প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! হযরত ইশার নামায মোট কয় রাকাত দলিলসহ জানালে উপকৃত হবো ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
ইশার নামায মোট ১৭ রাকাত। প্রথমে ৪ রাকাত সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা, অতঃপর ৪ রাকাত ফরয, অতঃপর ২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা, তারপর ২ রাকাত নফল, এরপর ৩ রাকাত বিতের, সর্বশেষ ২ রাকাত নফল। এর মাঝে ফরযের পূর্বের চার রাকাত কেউ চাইলে দুই রাকাতও পড়তে পারবে। এই নামাযকে সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা বলা হয়। যা আদায় করা উত্তম কিন্তু পরিত্যাগ করলে গোনাহ নেই। অতঃপর ফরযের পরে দুই রাকাত হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা। যা প্রত্যেকের জন্য আদায় করা জরুরী এবং পরিত্যাগ করা গোনাহের কাজ। সর্বশেষ দুই রাকাত এবং বিতেরের আগের দুই রাকাত হলো নফল। যা আদায়ে সওয়াব রয়েছে কিন্তু পরিত্যাগ করলে গোনাহ নেই। কেউ চাইলে এই নফল নামায পড়তেও পারে আবার ছেড়েও দিতে পারে। আর তিন রাকাত বিতের হলো ওয়াজিব, যা আদায় করা জরুরী এবং পরিত্যাগ করা মারাত্মক গোনাহের কাজ।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلاَةٌ، بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلاَةٌ» ، ثُمَّ قَالَ فِي الثَّالِثَةِ: «لِمَنْ شَاءَ»
১.অর্থ: আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নামায রয়েছে। তিনি এই কথা তিনবার বলেন এবং তৃতীয়বারে বলেন, তবে যে চায় তার জন্য। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬২৭ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৮৩৮ হাদীসের মান: সহীহ)
قَالَتْ : كَانَ أَوَّلَ مَا افْتُرِضَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : الصَّلَاةُ رَكْعَتَانِ رَكْعَتَانِ إِلَّا الْمَغْرِبَ ؛ فَإِنَّهَا كَانَتْ ثَلَاثًا، ثُمَّ أَتَمَّ اللَّهُ الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ وَالْعِشَاءَ الْآخِرَةَ أَرْبَعًا فِي الْحَضَرِ، وَأَقَرَّ الصَّلَاةَ عَلَى فَرْضِهَا الْأَوَّلِ فِي السَّفَرِ
২.অর্থ: আয়েশা (রা.) বলেন, প্রথম দিকে রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর দুই রাকাত করে নামায ফরয করা হয়, তবে মাগরিব ব্যতীত। কারণ মাগরিব তিন রাকাত ফরয ছিল। তারপর মুকীম অবস্থায় যোহর, আসর ও ইশার নামাযকে চার রাকাতে পূর্ণ করা হয়। আর সফরকালে আগের অবস্থা অর্থাৎ দুই রাকাতই বহাল রাখা হয়। (মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ২৫১৭৭ সহীহ বুখারী হাদীস নং ১০৯০ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ صَلَّى فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلاَةِ الْفَجْرِ
৩.অর্থ: উম্মে হাবীবা (রা.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিন রাতে বার রাকাত নামায আদায় করবে তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরী করা হবে। যোহরের নামাযের পূর্বে চার রাকাত ও পরে দুই রাকাত, মাগরিবের নামাযের পরে দুই রাকাত, ইশার নামাযের পরে দুই রাকাত এবং ফজরের নামাযের পূর্বে দুই রাকাত। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৭২৮ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৪১৫ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ، : أَنَّهَا سُئِلَتْ عَنْ صَلاَةِ، رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ : كَانَ يُصَلِّي بِالنَّاسِ الْعِشَاءَ، ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى أَهْلِهِ فَيُصَلِّي أَرْبَعًا، ثُمَّ يَأْوِي إِلَى فِرَاشِهِ
৪.অর্থ: আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত। একদা তাঁকে রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ তিনি ইশার নামায জামাতে আদায়ের পর ঘরে চলে আসতেন। অতঃপর তিনি চার রাকাত (দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত নফল) নামায আদায় করে বিছানায় যেতেন। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ১১৭ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ১৩৪৮ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُوتِرُ بِثَلاَثٍ يَقْرَأُ فِي الأُولَى بِـ (سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى) وَفِي الثَّانِيَةِ بِـ (قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ) وَفِي الثَّالِثَةِ بِـ (قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ)
৫.অর্থ: ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তিন রাকআত বিতেরের নামায আদায় করতেন। প্রথম রাকাতে “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ‘লা” দ্বিতীয় রাকাতে “কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন” তৃতীয় রাকাতে “কুল হুওয়াল্লহু আহাদ” পাঠ করতেন। (সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ১৭০২ সহীহ বুখারী হাদীস নং ২০১৩ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ كَانَ يُصَلِّي بَعْدَ الْوِتْرِ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ وَهُوَ جَالِسٌ .
৬.অর্থ: উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত: নবী (ﷺ) বিতেরের নামাযের পর বসা অবস্থায় হালকাভাবে দুই রাকাত নফল নামায আদায় করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১১৯৫ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৪৭১ হাদীসের মান: সহীহ)
মোদ্দাকথা ইশার নামায ফরয,সুন্নত,নফল ও বিতের মিলিয়ে সর্বমোট ১৭ রাকাত। কেউ যদি এর মধ্য থেকে শুধু চার রাকাত ফরয,দুই রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা ও তিন রাকাত বিতের পড়ে। তাহলেও তার ইশার নামায সুন্দরভাবে আদায় হয়ে যাবে। তবে নফলের দ্বারা যেহেতু ফরযের ঘাটতি পূরণ হয় তাই সময় সুযোগ থাকলে নফলগুলোও পড়া উচিত। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১৪২৫ হাদীসের মান: সহীহ)
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে- মোস্তফা সারওয়ার।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply