ইমাম কি নিজের ইচ্ছামত নামাযকে দীর্ঘ করতে পারেন ?

প্রশ্নঃ

জামাতের নামাযে অনেক ইমামকে দেখা যায় তারা দীর্ঘ সময় ধরে নামায পড়ান এটা কি ঠিক ? দলিলসহ জানালে উপকৃত হতাম।

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

জামাতে নামায আদায়ের সময় ইমাম নামায কে খুব দীর্ঘ করবে না। কারণ জামাতে শিশু, বৃদ্ধ, দুর্বল, অসুস্থ, কর্মব্যস্ত সব ধরনের মানুষ থাকে। আবার খুব সংক্ষিপ্ত করতে তাড়াহুড়া করবে না। বরং এমন ভাবে নামায আদায় করবে যাতে কারো বিরক্তি না আসে এবং নামাযের বিধিবিধান যথাযথ ভাবে আদায় হয়।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا أَمَّ أَحَدُكُمُ النَّاسَ فَلْيُخَفِّفْ فَإِنَّ فِيهِمُ الصَّغِيرَ وَالْكَبِيرَ وَالضَّعِيفَ وَالْمَرِيضَ فَإِذَا صَلَّى وَحْدَهُ فَلْيُصَلِّ كَيْفَ شَاءَ

১.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: নবী (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ লোকদের ইমামতি করবে,তখন সে যেন নামায সংক্ষিপ্ত করে। কেননা, তাদের মধ্যে শিশু, বৃদ্ধ, দুর্বল, অসুস্থ সব ধরনের ব্যক্তি থাকে। আর যখন একাকী নামায আদায় করবে তখন যেভাবে মন চায় তা আদায় করবে। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৯৩০ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ২৩৬ হাদীসের মান: সহীহ)

أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ مَا صَلَّيْتُ وَرَاءَ إِمَامٍ قَطُّ أَخَفَّ صَلاَةً وَلاَ أَتَمَّ مِنَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، وَإِنْ كَانَ لَيَسْمَعُ بُكَاءَ الصَّبِيِّ فَيُخَفِّفُ مَخَافَةَ أَنْ تُفْتَنَ أُمُّهُ

২.অর্থ: আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি নবী (ﷺ) এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত এবং পরিপূর্ণ নামায কোন ইমামের পিছনে কখনো পড়িনি। এমন কি তিনি যখন কোন শিশুর কান্না শুনতে পেতেন তখন তার মায়ের উদ্বিগ্ন হওয়ার আশঙ্কায় (নামায) সংক্ষেপ করতেন। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭০৮ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ أَتَى رَجُلٌ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنِّي لأَتَأَخَّرُ عَنْ صَلاَةِ الْغَدَاةِ مِنْ أَجْلِ فُلاَنٍ مِمَّا يُطِيلُ بِنَا قَالَ فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَطُّ أَشَدَّ غَضَبًا فِي مَوْعِظَةٍ مِنْهُ يَوْمَئِذٍ قَالَ فَقَالَ ” يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ مِنْكُمْ مُنَفِّرِينَ، فَأَيُّكُمْ مَا صَلَّى بِالنَّاسِ فَلْيَتَجَوَّزْ، فَإِنَّ فِيهِمُ الْمَرِيضَ وَالْكَبِيرَ وَذَا الْحَاجَةِ ”

৩.অর্থ: আবু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি নবী (ﷺ) এর নিকট এসে বললেন অমুক ব্যক্তি নামায দীর্ঘ করার কারণে আমি ফজরের নামায থেকে পিছনে থাকি। বর্ণনাকারী বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে কোন ওয়াযের মধ্যে সেদিন থেকে বেশি রাগান্বিত হতে আর দেখিনি। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি বললেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী আছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ লোকদের নিয়ে (জামাতে) নামায আদায় করে সে যেন সংক্ষেপ করে। কারণ তাদের মধ্যে অসুস্থ, বৃদ্ধ এবং কর্মব্যস্ত লোক থাকে। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬১১০ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৯৩২ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَسْوَأُ النَّاسِ سَرِقَةً الَّذِي يَسْرِقُ مِنْ صَلَاتِهِ» . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ يَسْرِقُ مِنْ صَلَاتِهِ؟ قَالَ: لَا يتم ركوعها وَلَا سجودها

৪.অর্থ: আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর হলো ঐ ব্যক্তি যে নামাযে (বিধিবিধান) চুরি করলো। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! নামাযের চুরি কিভাবে হয় ? তিনি বললেন, নামাযের চুরি হলো রুকু,সিজদা (ইত্যাদি) পরিপূর্ণ আদায় না করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ হাদীস নং ৮৮৫ হাদীসের মান: সহীহ)

উল্লেখিত হাদীসগুলো দ্বারা আমরা জানতে পারলাম যে, একাকী নামায আদায় করার সময় যতো ইচ্ছা দীর্ঘ করা যাবে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু জামাতে নামায আদায় করার সময় অবশ্যই মুসল্লীদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে যাতে অসুস্থ, বৃদ্ধ, কর্মব্যস্ত লোকদের কোন ক্ষতি না হয়। যদি ইমাম সাহেবের লম্বা কিরাতের কারণে কোন মুসল্লী জামাত ছেড়ে দেয়। তাহলে ইমাম সাহেবকে গোনাহগার হতে হবে, তাই নামাযে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা উত্তম।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- ইদরীস আলী।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *