আপনি যদি সকাল বেলা খালি পেটে একটা পিঁয়াজ খান,তারপর সারাদিন পোলাও খোরমা চাইনিজ থাই যত দামি খাবারই খান না কেন! ঢেঁকুর দিলে পিঁয়াজের গন্ধই বের হবে। তদ্রুপ আপনার বাচ্চাকে ছোট বেলায় মাদরাসায় পড়িয়ে হাফেজ বা আলেম বানিয়ে তারপর তাকে স্কুল কলেজ যেখানেই পড়ান না কেন, ইংলিশ মিডিয়ায় পড়ালেও সে কোনদিন নাস্তিক হবে না। তবে হয় তো কালের বিবর্তনে বেনামাজি/ফাসেক হতে পারে কিন্তু সে কোন দিন তসলিমা নাসরিন হবে না, সালমান রুশদি, আহমেদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ কিংবা জাফর ইকবাল হবে না। আর এ বিষয়টি অনুমান করতে পেরেই ১৯ শতকের শুরুর দিকে মাদরাসা থেকে কোমলমতি বাচ্চাদের দূরে রাখতেই স্কটল্যান্ডে এক নাস্তিক আবিষ্কার করে “কিন্ডার গার্ডেন স্কুল” শিক্ষা ব্যবস্থা।
আফসোস আজ আমাদের মুসলিম মা বাবারা তাদের সন্তানকে এমন শিক্ষা দিচ্ছেন যে, বাচ্চাকে যদি জিজ্ঞেস করেন; কালিমা তায়্যিবাহ বলতে পারবে ? কুরআনের একটা সূরা বলো তো?দেখবেন, সে চুপ করে আছে। আর যদি বলেন; একটা ইংলিশ কবিতা বলতে, একটা গান গাইতে, দেখবেন চট করে বলতে শুরু করবে। হায়রে ডিজিটাল মা-বাবা! একবার ভেবে দেখুন! আপনার ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে কি হবে? তসলিমা নাসরিন বা হুমায়ুন আজাদ হয়ে যাবে না তো? মনে রাখবেন! ছোট বেলায় ইসলামী শিক্ষা গ্রহণ করলে বড় হয়েও ইসলামী আদর্শ থাকবে। নতুবা ছোট থেকেই নাস্তিকি শিক্ষা পেয়ে কপাল পুড়ে নাস্তিক হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ ও নবী বিরোধী হয়ে উঠবে। এবার আসুন কুরআন হাদীসের আলোকে আলেম হাফেজ হওয়ার কিছু ফজিলত জেনে নেয়।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আলেমদের প্রশংসা করে বলেছেন,”বান্দাদের মধ্যে কেবল আলেমরাই আল্লাহকে (বেশি) ভয় করে। (সূরা ফাতির আয়াত নং ২৮) অন্য আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন,”যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?” (সূরা যুমার আয়াত নং ৯)
আলেমদের মধ্যে আল্লাহর ভয় ও কুরআন হাদীসের জ্ঞান বেশি থাকার কারণেই তারা মা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায় না,ইয়াবা গাজা হিরোইন,ফেন্সিডেল খায় না,পতিতালয় রাত কাটায় না, চাঁদাবাজি করে না ইত্যাদি।
হযরত আবু ওমামা বাহিলি (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) এর কাছে দু’জন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হল, যাদের একজন আবেদ(অধিক ইবাদতকারী) ও অন্যজন আলেম। তখন নবীজী (সা:) বললেন একজন আলেমের মর্যাদা একজন আবেদের উপর তেমন যেমন আমার মর্যাদা তোমরাদের মাঝের সবচে’ নিম্ন ব্যক্তির উপর। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৬৮৫)
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, একজন বেআলেম ব্যক্তি যতই ইবাদত করুক না কেন সে কখনোই একজন আলেমের মর্যাদার সমান হবে না।
হযরত আবু দারদা (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে ইরশাদ করতে শুনেছি যে,যে ব্যক্তি ইলমে দ্বীন হাসিল করার উদ্দেশ্যে কোন রাস্তায় চলে আল্লাহ তাআলা এ কারণে তাকে জান্নাতের রাস্তাসমূহ থেকে এক রাস্তায় চালিয়ে দেন। [অর্থাৎ ইলম হাসিল করা তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের কারণ হয়ে যায়] ফেরেশতাগণ তালেবে ইলমের সন্তুষ্টির জন্য আপন পাখা বিছিয়ে দেন। আলেমের জন্য আসমান জমিনের সমস্ত মাখলুক এবং মাছ যা পানিতে রয়েছে সকলেই মাগফিরাতের দুআ করে। নিশ্চয় আবেদের উপর আলেমের ফযীলত এরূপ যেরূপ পূর্ণিমার চাঁদের ফযীলত সমস্ত তারকারাজির উপর। নিশ্চয় আলেমগণ নবীগণের ওয়ারিস আর নবীগণ দিনার ও দিরহাম এর ওয়ারিস বানান না। তারা তো ইলমের ওয়ারিস বানান। অতএব যে ব্যক্তি ইলমে দ্বীন হাসিল করল, সে পরিপূর্ণ অংশ লাভ করল। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৬৪১)
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে,আলেমের জন্য আসমান জমিনের সমস্ত মাখলুক মাগফিরাতের দুআ করে, আলেম বেআলেম ব্যক্তির চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং আলেমগণ অটোমেটিক সকল নবীর উত্তারাধিকারী হয়ে যান।
উসমান বিন আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোক শাফাআত করবে। নবীগণ, অতঃপর আলেমগণ, অতঃপর শহীদগণ। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৪৩১৩)
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো আলেমগণ অগণিত মানুষকে জান্নাতে প্রবেশের জন্য সুফারিশ করার ক্ষমতা পাবে।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে হাফেজ হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে চার বার বলেছেন,”আর আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি মুখস্ত করার জন্য। অতএব মুখস্ত করার কেউ আছে কি?”(সূরা কমার আয়াত নং ১৭,২২,৩২,৪০)
উল্লেখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো কুরআনের হাফেজ হওয়া কোন কঠিন কাজ নয় এবং মানুষ কুরআনের হাফেজ হোক এটা আল্লাহ তা’আলা চান।
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামাতের দিন ছাহেবে কুরআনকে তথা হাফেজে কুরআনকে বলা হবে, কুরআন পাঠ করতে করতে উপরে উঠতে থাকো, তুমি দুনিয়াতে যেভাবে ধীরেসুস্থে পাঠ করতে সেভাবে পাঠ করো। কেননা তোমার তিলাওয়াতের শেষ আয়াতেই (জান্নাতে) তোমার বাসস্থান হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৬৪)
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো কুরআনের হাফেজকে আল্লাহ তা’আলা ৬২৩৬-(৬৬৬৬) তলা ভবন দান করবেন অর্থাৎ কুরআনের আয়াতের সংখ্যা অনুসারে একজন হাফেজকে বহু তল ভবন দান করবেন।
আলী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন,যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করেছে এবং তা হেফয রেখেছে, এর হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম মেনেছে, তাকে আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তার পরিবারের এমন দশজন ব্যক্তি সর্ম্পকে তার শাফায়াত কবূল করবেন যাদের প্রত্যেকের জন্য জাহান্নাম অনিবার্য ছিল। (সুনানে তিরমিজি,হাদিস নং ২৯০৫,ইবনে মাজাহ হাদীস নং ২১৬)
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো কুরআনের হাফেজ নিজেও জান্নাতি হবে এবং তার পরিবারের দশজন জাহান্নামি ব্যক্তিকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিনজন লোক একত্রিত হলে তাদের একজনকে তাদের ইমাম বা নেতা হতে হবে। আর তাদের মধ্যে ইমামত বা নেতৃত্বের সবচাইতে বেশী হাক্বদ্বার সেই ব্যক্তি যে সবচেয়ে বেশী কুরআন মাজীদ অধ্যয়ন করেছে। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ১৪১৫) হযরত উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত,নবী (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম যে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শিখায়। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০২৭)
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো কুরআন শিক্ষা দানকারী মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি।
হযরত আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহর কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পরে তা নিয়ে আলোচনা করে,তখন তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হয়, তাদেরকে রহমাত ঢেকে নেয়, ফেরেশতাগণ তাদেরকে ঘিরে রাখে, এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের কাছে তাদের প্রশংসা করেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৪৫৫)
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল মাদরাসায় কুরআন তিলাওয়াত এবং তা নিয়ে আলোচনা করার কারণে প্রায় সব সময় তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হয়,তাদেরকে রহমাত ঢেকে নেয়, ফেরেশতাগণ তাদেরকে ঘিরে রাখে, এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের কাছে তাদের প্রশংসা করেন।
হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীনী ইলম অন্বেষণ করার জন্য বের হয়, সে ব্যক্তি ফী সাবীলিল্লাহ তথা আল্লাহর রাস্তায় থাকে ফিরে আসা পর্যন্ত। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২৬৪৭)
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো, ইলম শিখার উদ্দেশ্যে বের হলে সে আল্লাহর রাস্তায় থাকে,আর আল্লাহর রাস্তায় যে ব্যক্তি ইন্তেকাল করে সে শহীদ হয়ে থাকে।
হযরত আবু জর গিফারী (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, হে আবূ যর! তুমি যদি সকাল বেলা গিয়ে কুরআনের একটি আয়াত শিক্ষা কর তাহলে তা তোমার জন্য একশত রাকাত নফল পড়া থেকেও উত্তম। আর যদি সকাল বেলা গিয়ে ইলমের একটি অধ্যায় শিক্ষা কর, চাই তার উপর আমল করা হোক বা না হোক, তা তোমার জন্য এক হাজার রাকাত নফল নামায থেকেও উত্তম। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ২১৯)
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল একজন মাদরাসার ছাত্র কুরআন শিক্ষা ও অগণিত ইলমের অধ্যায় শিক্ষা করার কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার রাকাত নফল নামাযের সওয়াবের চেয়েও বেশি সওয়াব পায়।
আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে,রাসূল (সাঃ) বলেছেন, মহান রব্বুল ইজ্জাত বলেন, কুরআন (চর্চার ব্যস্ততা) ও আমার যিকির যাকে আমার নিকটে কিছু আবেদন করা হতে নিবৃত্ত রেখেছে আমি তাকে আমার কাছে যারা চায় তাদের চাইতে অনেক উত্তম বখশিশ দিব। সব কালামের উপর আল্লাহ্ তা’আলার কালামের গৌরব এত বেশি যত বেশি আল্লাহ্ তা’আলার সম্মান তাঁর সকল সৃষ্টির উপর। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২৯২৬)
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো একজন মাদরাসার ছাত্র কুরআন চর্চার ব্যস্ততার কারণে আল্লাহর কাছে কিছু না চেয়েও অনেক কিছু পেয়ে থাকে।
সাহল ইবনু মু‘আয আল-জুহানী (রহঃ) হতে তার পিতা বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন,যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং তদনুযায়ী আমল করে, কিয়ামতের দিন তার পিতা-মাতাকে এমন মুকুট পরানো হবে যার আলো সূর্যের আলোর চাইতেও উজ্জ্বল হবে। ধরে নাও, যদি সূর্য তোমাদের ঘরে বিদ্যমান থাকে (তাহলে তার আলো কিরূপ হবে?) তাহলে যে ব্যক্তি কুরআন অনুযায়ী আমল করে তার ব্যাপারটি কেমন হবে, তোমরা ধারণা করো তো! (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৪৫৩)
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো একজন মাদরাসার ছাত্র কুরআন শিক্ষা ও তদনুযায়ী আমল করার কারণে সে এবং তার মা বাবা উভয়ই বিরাট মর্যাদার অধিকারী হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে উল্লেখিত সকল কথাগুলো মেনে চলার তাওফীক দান করুন আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
Leave a Reply