প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই। ইশার ফরয নামাযে কোন কিরাত পড়া সুন্নত ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
স্বাভাবিক অবস্থায় ইশার ফরয নামাযে আওসাতে মুফাসসাল (মধ্যম কিরাত) সূরা তরিক থেকে সূরা বাইয়্যিনা পর্যন্ত, এর মধ্য থেকে যে কোন সূরা পাঠ করা সুন্নত। তবে উক্ত সূরাগুলো ছাড়াও মাঝে মধ্যে মুসল্লীদের প্রতি লক্ষ্য করে কুরআনের যে কোন স্থান থেকেও পড়া যায়।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ مَا صَلَّيْتُ وَرَاءَ أَحَدٍ أَشْبَهَ صَلاَةً بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ فُلاَنٍ . قَالَ سُلَيْمَانُ كَانَ يُطِيلُ الرَّكْعَتَيْنِ الأُولَيَيْنِ مِنَ الظُّهْرِ وَيُخَفِّفُ الأُخْرَيَيْنِ وَيُخَفِّفُ الْعَصْرَ وَيَقْرَأُ فِي الْمَغْرِبِ بِقِصَارِ الْمُفَصَّلِ وَيَقْرَأُ فِي الْعِشَاءِ بِوَسَطِ الْمُفَصَّلِ وَيَقْرَأُ فِي الصُّبْحِ بِطُوَلِ الْمُفَصَّلِ
১.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নামাযের সাথে অমুকের চেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ নামায আর কারও পেছনে আদায় করিনি। সূলাইমান (রা.) বলেন, তিনি যোহরের প্রথম দুই রাকাত লম্বা করতেন, শেষের দুই রাকাত সংক্ষিপ্ত করতেন। আর আসরের নামায সংক্ষিপ্ত করতেন। আর মাগরিবের নামায কিসারে মুফাসসাল দ্বারা আদায় করতেন। আর ইশার নামায আওসাতে মুফাসসাল দ্বারা আদায় করতেন। আর ভোরের নামায অথাৎ ফজর তিওয়ালে মুফাসসাল দ্বারা আদায় করতেন। (সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৯৮২ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ جَابِرٍ، أَنَّهُ قَالَ صَلَّى مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ الأَنْصَارِيُّ لأَصْحَابِهِ الْعِشَاءَ فَطَوَّلَ عَلَيْهِمْ فَانْصَرَفَ رَجُلٌ مِنَّا فَصَلَّى فَأُخْبِرَ مُعَاذٌ عَنْهُ فَقَالَ إِنَّهُ مُنَافِقٌ . فَلَمَّا بَلَغَ ذَلِكَ الرَّجُلَ دَخَلَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرَهُ مَا قَالَ مُعَاذٌ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” أَتُرِيدُ أَنْ تَكُونَ فَتَّانًا يَا مُعَاذُ إِذَا أَمَمْتَ النَّاسَ فَاقْرَأْ بِالشَّمْسِ وَضُحَاهَا . وَسَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى . وَاقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ . وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى ”
২.অর্থ: জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, মুয়ায ইবনে জাবাল আল আনসারী (রা.) তার গোত্রের লোকদের নিয়ে ইশার নামায আদায় করলেন। তিনি কিরাত খুবই দীর্ঘ করলেন। ফলে আমাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি (নামায ছেড়ে দিয়ে) চলে গেল এবং একাকী নামায আদায় করল। তার সম্পর্কে মুয়াযকে অবহিত করা হলে তিনি বললেন, সে তো মুনাফিক। লোকটি যখন এ কথা জানল সে সরাসরি রাসূল (ﷺ) এর কাছে চলে গেল এবং মুয়ায (রা.) যা বলেছেন তা তাকে জানাল। রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন, হে মুয়ায! তুমি কি ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টিকারী হতে চাও? তুমি যখন লোকেদের ইমামতি করবে তখন সূরা শামস, সূরা আ’লা, সূরা আলাক এবং সূরা লাইল পাঠ করবে। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৪৬৫ হাদীসের মান: সহীহ )
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقْرَأُ فِي صَلاَةِ الْعِشَاءِ الآخِرَةِ بِالشَّمْسِ وَضُحَاهَا وَأَشْبَاهِهَا مِنَ السُّوَرِ
৩.অর্থ: বুরায়দা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইশার নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে ওয়াশশামসি ওয়াদদূহাহা বা এ জাতীয় অন্যান্য সূরা পাঠ করতেন। (সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৯৯৯ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৩০৯ হাদীসের মান: সহীহ)
سَمِعَ البَرَاءَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ” يَقْرَأُ: وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ فِي العِشَاءِ، وَمَا سَمِعْتُ أَحَدًا أَحْسَنَ صَوْتًا مِنْهُ أَوْ قِرَاءَةً ”
৪.অর্থ: বারাআ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) কে ইশার নামাযে অততীনি ওয়ায যায়তুন পড়তে শুনেছি। আমি তাঁর চাইতে সুন্দর কন্ঠ অথবা সুন্দর কিরাত শুনিনি। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭৬৯ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৪৬৪ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَبِي رَافِعٍ، قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ أَبِي هُرَيْرَةَ العَتَمَةَ، فَقَرَأَ: إِذَا السَّمَاءُ انْشَقَّتْ، فَسَجَدَ، فَقُلْتُ لَهُ: قَالَ: «سَجَدْتُ خَلْفَ أَبِي القَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلاَ أَزَالُ أَسْجُدُ بِهَا حَتَّى أَلْقَاهُ»
৫.অর্থ: আবু রাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আবু হুরায়রা (রা.) এর সঙ্গে ইশার নামায আদায় করলাম। সেদিন তিনি ইজাস সামা উনশাক্কত সূরাটি তিলাওয়াত করে সিজদা করলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি আবুল কাসিম (ﷺ) এর পিছনে এ সিজদা করেছি, তাই তাঁর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ সূরায় সিজদা করব। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭৬৬ হাদীসের মান: সহীহ)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা জানতে পারলাম যে,
ইশার ফরয নামাযে সূরা ফাতিহার পর আওসাতে মুফাসসাল অর্থাৎ সূরা তরিক থেকে সূরা বাইয়্যিনা পর্যন্ত পড়া সুন্নত। এছাড়া কুরআনের যে কোন জায়গা থেকেও তিলাওয়াত করা যায়। কিন্তু বড় কোন সূরা পড়তে হলে অবশ্যই মুসল্লীদের হালত বিবেচনা করা জরুরী।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- কাজী রফিকুর রহমান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply