প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হলো,আসরের নামায কোন সময় আদায় করা উত্তম ? দলিলসহ জানালে খুশি হবো।
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
প্রতিটি বস্তুর মূল ছায়া ব্যতীত তার ছায়া দ্বিগুণহওয়ার পর থেকে আসর নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আসর নামাযের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে। এই সময়ের ভিতরে যে কোন সময় আসর নামায আদায় করা যায়। তবে সূর্যের রং হলুদ বর্ণ হওয়ার আগে আসরের নামায আদায় করা উত্তম। আর সূর্যের রং হলুদ বর্ণ ধারণ করার পর আসরের নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী। কেউ যদি আসরের নামায যথাসময়ে আদায় করতে অপারগ হয়। তাহলে ঐ ব্যক্তির জন্য ঐ দিনের আসরের নামায কাযা না করে সূর্যাস্তের সময়েও আদায় করা জায়েয আছে।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ رَافِعٍ، مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ سَأَلَ أَبَا هُرَيْرَةَ عَنْ وَقْتِ الصَّلاَةِ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ أَنَا أُخْبِرُكَ صَلِّ الظُّهْرَ إِذَا كَانَ ظِلُّكَ مِثْلَكَ وَالْعَصْرَ إِذَا كَانَ ظِلُّكَ مِثْلَيْكَ
১.অর্থ: আব্দুল্লাহ্ ইবনে রাফি (রহ.) আবু হুরায়রা (রা.)-এর নিকট নামাযের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। উত্তরে আবু হুরায়রা (রা.) বললেনঃ আমি তোমাকে নামাযের সময়ের সংবাদ দিবো। (গরমকালে) যোহর পড় যখন তোমার ছায়া তোমার সমপরিমাণ হয়। আর আসর পড় যখন তোমার ছায়া তোমার দ্বিগুণ হয়। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক হাদীস নং ৯ হাদীসের মান: হাসান)
عَلِيِّ بْنِ شَيْبَانَ قَالَ قَدِمْنَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ فَكَانَ يُؤَخِّرُ الْعَصْرَ مَا دَامَتِ الشَّمْسُ بَيْضَاءَ نَقِيَّةً
২.অর্থ: আলী ইবনে শায়বান (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা মদীনায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে গেলাম। সে সময় তিনি আসরের নামায বিলম্বিত করতেন যে পর্যন্ত সূর্য পরিষ্কার সাদা থাকে। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৪০৮ হাদীসের মান: হাসান)
তাহকীক: ইমাম আবু দাউদ (রহ.) হাদীসটি বর্ণনা করে চুপ ছিলেন আর চুপ থাকলে সেটি তার কাছে সহীহ। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৪০৮)
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّمَا أَجَلُكُمْ فِي أَجَلِ مَنْ خَلاَ مِنَ الأُمَمِ مَا بَيْنَ صَلاَةِ الْعَصْرِ إِلَى مَغْرِبِ الشَّمْسِ، وَإِنَّمَا مَثَلُكُمْ وَمَثَلُ الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى كَرَجُلٍ اسْتَعْمَلَ عُمَّالاً فَقَالَ مَنْ يَعْمَلُ لِي إِلَى نِصْفِ النَّهَارِ عَلَى قِيرَاطٍ قِيرَاطٍ فَعَمِلَتِ الْيَهُودُ إِلَى نِصْفِ النَّهَارِ عَلَى قِيرَاطٍ قِيرَاطٍ، ثُمَّ قَالَ مَنْ يَعْمَلُ لِي مِنْ نِصْفِ النَّهَارِ إِلَى صَلاَةِ الْعَصْرِ عَلَى قِيرَاطٍ قِيرَاطٍ فَعَمِلَتِ النَّصَارَى مِنْ نِصْفِ النَّهَارِ إِلَى صَلاَةِ الْعَصْرِ، عَلَى قِيرَاطٍ قِيرَاطٍ، ثُمَّ قَالَ مَنْ يَعْمَلُ لِي مِنْ صَلاَةِ الْعَصْرِ إِلَى مَغْرِبِ الشَّمْسِ عَلَى قِيرَاطَيْنِ قِيرَاطَيْنِ أَلاَ فَأَنْتُمُ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ مِنْ صَلاَةِ الْعَصْرِ إِلَى مَغْرِبِ الشَّمْسِ عَلَى قِيرَاطَيْنِ قِيرَاطَيْنِ، أَلاَ لَكُمُ الأَجْرُ مَرَّتَيْنِ، فَغَضِبَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى، فَقَالُوا نَحْنُ أَكْثَرُ عَمَلاً وَأَقَلُّ عَطَاءً، قَالَ اللَّهُ هَلْ ظَلَمْتُكُمْ مِنْ حَقِّكُمْ شَيْئًا قَالُوا لاَ. قَالَ فَإِنَّهُ فَضْلِي أُعْطِيهِ مَنْ شِئْتُ
৩.অর্থ: ইবনে উমর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের বয়স পূর্ববর্তী উম্মতের বয়সের তুলনায় আসরের নামায থেকে নিয়ে সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত। আর তোমাদের এবং ইহুদী খৃস্টানদের দৃষ্টান্ত হল এরূপ যে, এক ব্যক্তি কিছু শ্রমিক নিয়োগ কবতে চায়, তাই সে ঘোষণা করল। এক এক কিরাত মজুরির বিনিময়ে কারা দুপুর পর্যন্ত আমার কাজ করে দিবে ? (তার এই ঘোষণায়) ইহুদীগণ (সম্মত হয়ে) দুপুর পর্যন্ত এক কিরাতের বিনিময়ে কাজ করল। সেই ব্যক্তি পূনরায় ঘোষণা করল, দুপুর থেকে আসর পর্যন্ত এক এক কিরাত মজুরির বিনিময়ে কারা আমার কাজ করে দিবে ? এবার খৃস্টানগণ এক এক কিরাতের বিনিময় দুপুর থেকে আসর পর্যন্ত কাজ করল। তৃতীয় বার সেই ব্যক্তি ঘোষণা করল, আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়ে দুই দুই কিরাত মজুরির বিনিময়ে কারা আমার কাজ করে দিবে ? আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, শুনে রাখ তোমরাই হলে সে সব লোক যারা আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত দুই দুই কিরাতের বিনিময়ে কাজ করলে। দেখ তোমাদেরকেই দ্বিগুণ মজরি দেওয়া হল। এতে ইয়াহুদী খৃস্টানরা অসন্তুষ্ট হয়ে গেল এবং বলল, আমরা কাজ করলাম অধিক আর মজুরি পেলাম কম! তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন আমি কি তোমাদের প্রাপ্যের কোন অংশ কমিয়ে দিয়েছি ? তারা উত্তরে বলল “না” এবার আল্লাহ তা‘আলা বলেন! নিশ্চয় এটা আমার অনুগ্রহ, আমি যাকে চাই তাকে তা দান করি । (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৩৪৫৯ হাদীসের মান: সহীহ)
ব্যাখ্যা: বর্ণিত হাদীসে ইহুদী ও খৃস্টানদের কাজের সময় উম্মতে মুহাম্মদীর তুলনায় বেশি। অথচ মজুরির বেলায় তাদের চেয়ে কম হওয়ায় তারা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। এর দ্বারা বুঝা যায় ইহুদীদের সময় যা সকাল থেকে দুপুর। আর খৃস্টানদের সময় যা দুপুর থেকে আসর তা অবশ্যই উম্মতে মুহাম্মদীর সময় তথা আসর-মাগরিব থেকে বেশি। আর এটা তখনই হবে যখন আসরকে বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর ধরা হবে। আর যদি ছায়া সমপরিমাণ তথা এক গুণ হওয়ার পর আসরের ওয়াক্ত শুরু বলা হয়। তাহলে আসর থেকে মাগরিবের সময় যোহর থেকে আসরের সময়ের চেয়ে অবশ্যই বেশি হয়ে যাবে। অথচ এমতাবস্থায় খৃস্টানদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করার কোন অর্থ থাকে না। কেননা তাদের কাজের সময় তো উম্মতে মুহাম্মদীর সময়ের তুলনায় কম। সুতরাং একথা বাধ্য হয়েই বলতে হবে যে, বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ وَقْتُ الظُّهْرِ مَا لَمْ تَحْضُرِ الْعَصْرُ وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ وَوَقْتُ الْمَغْرِبِ مَا لَمْ يَسْقُطْ فَوْرُ الشَّفَقِ .
৪.অর্থ: আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত: নবী (ﷺ) বলেছেন, আসর নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যোহর নামাযের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে। সূর্য হলুদ রং ধারণ না করা পর্যন্ত আসরের (উত্তম) সময়। মাগরিবের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে (পশ্চিমাকাশে) শাফাক বিলীন না হওয়া পর্যন্ত। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৩৯৬ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৫২২ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَشَدَّ تَعْجِيلاً لِلظُّهْرِ مِنْكُمْ وَأَنْتُمْ أَشَدُّ تَعْجِيلاً لِلْعَصْرِ مِنْهُ
৫.অর্থ: উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) যোহরের ক্ষেত্রে তোমাদের তুলনায় বেশি জলদি করতেন আর তোমরা আসরের ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি জলদি করছো। (সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১৬১ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنِ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ وَعَنِ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصُّبْحِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ
৬.অর্থ: আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আসর নামাযের পর থেকে সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং ফজরের নামাযের পর থেকে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৮২৫ সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫৮৪ হাদীসের মান: সহীহ)
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীস দুটি দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (ﷺ) আসরের নামায দেরি করে পড়তেন। ইসলামী বিশেষজ্ঞগণও বলেছেন, আসরের নামায দেরি করে আদায় করা উত্তম। যাতে আসরের আগে বেশি করে নফল পড়া যায়। কারণ আসর নামাযের পর কোন নফল পড়া যায় না। এই জন্যেই ফিকহে হানাফীতে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর আসর নামায পড়া হয়।
প্রিয় পাঠক! উল্লেখিত সহীহ হাদীসের আলোচনা দ্বারা নিঃসন্দেহে আপনার সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের দেশে যে সময়ে আসর নামায আদায় করা হয় তা সহীহ হাদীস সম্মত। সুতরাং যারা বলে এর কোন ভিত্তি নেই তারা যে, সমাজে ফেতনা সৃষ্টির জন্য এমন বলছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ ফিতনা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ২১৭)
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply