প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হলো ইকামতের কোন সময়ে দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করতে হবে ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
ইকামতের শুরুতেই ইমাম-মুক্তাদী সকলে দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করবে। তবে ইমাম নামাযের জন্য না দাঁড়ানো পর্যন্ত মুসল্লীগণ দাঁড়াবে না। ইমামের আগেই মুসল্লীদের দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকা মাকরূহ। ইমাম যদি মুসল্লীদের সামনের দিক থেকে আসে তাহলে তাঁকে দেখে সকলে একসাথে দাঁড়িয়ে যাবে। আর যদি ইমাম মুসল্লীদের পিছন দিক থেকে আসে তাহলে তিনি যে কাতার অতিক্রম করতে থাকবে তারা দাঁড়াতে থাকবে। এভাবে ইমাম তাঁর নির্ধারিত স্থানে আসতে আসতে সকল মুসল্লী দাঁড়িয়ে যাবে। যেসব হাদীসে হাইয়া আলাল ফালাহ এর সময় দাঁড়ানোর কথা বর্ণিত হয়েছে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এটি শেষ সীমা এর পর আর বসে থাকবে না। এর দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নয় যে, এর আগে বসে থাকতেই হবে, দাঁড়ানো যাবে না। বরং উদ্দেশ্য হলো, সীমা নির্দিষ্টকরণ এরপর আর বসে থাকা যাবে না দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
سِمَاكُ بْنُ حَرْبٍ، سَمِعَ جَابِرَ بْنَ سَمُرَةَ، يَقُولُ كَانَ مُؤَذِّنُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُمْهِلُ فَلاَ يُقِيمُ حَتَّى إِذَا رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ خَرَجَ أَقَامَ الصَّلاَةَ حِينَ يَرَاهُ
১.অর্থ: সিমাক ইবনে হারব (রহ.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন আমি জাবির ইবনে সামুরা (রা.) কে বলতে শুনেছি যে, রাসূল (ﷺ) এর মুয়াযযিন (তার জন্য) অপেক্ষা করতে থাকতেন এবং ইকামত দিতেন না। যখন তিনি রসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে (তার ঘর হতে) বেরিয়ে আসতে দেখতেন তখনই নামাযের ইকামত বলা শুরু করতেন। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৬০৬ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ২০২ হাদীসের মান: সহীহ)
أَبِي قَتَادَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلّى الله عليه وسلم: «إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ، فَلاَ تَقُومُوا حَتَّى تَرَوْنِي»
২.অর্থ: আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ নামাযের ইকামত দেওয়া (শুরু) হলে তোমরা আমাকে (হুজরা থেকে বের হতে) না দেখা পর্যন্ত দাঁড়াবে না। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬৩৭ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৫৩৯ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ الصَّلاَةَ، كَانَتْ تُقَامُ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَيَأْخُذُ النَّاسُ مَصَافَّهُمْ قَبْلَ أَنْ يَقُومَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَقَامَهُ
৩.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্য নামাযের ইকামত বলা হতো। তিনি আপন জায়গায় (গিয়ে) দাঁড়াবার পূর্বেই লোকেরা নিজ নিজ কাতারে দাঁড়িয়ে যেত। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৬০৫ হাদীসের মান: সহীহ)
نُعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُسَوِّي صُفُوفَنَا إِذَا قُمْنَا لِلصَّلاَةِ فَإِذَا اسْتَوَيْنَا كَبَّرَ
৪.অর্থ: নুমান ইবনে বশীর (রা.) বলেন, আমরা
যখন নামাযে দণ্ডায়মান হতাম তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের কাতারসমূহ সোজা করে দিতেন। অতঃপর আমরা কাতার সোজা করে দাঁড়ালে তাকবীরে (তাহরীমা) বলতেন। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৬৬৫ হাদীসের মান: সহীহ)
وَقَدْ رُوِيَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ” مِنْ تَمَامِ الصَّلاَةِ إِقَامَةُ الصَّفِّ ”. وَرُوِيَ عَنْ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ يُوَكِّلُ رِجَالاً بِإِقَامَةِ الصُّفُوفِ فَلاَ يُكَبِّرُ حَتَّى يُخْبَرَ أَنَّ الصُّفُوفَ قَدِ اسْتَوَتْ . وَرُوِيَ عَنْ عَلِيٍّ وَعُثْمَانَ أَنَّهُمَا كَانَا يَتَعَاهَدَانِ ذَلِكَ وَيَقُولاَنِ اسْتَوُوا . وَكَانَ عَلِيٌّ يَقُولُ تَقَدَّمْ يَا فُلاَنُ تَأَخَّرْ يَا فُلاَنُ .
৫.অর্থ: উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি কাতার ঠিক করার জন্য একজন লোক নিযুক্ত করতেন। যে পর্যন্তনা তাকে জানানো না হত যে, কাতার সোজা হয়েছে সে পর্যন্ত তিনি তাকবির (তাহরীমা) বলতেন না। উসমান এবং আলী (রা.) এদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন এবং তারা বলতেন, তোমরা সোজা হও। আলী (রা.) তো নাম ধরেই বলতেন, অমুক একটু আগাও, অমুক একটু পিছাও। (সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ২২৭ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُقَوِّمُ الصُّفُوفَ كَمَا تُقَوَّمُ الْقِدَاحُ فَأَبْصَرَ رَجُلاً خَارِجًا صَدْرُهُ مِنَ الصَّفِّ فَلَقَدْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” لَتُقِيمُنَّ صُفُوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللَّهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ ”
৬.অর্থ: নুমান ইবনে বশীর (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) কাতার সোজা করতেন যেমন তীর সোজা করা হয়। (একদা) তিনি দেখলেন এক ব্যক্তির বুক কাতার থেকে কিছুটা সামনের দিকে বেড়ে আছে। তখন আমি তাকে বলতে শুনেছি তোমরা তোমাদের কাতার সোজা কর, তা না হলে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে দিবেন। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭১৭ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৮১০ হাদীসের মান: সহীহ)
মোটকথা হলো হাইয়া আলাল ফালাহ বলার সময় দাঁড়ানোর পরিবর্তে ইকামতের শুরুতেই দাঁড়ানো উত্তম হবে। সেই বিশেষ কারণটি হলো, কাতার সোজা করা। প্রথমে দাঁড়িয়ে গেলে কাতার সোজা করা সহজ হয়। কিন্তু হাইয়া আলাল ফালাহ বলার সময় মুসল্লিগণ দাঁড়ালে ইকামত শেষ হতে হতে মুসল্লীদের কাতার ভাল করে সোজা হবে না। এক্ষেত্রে হয় তো কাতার সোজা করা ছাড়াই নামায শুরু হবে। কিংবা কাতার সোজা করার জন্য দেরি করতে হবে, যা নামায শুরু করার মাঝে বিলম্ব করিয়ে ফেলবে। তাই একামতের শুরুতে দাঁড়ানো উচিত।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে: ফুরকান আহমদ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply