উটের গোশত খেলে কি ওযু ভেঙ্গে যায় ?

প্রশ্নঃ

আসসালাম আলাইকুম ! প্রিয় মুফতী সাহেব আশাকরি ভালো আছেন। আমার প্রশ্ন হলো উটের গোশত খেলে কি অযু ভেঙ্গে যায় ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

কেউ যদি কোন হারাম বস্তু খায় তবুও অযু নষ্ট হয় না কিন্তু সে গোনাহগার হয়। আর উটের গোশত তো হালাল, সুতরাং এখানে অযু নষ্ট হওয়ার প্রশ্নই আসে না। যেমনিভাবে গরু ছাগলের গোশত খাওয়ার কারণে অযু ভঙ্গ হয় না, অনুরূপভাবে উটের গোশত খাওয়ার কারণেও অযু ভঙ্গ হবে না। এটাই যুক্তির দাবি এবং অধিকাংশ ইসলামী বিশেষজ্ঞগণের মতামত।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَكَلَ عَرْقًا أَوْ لَحْمًا ثُمَّ صَلَّى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ وَلَمْ يَمَسَّ مَاءً

১.অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ (ﷺ) একবার হাড়ে লাগানো গোশত অথবা শুধু গোশত খেলেন। তারপর অযু ও পানি স্পর্শ করা ছাড়াই নামায আদায় করলেন। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৬৮২ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّهُ سَأَلَهُ عَنِ الْوُضُوءِ مِمَّا مَسَّتِ النَّارُ، فَقَالَ لاَ قَدْ كُنَّا زَمَانَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لاَ نَجِدُ مِثْلَ ذَلِكَ مِنَ الطَّعَامِ إِلاَّ قَلِيلاً، فَإِذَا نَحْنُ وَجَدْنَاهُ لَمْ يَكُنْ لَنَا مَنَادِيلُ، إِلاَّ أَكُفَّنَا وَسَوَاعِدَنَا وَأَقْدَامَنَا، ثُمَّ نُصَلِّي وَلاَ نَتَوَضَّأُ

২.অর্থ: জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। আগুনে স্পর্শ বস্তু খাওয়ার পর অযু করা সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, না, অযু করতে হবে না। নবী (ﷺ) এর যুগে তো আমরা এমন খাদ্য কমই পেতাম। যখন আমরা তা পেতাম তখন আমাদের তো হাতের তালু, হাত ও পা ছাড়া কোন রুমাল ছিল না (আমরা এগুলোতে মুছে ফেলতাম)। তারপর (নতুন) অযু না করেই আমরা নামায আদায় করতাম। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫০৬২ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ تَعَرَّقَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَتِفًا، ثُمَّ قَامَ فَصَلَّى، وَلَمْ يَتَوَضَّأْ

৩.অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একটি স্কন্ধের গোশত দাঁত দিয়ে ছিড়ে খেলেন। তারপর তিনি উঠে গিয়ে (নতুনভাবে) অযু না করেই নামায আদায় করলেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫০১২ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ جَابِرٍ، قَالَ كَانَ آخِرُ الأَمْرَيْنِ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَرْكَ الْوُضُوءِ مِمَّا غَيَّرَتِ النَّارُ

৪.অর্থ: জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ্ (ﷺ) এর দুইটি কাজের সর্বশেষ কাজ এই ছিল যে, তিনি রান্না করা খাদ্য আহারের পর অযু করা পরিত্যাগ করেন। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস ১৯২ হাদীসের মান: সহীহ)

উক্ত হাদীসগুলো দ্বারা প্রমাণিত হলো, আগুনে পাকানো খাদ্য খাওয়ার দ্বারা অযু নষ্ট হয় না। সুতরাং উটের গোশত যেহেতু আগুনে পাকানো খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত সেহেতু উটের গোশত খাওয়ার ফলেও অযু নষ্ট হবে না। রাসূল (সা.) এর প্রাথমিক আমল ছিল, আগুনে যা স্পর্শ করেছে তা খাওয়ার পর অযু করতেন। চাই উটের গোশত হোক অথবা বকরির গোশত। পরবর্তীতে তিনি আগুনে স্পর্শ করা যে কোন খাদ্য খেয়ে অযু করতেন না। এমনকি রান্না করা গোশত খেয়েও অযু করতেন না। সুতরাং উটের গোশত খেলে অযু ভঙ্গ হবে না তা বলাই বাহুল্য।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মুহাম্মদ মাকসুদ আলম।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *