা অবস্থায় পায় তাহলে সে যেন দ্বিতীয়বার এই নামায আদায় না করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ হাদীস নং ১১৫৮ মুয়াত্তা ইমাম মালেক হাদীস নং ২৯২ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ صَلاَتَيْنِ بَعْدَ الْفَجْرِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، وَبَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ

৫.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) দুই সময়ে নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন। ফজরের পর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫৮৮ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৭৯৩ হাদীসের মান: সহীহ)

উপরোক্ত হাদীসগুলোর আলোকে আমরা জানতে পারলাম। সাধারণত একই নামায দুইবার পড়া নাজায়েয। তবে কোন কারণে কোথাও নামায পড়ে মসজিদে এসে জামাত পেলে তাতে শরীক হতে পারবে। এক্ষেত্রে প্রথম বারের নামায ফরয হিসেবে ও দ্বিতীয় বারের নামায নফল হিসেবে গণ্য হবে। তবে ফজর, আসর এবং মাগরিবের নামায একবার আদায় করার পর দ্বিতীয়বার আদায় করা যায় না।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- নুর আহমাদ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *