প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম। ইমাম সাহেব নামাযে কিরাত পড়তে গিয়ে কোনো আয়াত ভুলে গেলে কিংবা ভুল পড়লে তখন মুক্তাদীদের করণীয় কী ? দলিলসহ জবাব দিলে খুশি হবো।
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
মানুষ ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নয় সুতরাং ইমাম যদি নামাযে কিরাত পড়তে গিয়ে কোনো আয়াত ভুলে যান কিংবা ভুল পড়েন। তাহলে লুকমা দিয়ে তা মনে করিয়ে দেওয়া মুক্তাদীদের কর্তব্য। লুকমা দেওয়ার পদ্ধতি হলো, মুকতাদী উচ্চস্বরে শুদ্ধভাবে পাঠ করবেন। এটাকে পরিভাষায় লুকমা দেওয়া বলে। অনেক সময় কিরাত ছাড়াও উঠা-বসার ক্ষেত্রে কোথাও ইমামের ভুল হলে তখন সতর্ক করাকেও লুকমা দেওয়া বলে।
ফিকহে হানাফী মতে কেউ যদি কুরআন থেকে ছোট তিন আয়াত বা বড় একটি আয়াত পাঠ করে তাহলে এর দ্বারা কিরাতের ফরয আদায় হয়ে যাবে। ফলে কেউ কেউ মনে করেন, ইমাম তিন আয়াত পাঠ করে ফেললে কিরাতে ভুল হলেও ভুল ধরা যাবে না। আসলে বিষয়টি এমন নয় বরং ভুল ধরতে হবে। কারণ নামাযে কিরাত পাঠের সময় যদি কিরাতে এমনভাবে পরিবর্তন হয়। যার দরুন অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলে নামায নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং কিরাত পাঠে ভুল হলে ভুল ধরতে হবে। তবে যদি কিরাতে এমন ভুল হয় যার দরুন অর্থের কোনো পরিবর্তন ঘটে না তাহলে নামাযের কোনো অসুবিধা হবে না। সেক্ষেত্রে ভুল না ধরলেও নামায সহীহ হয়ে যাবে।
فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآن
১.অর্থ: অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়ো। (সূরা মুযযাম্মিল, আয়াত: নং ২০)
عَنِ الْمُسَوَّرِ بْنِ يَزِيدَ الْمَالِكِيِّ، – أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَحْيَى وَرُبَّمَا قَالَ – شَهِدْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الصَّلاَةِ فَتَرَكَ شَيْئًا لَمْ يَقْرَأْهُ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ تَرَكْتَ آيَةَ كَذَا وَكَذَا . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” هَلاَّ أَذْكَرْتَنِيهَا ”
২.অর্থ: মিসওয়ার ইবনে ইয়াযিদ আল মালিকী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল (ﷺ) এর সাথে নামায আদায় করি। নামাযের কিরাতে তাঁর পঠিত আয়াতের কিছু অংশ ভুলবশত ছুটে যায়। তখন নামায শেষে একব্যক্তি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি অমুক অমুক আয়াত ছেড়ে দিয়েছেন। জবাবে তিনি বলেন, তুমি তখন আমাকে স্মরণ করিয়ে দাও নি কেন? (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৯০৭ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم صَلَّى صَلاَةً فَقَرَأَ فِيهَا فَلُبِسَ عَلَيْهِ فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ لأُبَىٍّ ” أَصَلَّيْتَ مَعَنَا ” . قَالَ نَعَمْ . قَالَ ” فَمَا مَنَعَكَ “
৩.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী করীম (ﷺ) নামাযের মধ্যে কিরাত পাঠকালে আটকে গেলেন। তিনি নামায শেষে উবাই ইবনে কা‘ব (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি আমাদের সাথে নামায আদায় করেছ? জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বলেন, তোমাকে কিসে বাঁধা দিয়েছে (আমাকে আয়াত মনে করিয়ে দিতে)? (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৯০৭ হাদীসের মান: সহীহ)
قَالَ عَبْدُ اللَّهِ صَلَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ، أَنْسَى كَمَا تَنْسَوْنَ، فَإِذَا نَسِيتُ فَذَكِّرُونِي،
৪.অর্থ: আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমি তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই। সুতরাং আমি কোনো সময় (নামাযে) ভুলে গেলে তোমরা আমাকে মনে করিয়ে দেবে। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৪০১ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫৭২ হাদীসের মান: সহীহ)
উক্ত আয়াত ও হাদীস-সমূহ দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে, ইমাম কিরাত পাঠ করার সময় কোনো আয়াতে গিয়ে আটকে গেলে। কিংবা ভুল পড়লে তখন কোনো মুক্তাদী পারলে তা ধরিয়ে দিবে। আর যদি মুক্তাদীদের কারো সে সূরা মুখস্থ না থাকে অথবা কেউ ধরিয়ে না দেয়। তাহলে ইমাম সাহেব তাকবীর দিয়ে রুকুতে চলে যাবেন। অথবা অন্য কোনো কিরাত পাঠ করে রুকুতে যাবেন। তবে ইমাম সাহেবের জন্য উচিত হলো কুরআন থেকে যে আয়াতগুলা সহজ মনে হয় সেগুলা নামাযে তিলাওয়াত করা। যাতে নামাযের মধ্যে কিরাত
নিয়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয়।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে- মুহা.নুরুল্লাহ মানসুর।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply