ইস্তিনজায় কয়টি ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করতে হবে ? 

 

 

 প্রশ্নঃ

 

আসসালামু আলাইকুম!পেশাব পায়খানা থেকে পরিষ্কার হতে যতগুলো ঢিলা কুলুখ প্রয়োজন ততগুলো ব্যবহার করা যাবে। নাকি বেজোড় সংখ্যক ঢিলা কুলুখই ব্যবহার করতে হবে ?

 

উত্তরঃ 

 

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

 

পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। পবিত্রতা ছাড়া নামায কবুল হয় না। তাই ইসলামী শরীয়তে পেশাব পায়খানা থেকে ভালোভাবে পবিত্র হওয়ার জন্য ঢিলা কুলুখ ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর এ ঢিলা কুলুখ বেজোড় সংখ্যায় ব্যবহার করা উত্তম। তবে বেজোড় সংখ্যায় পাওয়া না গেলে অথবা জোড় সংখ্যায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অর্জন হয়ে গেলে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। কারণ ঢিলা কুলুখ ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে পবিত্রতা অর্জন করা। তাই পবিত্র হতে যতগুলো প্রয়োজন ততোগুলো ব্যবহার করা যাবে এতে কোন অসুবিধা নেই। 

 

أَبُو إِدْرِيسَ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ” مَنْ تَوَضَّأَ فَلْيَسْتَنْثِرْ، وَمَنِ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوتِرْ “

 

১.অর্থ: আবু ইদরিস (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বলতে শুনেছেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অযু করে সে যেন নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করে। আর যে ইস্তিনজা করে সে যেন বেজোড় সংখ্যক ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করে। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৬০ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৪৫৩ হাদীসের মান: সহীহ) 

 

عَنْ سَلْمَانَ، قَالَ قَالَ لَنَا الْمُشْرِكُونَ إِنِّي أَرَى صَاحِبَكُمْ يُعَلِّمُكُمْ حَتَّى يُعَلِّمَكُمُ الْخِرَاءَةَ ‏.‏ فَقَالَ أَجَلْ إِنَّهُ نَهَانَا أَنْ يَسْتَنْجِيَ أَحَدُنَا بِيَمِينِهِ أَوْ يَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ وَنَهَى عَنِ الرَّوْثِ وَالْعِظَامِ وَقَالَ ‏ “‏ لاَ يَسْتَنْجِي أَحَدُكُمْ بِدُونِ ثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ ‏”‏

 

২.অর্থ: সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুশরিকরা একবার আমাকে বলল, আমরা দেখছি তোমাদের সঙ্গী (রাসূল সা.) তোমাদেরকে সব কাজই শিক্ষা দেন এমনকি পেশাব পায়খানার নিয়ম নীতিও তোমাদেরকে শিক্ষা দেন! (জবাবে) তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেন ডান হাতে ইস্তিনজা করতে, (ইস্তিনজার সময়) কিবলামুখী হয়ে বসতে এবং তিনি আমাদেরকে আরো নিষেধ করেছেন গোবর অথবা হাড় দিয়ে ইস্তিনজা করতে। তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন তিনটি ঢিলার কম দিয়ে ইস্তিনজা না করে। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫০০ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اكْتَحَلَ فَلْيُوتِرْ مَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ أَحْسَنَ وَمَنْ لَا فَلَا حَرَجَ مَنْ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوتِرْ مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ وَمَنْ لَا فَلَا حَرَجَ

 

৩.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সুরমা ব্যবহার করে, সে যেন বেজোড় সংখ্যায় ব্যবহার করে, যে ব্যক্তি এরূপ (বেজোড় সংখ্যায় ব্যবহার) করে, সে উত্তম (কাজ) করে, আর যে এরূপ (বেজোড় সংখ্যায় ব্যবহার) না করে, তাতে কোন ক্ষতি নেই। যে ব্যক্তি কুলুখ ব্যবহার করে, সে যেনো বেজোড় সংখ্যায় ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি এরূপ (বেজোড় সংখ্যায় ব্যবহার) করে, সে উত্তম (কাজ) করে, আর যে এরূপ (বেজোড় সংখ্যায় ব্যবহার) না করে, তাতে কোন ক্ষতি নেই। (সুনানে দারেমী হাদীস নং ৬৮৫ হাদীসের মান: হাসান)

 

عَبْدَ اللَّهِ، يَقُولُ أَتَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْغَائِطَ، فَأَمَرَنِي أَنْ آتِيَهُ بِثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ، فَوَجَدْتُ حَجَرَيْنِ، وَالْتَمَسْتُ الثَّالِثَ فَلَمْ أَجِدْهُ، فَأَخَذْتُ رَوْثَةً، فَأَتَيْتُهُ بِهَا، فَأَخَذَ الْحَجَرَيْنِ وَأَلْقَى الرَّوْثَةَ وَقَالَ ” هَذَا رِكْسٌ “

 

৪.অর্থ: আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) একবার টয়লেটে যাবার সময় তিনটি পাথর কুড়িয়ে দিতে আমাকে আদেশ দিলেন। তখন আমি দু’টি পাথর পেলাম এবং তৃতীয়টির জন্য খোঁজাখুঁজি করলাম কিন্তু পেলাম না। তাই একখণ্ড শুকনো গোবর নিয়ে তাঁর কাছে গেলাম। তিনি পাথর দু’টি নিলেন এবং গোবর খণ্ড ফেলে দিয়ে বললেন, এটা নাপাক। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৫৬ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৩১৪ হাদীসের মান: সহীহ)

 

উপরোক্ত হাদীসগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় তিনটি ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করা উত্তম। অবশ্য রাসূল (সা.) তিনটি না পাওয়ায় দুইটিও ব্যবহার করেছেন। তাই এতে জোড় বেজোড়ের বাধ্য বাধকতা নেই। তবে বেজোড় সংখ্যক ব্যবহার করাই উত্তম। যেহেতু রাসূল (সা.) নিজে বেজোড় ব্যবহার করেছেন এবং উম্মতকে ব্যবহার করতে বলেছেন। 

 

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب

উত্তর প্রদানে- মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।

পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার। 

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *