ইস্তিনজায় টিস্যু ও পানি উভয়টি ব্যবহারের বিধান। 

 

 প্রশ্নঃ

 

আসসালামু আলাইকুম! আমি অনেক আলেমের মুখে শুনেছি পেশাব পায়খানা করার পর প্রথমে ঢিলা-কুলুখ বা টিস্যু ব্যবহার করে পরে পানি ব্যবহার করা উত্তম। কিন্তু কয়েকটি বইয়ের মধ্যে পড়লাম “পানি ব্যবহারের পূর্বে ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করা ঠিক নয়”। এখন আমি উল্লেখিত বইগুলোর কথা মানবো নাকি আলেমদের কথা মানবো বুঝতে পারছি না। অনুগ্ৰহ করে দলিলসহ সঠিক বিষয়টি জানালে খুব খুশি হতাম।

 

উত্তরঃ

 

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ 

حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

 

পবিত্রতার ক্ষেত্রে মূল বিষয় হল,নাপাকী দূর করা। নাপাকী দূরিকরণটা টিস্যু বা ঢিলা-কুলুখের মাধ্যমেও হতে পারে, আবার পানির মাধ্যমেও হতে পারে। তবে প্রথমে টিস্যু বা ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করে এরপর পানি ব্যবহার করা উত্তম। বিশেষ করে পায়খানা করার পর এমনটি করা অধিক উত্তম। যারা বলে ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের পর পানি ব্যবহার করা ভিত্তিহীন এবং এ সম্পর্কিত হাদীস মিথ্যা বানোয়াট। আসলে এটা তাদের অজ্ঞতা এবং সম্পূর্ণ মনগড়া বক্তব্য। কারণ 

এ সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে।

 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، رضى الله عنه أَنَّهُ كَانَ يَحْمِلُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِدَاوَةً لِوَضُوئِهِ وَحَاجَتِهِ، فَبَيْنَمَا هُوَ يَتْبَعُهُ بِهَا فَقَالَ ” مَنْ هَذَا “. فَقَالَ أَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ. فَقَالَ ” ابْغِنِي أَحْجَارًا أَسْتَنْفِضْ بِهَا، وَلاَ تَأْتِنِي بِعَظْمٍ وَلاَ بِرَوْثَةٍ “. فَأَتَيْتُهُ بِأَحْجَارٍ أَحْمِلُهَا فِي طَرَفِ ثَوْبِي حَتَّى وَضَعْتُ إِلَى جَنْبِهِ ثُمَّ انْصَرَفْتُ، حَتَّى إِذَا فَرَغَ مَشَيْتُ، فَقُلْتُ مَا بَالُ الْعَظْمِ وَالرَّوْثَةِ قَالَ ” هُمَا مِنْ طَعَامِ الْجِنِّ

 

১.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে, তিনি নবী (সা.) এর অযু ও ইস্তিনজার কাজে ব্যবহারের জন্য পানি ভর্তি একটি পাত্র নিয়ে পিছনে পিছনে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তিনি তাকিয়ে বললেন কে ? আমি বললাম, আমি আবু হুরায়রা। তিনি বললেন, আমাকে কয়েকটি পাথর তালাশ করে দাও। আমি তা দিয়ে ইস্তিনজা করব। তবে, হাড় এবং গোবর আনবে না। আমি আমার কাপড়ের কিনারায় কয়েকটি পাথর এনে তাঁর কাছে রেখে দিলাম এবং আমি সেখান থেকে কিছুটা দূরে সরে গেলাম। তিনি যখন ইস্তিনজা শেষ করলেন, তখন আমি এগিয়ে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হাড় ও গোবরের ব্যাপার কি? তিনি বললেন, এগুলো জ্বিনের খাবার। (ইফা.সহীহ বুখারী হাদীস নং ৩৫৮১ হাদীসের মান: সহীহ)

 

উক্ত হাদীস থেকে জানা গেল পানি ও ঢিলা একত্রে ব্যবহার করা অতি উত্তম। কেননা তাতে বেশি পবিত্রতা অর্জন হয়। এই কারণেই আবু হুরায়রা (রা.) পানি আনার পরেও রাসূল (সা.) আবার ঢিলা আনতে বললেন। যাতে পানি ও ঢিলা উভয়টি একত্রে ব্যবহার করতে পারেন। 

 

قَالَ عَلِيٌّ: إِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَبْعَرُونَ بَعْرًا وَإِنَّكُمْ تَثْلِطُونَ ثَلْطًا فَأَتْبِعُوا الْحِجَارَةَ بِالْمَاءِ

 

২.অর্থ: আলী (রা.) বলেছেন, তোমাদের পূর্বের লোকেরা পশুর মত (শক্ত) মল ত্যাগ করতো। আর তোমরা পাখির মত (নরম) মল ত্যাগ করো। তাই তোমরা ঢিলা ব্যবহারের পর পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস নং ১৬৪৫ সুনানে কুবরা লিল-বায়হাকী হাদীস নং ৫১৭ হাদীসের মান: হাসান)

 

তাহকীক: হাফেয যায়লায়ী (রহ.) এ আছার সম্পর্কে বলেন, এটি জায়্যিদ (হাসান স্তরের) বর্ণনা। ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, এর সনদ হাসান। ইউসুফ বিন্নূরী (রহ.) বলেন, এটি জায়্যিদ বর্ণনা। (নাসবুর রায়াহ ১/২১৯, আদ দিরায়াহ ১/৯৭, মাআরিফুস সুনান ১/১৩৩)

 

أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، أَنَّ هَذِهِ الآيَةَ، نَزَلَتْ ‏(فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ)‏ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏”‏ يَا مَعْشَرَ الأَنْصَارِ إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَثْنَى عَلَيْكُمْ فِي الطُّهُورِ فَمَا طُهُورُكُمْ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا نَتَوَضَّأُ لِلصَّلاَةِ وَنَغْتَسِلُ مِنَ الْجَنَابَةِ وَنَسْتَنْجِي بِالْمَاءِ ‏.‏ قَالَ ‏هُوَ ذَلِكَ فَعَلَيْكُمُوهُ ‏

 

৩.অর্থ: আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত,এই আয়াতটি নাযিল হলে (অনুবাদ): সেখানে 

এমন লোকও আছে যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন (সূরা তাওবা ১০৮)। রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে আনসার সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের পবিত্রতা অর্জনের ব্যাপারে প্রশংসা করেছেন। তোমরা কীভাবে পবিত্রতা অর্জন করো? তারা বলেন, আমরা নামাযের জন্য অযু করি, জানাবাতের (শারীরিক অপবিত্রতা দূরীকরণের) জন্য গোসল করি এবং (শৌচাগার থেকে বের হলে) পানি দিয়ে ইস্তিনজা করি। রাসূল (সা.) বলেন,এটাই (প্রশংসার) কারণ। অতএব তোমরা এটাকে গুরুত্বের সাথে ধরে রাখবে। (ইফা. সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৩৫৫ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৪৪ হাদীসের মান: সহীহ)

 

লক্ষ করুন, যে পবিত্রতার জন্য আল্লাহ তা’আলা কোবার সাহাবীগণের প্রশংসা করেছেন তা হল, 

তারা শৌচাগার থেকে বের হয়ে পানি দ্বারা ইস্তিনজা করতেন। বলাই বাহুল্য যে, পেশাব-পায়খানার পর ঢিলা ব্যবহার না করে কেউ শৌচাগার থেকে বের হয় না। সুতরাং এই হাদীস দ্বারাও ঢিলা নেওয়ার পর পানি ব্যবহার করা যে উত্তম তা প্রমাণিত হলো।

 

قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا خَرَجَ لِحَاجَتِهِ تَبِعْتُهُ أَنَا وَغُلاَمٌ وَمَعَنَا عُكَّازَةٌ أَوْ عَصًا أَوْ عَنَزَةٌ وَمَعَنَا إِدَاوَةٌ، فَإِذَا فَرَغَ مِنْ حَاجَتِهِ نَاوَلْنَاهُ الإِدَاوَةَ.قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا تَبَرَّزَ لِحَاجَتِهِ أَتَيْتُهُ بِمَاءٍ فَيَغْسِلُ بِهِ

 

৪.অর্থ: আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, নবী (সা.) যখন প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রের হতেন, তখন আমি ও একজন বালক তাঁর পিছনে যেতাম। আর আমাদের সাথে থাকতো একটা লাঠি বা একটা ছড়ি অথবা একটা ছোট বর্শা, আরো থাকতো একটা পানির পাত্র। তিনি তাঁর প্রয়োজন হতে ফারেগ হলে আমরা তাঁকে পানির পাত্রটি দিতাম। অপর বর্ণনায় আছে, আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, আল্লাহর রসূল (সা.) প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হলে আমি তাঁর নিকট পানি নিয়ে যেতাম। তিনি তা দিয়ে শৌচকার্য করতেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৪৭৬ ও ২১৭ হাদীসের মান: সহীহ)

 

এ হাদীসের প্রথম বর্ণনা থেকে বুঝে আসে, রাসূল (সা.) প্রাকৃতিক প্রয়োজনের জন্য শৌচাগারে দাখেল হলে আনাস (রা.) ও আরেকজন বালক সাহাবী বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতেন। তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন থেকে ফারেগ হয়ে তাদের কাছে আসলে তারা পানির পাত্রটি এগিয়ে দিতেন। আর দ্বিতীয় বর্ণনা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, রাসূল (সা.) সে পানি দিয়ে শৌচকার্য করতেন। বলাই বাহুল্য যে, তিনি ঢিলা ব্যবহার না করে তাদের কাছে আসতেন না। সুতরাং এ হাদীস প্রমাণ করে যে, রাসূল (সা.) ঢিলা নেওয়ার পর পানি দ্বারা ইস্তিনজা করতেন। 

 

এ সমস্ত সহীহ হাদীসের আলোকেই ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, প্রথমে ঢিলা-কুলুখ বা টিস্যু ব্যবহার করে এরপর পানি ব্যবহার করা উত্তম। 

অবশ্য ঢিলা-কুলুখ বা টিস্যু দ্বারা পুরোপুরি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন হলে এরপর পানি ব্যবহার না করলেও চলবে। কারণ এটা জরুরী নয় তবে উত্তম এতে কোন সন্দেহ নেই।

 

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب

উত্তর লিখনে- যোবায়ের আহমদ।

শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার। 

উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল। 

পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার। 

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *