প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম ! আমার প্রশ্ন হলো, দেহের আরামের জন্য আমরা প্রতিদিন যে গোসল করে থাকি। এই গোসলেও কি ফরয গোসলের ন্যায় অযু করা সুন্নত ? নামায আদায় করলে কি গোসল করা সত্ত্বেও অযু করতে হবে ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
আমাদের দেশের মানুষেরা দেহের আরামের জন্য প্রতিদিন যে গোসল করে থাকে এটা হলো সাধারণ গোসল। এই গোসলের শুরুতে বা পরে ইবাদতের জন্য হলেও অযু করার প্রয়োজন নেই। কারণ এটা নির্ভরযোগ্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত নয়। সুতরাং সাধারণ গোসলের শুরুতে অযু করা সুন্নত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। অবশ্য ফরয গোসলের শুরুতে নামাযের ন্যায় অযু করা সুন্নত, যা বহু সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আর এই অযু নামাযের জন্য যথেষ্ট। পরে নতুন অযুর প্রয়োজন নেই যদি অযু নষ্ট না হয়।
عَنْ حُمْرَانَ، قَالَ: كَانَ عُثْمَانُ يَغْتَسِلُ كُلَّ يَوْمٍ مَرَّةً مُنْذُ أَسْلَم
১.অর্থ: হুমরান (রহ.) থেকে বৰ্ণিত: উসমান (রা:) প্রতিদিন একবার (সাধারণ) গোসল করতেন (কিন্তু অযু করতেন না)। ইসলাম গ্রহণের পর থেকে কখনো এর ব্যতিক্রম করেননি। (মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং ৪৮৪ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ لاَ يَتَوَضَّأُ بَعْدَ الْغُسْلِ
২.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) গোসলের পর অযু করতেন না। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১০৭ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৪৩০ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَغْتَسِلُ وَيُصَلِّي الرَّكْعَتَيْنِ وَصَلَاةَ الْغَدَاةِ وَلَا أُرَاهُ يُحْدِثُ وُضُوءًا بَعْدَ الْغُسْلِ
৩.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ফরয) গোসল করে দুই রাকাত নামায আদায় করার পর ফজরের নামায আদায় করতেন। আমি তাকে গোসলের পর পুনরায় অযু করতে দেখিনি। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ২৫০ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৫৭৯ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا اغْتَسَلَ مِنَ الْجَنَابَةِ يَبْدَأُ فَيَغْسِلُ يَدَيْهِ ثُمَّ يُفْرِغُ بِيَمِينِهِ عَلَى شِمَالِهِ فَيَغْسِلُ فَرْجَهُ ثُمَّ يَتَوَضَّأُ وُضُوءَهُ لِلصَّلاَةِ ثُمَّ يَأْخُذُ الْمَاءَ فَيُدْخِلُ أَصَابِعَهُ فِي أُصُولِ الشَّعْرِ حَتَّى إِذَا رَأَى أَنْ قَدِ اسْتَبْرَأَ حَفَنَ عَلَى رَأْسِهِ ثَلاَثَ حَفَنَاتٍ ثُمَّ أَفَاضَ عَلَى سَائِرِ جَسَدِهِ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ .
৪.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানবাত থেকে গোসল করতেন তখন প্রথমে উভয় হাত ধুতেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধুতেন। তারপর নামায এর অযুর ন্যায় অযু করতেন। তারপর পানি নিয়ে তাঁর আঙ্গুল গুলো চুলের গোড়ায় ঢুকাতেন। এমনিভাবে যখন মনে করতেন যে, তা ভিজে গেছে তখন মাথায় তিন আজলা পানি ঢালতেন! তারপর সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে দিতেন। তারপর তাঁর উভয় পা ধুয়ে ফেলতেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ২৪৭ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৬১১ হাদীসের মান: সহীহ)
মোটকথা সাধারণ গোসলের আগে বা পরে অযু করা সুন্নত নয়। ইবাদত বন্দেগীর জন্য হলেও সাধারণ গোসলের পর অযু করতে হবে না। কেননা গোসলের মাধ্যমে অযুর অঙ্গগুলো ধৌত হলেই অযু আদায় হয়ে যায়। এরপর এই অযু দিয়ে সব ধরনের ইবাদত-বন্দেগী করা যায়। তবে ফরয গোসলের আগে অযু করা সুন্নত। কিন্তু কেউ যদি ফরয গোসলের শুরুতে অযু না করে শুধু ভালোভাবে গোসল করে, তাহলে নামায পড়ার জন্য তার ঐ গোসলই যথেষ্ট হবে তবে সুন্নতের খেলাপ হবে।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- হাবিবুর রহমান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply