আশুরার রোযা কয়টি এবং এর ফযীলত কী ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম! আশুরার রোযা কয়টি রাখতে হয় ? কেউ যদি একটা রোযা রাখে তাহলে গোনাহ হবে কি ? আশুরার রোযার কোনো বিশেষ ফযীলত আছে কি ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

মহররম মাসের দশম দিনটি আশুরা নামে পরিচিত।
আশুরা উপলক্ষ্যে সর্বমোট ২ দিন রোযা রাখা উত্তম। মুহাররম মাসের ৯ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ আশুরার রোযা রাখতে হয়। আশুরার রোযা মূলত দশই মহাররমের রোযা। তবে এই রোযার সাথে আরও একটি রোযা মিলিয়ে রাখার ব্যাপারে হাদীসে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তাই ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ দুইদিন রোযা রাখা উত্তম। এভাবে রোযা রাখলে পূর্ববর্তী এক বছরের সগীরা গোনাহ মাফ হয়ে যায়।
অবশ্য কেউ যদি শুধু দশই মহাররম রোযা রাখে তবে সেটিও আশুরার রোযা হিসাবে গণ্য হবে। তবে হাদীসের নির্দেশনার উপর আমল না করার কারণে মাকরূহ ও অনুত্তম হবে কিন্তু গোনাহ হবে না।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: لَمَّا قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المَدِينَةَ وَجَدَ اليَهُودَ يَصُومُونَ عَاشُورَاءَ، فَسُئِلُوا عَنْ ذَلِكَ، فَقَالُوا: هَذَا اليَوْمُ الَّذِي أَظْفَرَ اللَّهُ فِيهِ مُوسَى، وَبَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى فِرْعَوْنَ، وَنَحْنُ نَصُومُهُ تَعْظِيمًا لَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَحْنُ أَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ، ثُمَّ أَمَرَ بِصَوْمِهِ»

১.অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী কারীম (ﷺ) যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন দেখতে পেলেন ইয়াহুদীগণ আশুরা দিবসে রোযা পালন করে। তাদেরকে রোযা পালনের কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলল, এদিনই আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.) ও বনী ইসরাঈলকে ফিরাউনের উপর বিজয় দান করেছিলেন। তাই আমরা ঐ দিনের সম্মানার্থে রোযা পালন করে থাকি। রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমাদের চাইতে আমরা মুসা (আ.)- এর অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি রোযা পালনের আদেশ দেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৯৪৩ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩০ হাদীসের মান: সহীহ)

عَبْدَ اللَّهِ، بْنَ عَبَّاسٍ – رضى الله عنهما – يَقُولُ حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ – إِنْ شَاءَ اللَّهُ – صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ ” . قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم.

২.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন আশূরার দিন রোযা পালন করেন এবং লোকদেরকে রোযা পালনের নির্দেশ দেন, তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! ইয়াহুদী এবং নাসারা এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও রোযা পালন করব। বর্ণনাকারী বলেন, এখনো আগামী বছর আসেনি, এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ইনতেকাল হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৪ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانُوا يَصُومُونَ عَاشُورَاءَ قَبْلَ أَنْ يُفْرَضَ رَمَضَانُ، وَكَانَ يَوْمًا تُسْتَرُ فِيهِ الكَعْبَةُ فَلَمَّا فَرَضَ اللَّهُ رَمَضَانَ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ شَاءَ أَنْ يَصُومَهُ فَلْيَصُمْهُ، وَمَنْ شَاءَ أَنْ يَتْرُكَهُ فَلْيَتْرُكْهُ»

৩.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমযানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে মুসলিমগণ আশূরার রোযা পালন করতেন। সে দিনই কাবাঘর (গিলাফে) আবৃত করা হতো। তারপর আল্লাহ যখন রমযানের রোযা ফরয করলেন, তখন রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আশূরার রোযা যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা সে ছেড়ে দিবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৯২ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ

৪.অর্থ: আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেন, আশূরা দিবসের রোযা সম্পর্কে আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে, এর মাধ্যমে, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের (সগীরা) গোনাহ মাফ করে দিবেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬২ সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৭৫২ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلَّا هَذَا اليَوْمَ، يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ»

৫.অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে আশূরার দিনের রোযার উপরে অন্য দিনের রোযাকে প্রাধান্য প্রদান করতে দেখি নাই এবং এ মাস অর্থাৎ রমযান মাস (এর উপর অন্য মাসের গুরুত্ব প্রদান করতেও দেখি নাই)। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০০৬ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১১৩২ হাদীসের মান: সহীহ)

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَابْ
উত্তর লিখনে-খাদিজা তানহা।
শিক্ষার্থীঃ মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শায়েখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *