প্রশ্ন:
আসসালামু আলাইকুম! আমার প্রশ্ন হলো ইমাম সাহেবের মসজিদে আসতে দেরি হলে মুসল্লীরা জামাত শুরু করে দিতে পারবে কি ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
নামাযের সময় নির্ধারণ করা হয় নির্দিষ্ট সময়ে নামায পড়ার জন্য। তাই ওজর ছাড়া এর ব্যতিক্রম করা উচিত নয়। তবে কখনো যদি ইমামের আসতে দেরি হয় তাহলে মুক্তাদীরা ইমামের আসার অপেক্ষা করবে। নামাযের সময় হলেই ইমামের জন্য অপেক্ষা না করে তৎক্ষণাৎ জামাত শুরু করে দেয়া উচিত নয়। অবশ্য ইমামের আসতে বেশি দেরি হলে উপস্থিত মুক্তাদীদের মধ্য থেকে উপযুক্ত এক ব্যক্তিকে ইমাম নিযুক্ত করে জামাত শুরু করা যাবে।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي قَتَادَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلّى الله عليه وسلم: «إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ، فَلاَ تَقُومُوا حَتَّى تَرَوْنِي»
১.অর্থ: আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ নামাযের ইকামত হলে আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না। (অর্থাৎ ইমামের আগমনের অপেক্ষা করতে হবে)। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬৩৭ হাদীসের মান: সহীহ)
قَالَ أَخْبَرَنِي عَمْرُو بْنُ وَهْبٍ الثَّقَفِيُّ، قَالَ سَمِعْتُ الْمُغِيرَةَ بْنَ شُعْبَةَ،أَنَّهُ كَانَ فِي سَفَرٍ فَحَضَرَتِ الصَّلاَةُ فَاحْتَبَسَ عَلَيْهِمُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَأَقَامُوا الصَّلاَةَ وَقَدَّمُوا ابْنَ عَوْفٍ فَصَلَّى بِهِمْ فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَصَلَّى خَلْفَ ابْنِ عَوْفٍ مَا بَقِيَ مِنَ الصَّلاَةِ فَلَمَّا سَلَّمَ ابْنُ عَوْفٍ قَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَضَى مَا سُبِقَ بِهِ
২.অর্থ: আমর ইবনে ওয়াহব সাকাফী (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মুগীরা ইবনে শু’বা (রা.) কে বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) এক সফরে গিয়েছিলেন। আমিও তার সঙ্গে ছিলাম। (তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন সমাধার জন্য) দূরে চলে গিয়েছিলেন। এদিকে নামায এর সময় হয়ে যায়। (নামায এর সময় শেষ হচ্ছে দেখে) লোকেরা নামায শুরু করে দিল। আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)-কে তারা ইমাম নিযুক্ত করেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে নামায আদায় করলেন। (এমন সময়) রসূলুল্লাহ (ﷺ) ফিরে আসেন এবং ইবনে আউফের পেছনে অবশিষ্ট নামায আদায় করেন। ইবনে আউফ সালাম ফিরালে নবী (ﷺ) দাঁড়িয়ে যান এবং যতটুকু নামায ছুটে গিয়েছিল তিনি তা আদায় করেন। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১০৯ হাদীসের মান: সহীহ)
قَالَ سَمِعْتُ أَبَا مَسْعُودٍ الأَنْصَارِيَّ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ فَإِنْ كَانُوا فِي الْقِرَاءَةِ سَوَاءً فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ فَإِنْ كَانُوا فِي السُّنَّةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً فَإِنْ كَانُوا فِي الْهِجْرَةِ سَوَاءً فَأَكْبَرُهُمْ سِنًّا وَلاَ يُؤَمُّ الرَّجُلُ فِي سُلْطَانِهِ وَلاَ يُجْلَسُ عَلَى تَكْرِمَتِهِ فِي بَيْتِهِ إِلاَّ بِإِذْنِهِ
৩.অর্থ: আবু মাসউদ আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআন বেশি ভাল পড়তে জানে সে লোকদের ইমামতি করবে। যদি কুরআন পাঠে সবাই সমান হয়, তাহলে যে ব্যক্তি বেশি হাদীস (সুন্নাহ) জানে সে ইমামতি করবে। যদি হাদীসের বেলায়ও সবাই সমান হয়, তাহলে যে ব্যক্তি প্রথম হিজরত করেছে সে ইমামতি করবে। যদি এ ব্যাপারেও সবাই সমান হয়, তাহলে যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে ইমামতি করবে। কোন ব্যক্তি যেন অপর ব্যক্তির ইমামতির স্থানে তার সম্মতি ছাড়া ইমামতি না করে এবং অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে তার ব্যক্তিগত আসনে না বসে। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৪০৬ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ২৩৫ হাদীসের মান: সহীহ)
উপরোক্ত সহীহ হদীসগুলো থেকে এ কথাই প্রমাণিত হলো। যদি জামাতের সময় নির্ধারিত থাকে এবং ধারণা হয় যে, ইমাম কিছুক্ষণের মধ্যে এসে পড়বে তখন তার জন্য বিলম্ব করতে হবে। আর যদি ইমাম একথা বলে যায় যে আমার আসতে বিলম্ব হলে অমুক ব্যক্তিকে ইমাম নিযুক্ত করবে। তাহলে মুসল্লীরা ঐ ব্যক্তিকে ইমাম নিযুক্ত করে নামায আদায় করবে। তবে ইমামকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে সময় মতো জামাতে উপস্থিত থাকার জন্য৷ যাতে তার দ্বারা কোনো মানুষের কষ্ট না হয়।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে- মো.আব্দুল কাইয়ুম।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply