ইশার নামায কোন সময় আদায় করা উত্তম?

 

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই ইশার নামায কোন সময় আদায় করা উত্তম ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

পশ্চিম আকাশে শাফাক অদৃশ্য হওয়ার পর থেকে নিয়ে রাতের তিন ভাগের এক ভাগের মাঝে ইশার নামায পড়া উত্তম। তবে রাতের এক-তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হওয়ার পর থেকে নিয়ে অর্ধেক রাত পর্যন্ত পড়া জায়েয। এতে কোন কারাহাত নেই। আর অর্ধেক রাত থেকে নিয়ে সুবহে সাদিক পর্যন্ত পড়া মাকরূহ।

عَنْ أَبِي بَرْزَةَ الأَسْلَمِيِّ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَسْتَحِبُّ أَنْ يُؤَخِّرَ الْعِشَاءَ وَكَانَ يَكْرَهُ النَّوْمَ قَبْلَهَا وَالْحَدِيثَ بَعْدَهَا ‏.‏

১.অর্থ: আবু বারযাহ আল-আসলামী (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) ইশার নামায দেরিতে পড়তে পছন্দ করতেন। তিনি ইশার নামাযের পূর্বে ঘুমানো এবং ইশার নামাযের পর কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৭০১ সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫৬৮ হাদীসের মান: সহীহ)

ব্যাখ্যা: ইশার নামাযের পর দ্বীনী অথবা জরুরী বিষয়ে কথাবার্তা বলা ও ইলম চর্চা করা দোষণীয় নয়। যেমন হাদীসে আছে, উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) রাতের বেলা আবু বকর (রা.) এর সাথে মুসলমানদের স্বার্থ সম্পর্কিত ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করতেন। আমিও তাদের সাথে থাকতাম। (সুনানে তিরমিযি হাদীস নং ১৬৯ মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং ১৭৮ হাদীসের মান: সহীহ)

উল্লেখিত এক হাদীসে আমরা জানলাম রসূলুল্লাহ (ﷺ) ইশার নামায দেরি করে আদায় করতে পছন্দ করতেন। আর এবার ঐ দেরির সময় কতটুকু তা জানবো।

قَالَ: صَلُّوهَا فِيمَا بَيْنَ أَنْ يَغِيبَ الشَّفَقُ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ

২.অর্থ: আয়েশা (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা ইশার নামায পশ্চিম আকাশে শাফাক অদৃশ্য হওয়ার পর থেকে রাতের তিন ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আদায় করবে। (সুনানে নাসাঈ হাদিস নং ৫৩৫ সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫৬৯ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها قَالَتْ أَعْتَمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِالْعَتَمَةِ حَتَّى نَادَاهُ عُمَرُ نَامَ النِّسَاءُ وَالصِّبْيَانُ‏.‏ فَخَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏ “‏ مَا يَنْتَظِرُهَا أَحَدٌ غَيْرُكُمْ مِنْ أَهْلِ الأَرْضِ ‏”‏‏.‏ وَلاَ يُصَلَّى يَوْمَئِذٍ إِلاَّ بِالْمَدِينَةِ، وَكَانُوا يُصَلُّونَ الْعَتَمَةَ فِيمَا بَيْنَ أَنْ يَغِيبَ الشَّفَقُ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ الأَوَّلِ‏.‏

৩.অর্থ: আয়েশা (রা.) বলেন, একদা আল্লাহ্‌র রসুল (ﷺ) ইশার নামায আদায়ে দেরী করলেন। ফলে উমর (রা.) তাকে সম্বোধন করে বললেন, মহিলা ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন নবী (সা.) বেরিয়ে এসে বললেন, এ নামাযের জন্য পৃথিবীতে অন্য কেউ অপেক্ষারত নেই। (বর্ণনাকারী বলেন) তখন মদীনা ব্যতীত অন্য কোথাও জামাতে নামায আদায় করা হতো না। তারা পশ্চিম আকাশের শাফাক অদৃশ্য হবার সময় হতে রাতের তিন ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ইশার নামায আদায় করতেন। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৮৬৪ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৫৩৫ হাদীসের মান: সহীহ)

وَالْعِشَاءَ إِذَا كَثُرَ النَّاسُ عَجَّلَ وَإِذَا قَلُّوا أَخَّرَ

৪.অর্থ: জাবের (রা.) বলেন, নবী (ﷺ) যদি দেখতেন, সকলেই সমবেত হয়েছেন, তাহলে সকাল সকাল ইশার নামায আদায় করতেন। আর যদি দেখতেন লোকজন আসতে বিলম্ব করছে, তাহলে দেরী করে আদায় করতেন। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৩৯৭ সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫৬০ হাদীসের মান: সহীহ)

উপরোক্ত সহীহ হাদীসগুলোর আলোকেই আমাদের দেশে ইশার নামায অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এর পরেও যারা বলে আমরা যথা সময়ে ইশার নামায পড়ি না। তারা মূলত সমাজে ফিতনা সৃষ্টির জন্য এমন করে থাকে। দু’আ করি আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত দান করুন।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মো. আব্দুর রহমান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

 

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *