প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! আশাকরি মুফতী সাহেব ভালো আছেন, আমার প্রশ্ন হল ইমাম মুক্তাদীদের চেয়ে উঁচু স্থানে দাঁড়ালে নামায হবে কি ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
সাধারণ নিয়ম হলো ইমাম মুক্তাদী একই সমতল স্থানে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে। ইমাম শিক্ষার জন্য বা অন্য কোন কারণে এক হাত বা মিম্বারের এক সিড়ি পরিমাণ উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে পারবে। কিন্তু এক হাতের চেয়ে বেশি উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে ইমামতি করলে নামায মাকরূহে তাহরীমী হবে। সুতরাং এক হাতের চেয়ে উঁচু স্টেজে ইমাম আর সব মুক্তাদী নিচে দাঁড়িয়ে নামায পড়লে তা মাকরূহে তাহরীমী হবে। তবে এক্ষেত্রে যদি উপরে ইমামের সাথে কিছু মুসল্লী থাকে, তাহলে নামায মাকরূহ ছাড়াই সহীহ হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে মুক্তাদীরা ইমাম থেকে উঁচু জায়গায় দাঁড়ালে কোন অসুবিধা নেই।
عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ الأَنْصَارِيِّ، حَدَّثَنِي رَجُلٌ، أَنَّهُ كَانَ مَعَ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ بِالْمَدَائِنِ فَأُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَتَقَدَّمَ عَمَّارٌ وَقَامَ عَلَى دُكَّانٍ يُصَلِّي وَالنَّاسُ أَسْفَلَ مِنْهُ فَتَقَدَّمَ حُذَيْفَةُ فَأَخَذَ عَلَى يَدَيْهِ فَاتَّبَعَهُ عَمَّارٌ حَتَّى أَنْزَلَهُ حُذَيْفَةُ فَلَمَّا فَرَغَ عَمَّارٌ مِنْ صَلاَتِهِ قَالَ لَهُ حُذَيْفَةُ أَلَمْ تَسْمَعْ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِذَا أَمَّ الرَّجُلُ الْقَوْمَ فَلاَ يَقُمْ فِي مَكَانٍ أَرْفَعَ مِنْ مَقَامِهِمْ .أَوْ نَحْوَ ذَلِكَ قَالَ عَمَّارٌ لِذَلِكَ اتَّبَعْتُكَ حِينَ أَخَذْتَ عَلَى يَدَىَّ
১.অর্থ: আদী ইবনে সাবিত আল-আনসারী (রহ.) সূত্রে বর্ণিত। আমার কাছে এমন এক ব্যক্তি হাদীস বর্ণনা করেছেন যিনি মাদায়েনে আম্মার ইবনে ইয়াসীর (রা.) এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, নামাযের ইকামত দেওয়া হলে আম্মার (রা.) সামনে গেলেন এবং ইমামতি করার জন্য একটি দোকানের উপর (উঁচু স্থানে) দাঁড়ালেন। তখন মুক্তাদীরা তার থেকে নিঁচু স্থানে ছিল। হুযায়ফা (রা.) সামনে এগিয়ে গিয়ে আম্মার (রা.) এর হাত ধরে তাকে নীচে নামিয়ে আনেন। আম্মার (রা.) নামায শেষ করলে হুযায়ফা (রা.) তাকে বলেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে বলতে শুনেননিঃ যখন কোন ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের ইমামতি করবে, সে যেন সমাগত মুসল্লী হতে কোন উঁচু স্থানে না দাঁড়ায় ? তখন আম্মার (রা.) বলেন, ঐ সময় হাদীসটি আমার স্মরণে আসায় আমি আপনার হস্ত ধারণের অনুসরণ করে নীচে নেমে আসি। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৫৯৮ হাদীসের মান: হাসান)
عَنْ هَمَّامٍ، أَنَّ حُذَيْفَةَ أَمَّ النَّاسَ، بِالْمَدَائِنِ عَلَى دُكَّانٍ فَأَخَذَ أَبُو مَسْعُودٍ بِقَمِيصِهِ فَجَبَذَهُ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ صَلاَتِهِ قَالَ أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّهُمْ كَانُوا يُنْهَوْنَ عَنْ ذَلِكَ قَالَ بَلَى قَدْ ذَكَرْتُ حِينَ مَدَدْتَنِي
২.অর্থ: হাম্মাম (রহ.) হতে বর্ণিত। হুযাইফা (রা.) মাদায়েন নামক স্থানে একটি দোকানের উপর দাঁড়িয়ে লোকদের ইমামতি করেন। তখন আবু মাসউদ (রা.) তিনি নামায শেষে বলেন, তুমি কি একথা জান না যে, লোকদেরকে উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে ইমামতি করতে নিষেধ করা হয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ আপনি যখন আমার জামা ধরে টান দেন তখন তা আমার স্মরণ হয়। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৫৯৭ হাদীসের মান: সহীহ)
رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَلَّى عَلَيْهَا، وَكَبَّرَ وَهْوَ عَلَيْهَا، ثُمَّ رَكَعَ وَهْوَ عَلَيْهَا، ثُمَّ نَزَلَ الْقَهْقَرَى فَسَجَدَ فِي أَصْلِ الْمِنْبَرِ ثُمَّ عَادَ، فَلَمَّا فَرَغَ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ فَقَالَ ” أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّمَا صَنَعْتُ هَذَا لِتَأْتَمُّوا وَلِتَعَلَّمُوا صَلاَتِي ”
৩.অর্থ: সাহল ইবনে সা’দ (রা.) বলেন,আমি দেখলাম রসূলুল্লাহ (সা.) মিম্বারের উপর নামায আদায় করলেন। এর উপর উঠে তাকবীর দিয়েছেন এবং সেখানে (দাঁড়িয়ে) রুকু করেছেন। এরপর পিছনের দিকে নেমে এসে মিম্বারের গোড়ায় সিজদা করেছেন এবং (এ সিজদা) পুনরায় করেছেন, এরপর নামায শেষ করে সমবেত লোকদের দিকে ফিরে বলেছেন, হে লোক সকল! আমি এটা এ জন্য করেছি যে, তোমরা যেন আমার ইক্তিদা করতে এবং আমার নামায শিখে নিতে পার। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৯১৭ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১০৯৯ হাদীসের মান:সহীহ)
উল্লেখিত হাদীসের আলোকে ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন মিম্বারের এক সিড়ি পরিমাণ তথা এক হাত পরিমাণের মত উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে ইমামতি করলে দোষণীয় নয়। কারণ রাসূল (সা.) সাহাবাদেরকে নামায শিক্ষা দেওয়ার জন্য এমন উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে নামায পড়িয়েছেন। কিন্তু এক হাতের চেয়ে বেশি উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে ইমামতি করলে নামায মাকরূহে তাহরীমী হবে।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- সাইফুল ইসলাম।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply