ইকামত শুরু হলে সুন্নত নামায ছেড়ে দেওয়া যাবে কি ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম। ফরয নামাযের ইকামত শুরু হলে সুন্নত নামায ছেড়ে দেওয়া যাবে কি ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُه
ْبِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

সুন্নত যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট হয় তাহলে দুই রাকাতই পূর্ণ করবে নামায ছেড়ে দিবে না। আর যদি চার রাকাত বিশিষ্ট হয় তাহলে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে জামাতে শরীক হয়ে যাবে। তবে কেউ যদি দুই রাকাত পড়ে তৃতীয় রাকাত শুরু করে দেয়, তাহলে চার রাকাত পূর্ণ করবে। কোন অবস্থাতেই সুন্নত নামায ছেড়ে দেবে না। এক্ষেত্রে যথাসম্ভব ছোট কিরাত পড়ে নামায শেষ করবে। অবশ্য ফজরের সুন্নতের ক্ষেত্রে যদি ধারণা হয় যে, সুন্নত শেষ করে জামাতের এক রাকাত ধরতে পারবে। তাহলে ইকামত বা জামাত চলাকালীন সময়েও সুন্নত পড়ে নেবে। উল্লেখ্য এক রাকাত পড়ার বাকি থাকতে আর এক রাকাত না মিলিয়ে নামায ছেড়ে দেয়ার মানেই হলো নামাযটি নষ্ট করে ফেলা। কারণ নামাযের সর্বনিম্ন পূর্ণতা হল দুই রাকাত সম্পন্ন করা। তাই এক রাকাত পড়েই নামায ছেড়ে দেয়া যাবে না। কারণ এতে নামাযের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমলকে বিনষ্ট করা হবে। যা কিনা পবিত্র কুরআনের আয়াত বিরোধী।

وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ

১.অর্থ: তোমরা নিজেদের আমল বিনষ্ট করো না। (সূরা মুহাম্মদ: আয়াত নং ৩৩)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَلاَ صَلاَةَ إِلاَّ الْمَكْتُوبَةُ

২.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন ইকামত দেওয়া হয় তখন ফরয নামায ব্যতীত আর কোন নামায নেই। ( ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৫১৭ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৮৬৬ হাদীসের মান: সহীহ)

ব্যাখ্যা: মূলত এ হাদীসটি ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্যান্য নামাযের জন্য। ফজরের সুন্নত অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় অনেক বড় বড় সাহাবী-তাবেঈ এই বিধানকে এ থেকে ব্যতিক্রম মনে করেছেন। যার প্রমাণ নিম্নোক্ত হাদীসগুলোতে রয়েছে।

حَدَّثَنِي عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِي مُوسَى، عَنْ أَبِيهِ، حِينَ دَعَاهُمْ سَعِيدُ بْنُ الْعَاصِ، دَعَا أَبَا مُوسَى , وَحُذَيْفَةَ , وَعَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ , قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ الْغَدَاةَ , ثُمَّ خَرَجُوا مِنْ عِنْدِهِ وَقَدْ أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ , فَجَلَسَ عَبْدُ اللهِ إِلَى أُسْطُوَانَةٍ مِنَ الْمَسْجِدِ , فَصَلَّى الرَّكْعَتَيْنِ , ثُمَّ دَخَلَ فِي الصَّلَاةِ ” فَهَذَا عَبْدُ اللهِ قَدْ فَعَلَ هَذَا وَمَعَهُ حُذَيْفَةُ وَأَبُو مُوسَى لَا يُنْكِرَانِ ذَلِكَ عَلَيْهِ , فَدَلَّ ذَلِكَ عَلَى مُوَافَقَتِهِمَا إِيَّاهُ

৩.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে আবু মুসা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা সাঈদ ইবন আস (রা.) যখন আবু মুসা (রা.), হুযায়ফা (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা)-কে ফজরের নামাযের পূর্বে ডাকলেন। তারা যখন সাঈদ ইবন আস (রা)-এর নিকট থেকে বের হলেন তখন নামাযের ইকামত হয়ে গেছে। তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) মসজিদের একটি খুঁটির নিকট বসে গেলেন। সেখানে তিনি দুই রাকাত (সুন্নত) আদায় করলেন। তারপর জামাতের সাথে নামাযে শরীক হলেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এরূপ করা সত্ত্বেও হুযায়ফা (রা.) ও আবু মুসা (রা.) তাতে কোন প্রতিবাদ করেননি। এতে বুঝা গেল তারা দুজনও উক্ত ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর পক্ষে ছিলেন। ( তহাবী শরীফ হাদীস নং ২১৯৮ হাদীসের মান: সহীহ)

তাহকীক: হায়সামী (রহ.) বলেন, বর্ণানাকারী সবাই নির্ভরযোগ্য। আল্লামা আইনী (রহ.) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (মাযমাউয যাওয়ায়েদ ২/৭৮ নুখবুল আফকার ৩/৬৮২)

عَنْ أَبِي مِجْلَزٍ، قَالَ: دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فِي صَلَاةِ الْغَدَاةِ مَعَ ابْنِ عُمَرَ وَابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ , وَالْإِمَامُ يُصَلِّي. فَأَمَّا ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا فَدَخَلَ فِي الصَّفِّ , وَأَمَّا ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا , فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ , ثُمَّ دَخَلَ مَعَ الْإِمَامِ

৪.আবু মিজলায (রহ.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেছেন, একবার আমি ইবন উমর (রা.) ও ইবন আব্বাস (রা.)-এর সাথে ফজরের নামাযের জন্য মসজিদে প্রবেশ করলাম। ইমাম তখন জামাতে নামায পড়াচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় ইবন উমর (রা.) কাতারে শামিল হয়ে গেলেন। আর ইবন আব্বাস (রা.) দুই রাকাত (সুন্নত) পড়লেন। তারপর ইমামের সাথে (জামাতে) অংশগ্রহণ করলেন। ( তহাবী শরীফ: হাদীস নং ২২০০ হাদীসের মান: সহীহ)

তাহকীক: বদরুদ্দীন আইনী (রহ.) বলেন, ইমাম তহাবী (রহ.) এটি দুটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। (নুখবুল আফকার ৩/৬৮৩)

عَنْ أَبِي عُثْمَانَ الْأَنْصَارِيِّ، قَالَ: جَاءَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبَّاسٍ وَالْإِمَامُ فِي صَلَاةِ الْغَدَاةِ , وَلَمْ يَكُنْ صَلَّى الرَّكْعَتَيْنِ فَصَلَّى عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا الرَّكْعَتَيْنِ خَلْفَ الْإِمَامِ , ثُمَّ دَخَلَ مَعَهُمْ

৫.অর্থ: আবু উসমান আল-আনসারী (রহ.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, একবার আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) নামায আদায় না করে মসজিদে এসেছিলেন। আর ইমাম তখন ফজরের নামাযে রত। তারপর আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) ইমামের পিছনে দুই রাকাত সুন্নত আদায় করে লোকদের সাথে জামাতে শামিল হলেন। (তহাবী শরীফ: হাদীস নং ২২০১ হাদীসের মান: সহীহ)

তাহকীক: আল্লামা আইনী (রহ.) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (নুখবুল আফকার ৬/৭৬)

মোদ্দাকথা হলো ফরয নামাযের ইকামত দেওয়া হলে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ব্যতীত অন্য কোন নামায শুরু করা যাবে না। যদি ফরয নামায পড়া অবস্থায় ইকামত দেয় তাহলে সুন্নত নামাযকে তাড়াতাড়ি আদায় করে নিবে। আর চার রাকাত বিশিষ্ট নামায হলে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে নিবে।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে: মুহাম্মাদ উবায়দুল্লাহ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *