প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম। আযান শেষে কিছু সংখ্যক মানুষকে দেখা যায় তারা দুই হাত তুলে আযানের দুআ দরুদ পড়েন। শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে এর বিধান কী ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
আযানের পর দুআ দুরুদ পড়া সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং খুবই ফযীলতপূর্ণ একটি আমল। তবে আযান শেষে উভয় হাত উঠিয়ে দুআ করার প্রথাটি হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয়। যেমনিভাবে মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময়, ঘুমাতে যাওয়ার ও ঘুম থেকে ওঠার সময়ে যে সকল মাসনুন দুআ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। কোথাও হাত উঠিয়ে দুআ করার কথা নেই। তেমনইভাবে আযানের দুআ সম্পর্কিত হাদীস- গুলো অধ্যায়ন করলেও দেখা যায় যে, সেখানেও হাত উঠিয়ে দুআ করার কথা নেই। সুতরাং আযানের দুআতে হাত না উঠানোই উত্তম। তবে কেউ যদি দুআর আদব মনে করে হাত তুলে তাহলে তা জায়েয হবে। কিন্তু কেউ যদি সুন্নত মনে করে কিংবা জরুরী মনে করে হাত তুলে দুআ করে তাহলে তা বিদআত হবে।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَىَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَىَّ صَلاَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا
১.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মুয়াযযিনের আযান দিতে শুনবে, তখন সে যা বলে উত্তরে তাই বলবে। তারপর আমার উপর দুরুদ পাঠ করবে। কারণ যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার উপর দশবার রহমত নাযিল করেন। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৩৮৪ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৬৭৮ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ القَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الوَسِيلَةَ وَالفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ القِيَامَةِ ”
২.অর্থ: জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,যে ব্যক্তি আযান শুনে বলবে, আল্লা-হুম্মা রববা হাযিহিদ দা‘ওয়াতিত তাম্মাহ, ওয়াস সলাতিল কয়িমাহ, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাহ, ওয়াব‘ আসহু মাক-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আদতাহ’। কিয়ামতের দিন অবশ্যই সে আমার শাফায়াত পাবে। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬১৪ হাদীসের মান: সহীহ)
৩.অপর হাদীসে উক্ত দুআর শেষে ইন্নাকা লাতুখলিফুল মিয়াদ বাক্যটি আছে। তাই উভয়টি একসঙ্গে বলা যেতে পারে। যদিও কোন কোন ইমাম শায বলেছেন কিন্তু আমল করতে কোন সমস্যা নেই। (সুনানে সগীর লিলবায়হাকী, হাদীস নং ২৯৬)
عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ أَنَّهُ قَالَ “ مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنَ وَأَنَا أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا غُفِرَ لَهُ ذَنْبُهُ ” .
৪.অর্থ: সা’দ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রা.) থেকে সূত্রে রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শোনার পর এই দুআ পড়বে:
তার গুনাহ ক্ষমা করা হবে, আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লহু ওয়াহদাহু লাশারীকালাহু ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়ারসূলুহ রদীতুবিল্লাহি রব্বাও ওবিল ইসলামী দীনাও ওবিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যা। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৭২১ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ২১০ হাদীসের মান: সহীহ)
উপরোক্ত হাদীসগুলো দ্বারা বুঝা গেল যে,আযানের পরে হাত উত্তোলন করে দুআ করার ব্যাপারে কোন দলিল নেই ৷ তাই হাত উত্তোলন না করে আযানের দুআ পাঠ করা উচিত। অবশ্য কেউ যদি হাত উঠানোকে সুন্নত মনে না করে কিংবা জরুরী মনে না করে আযানের দুআতে হাত তুলে তাহলে জায়েয আছে। আর কেউ যদি আযানের দুআ ছাড়া এমনিতে নিজের কোন প্রয়োজনে দুআ করে থাকে। তাহলে সেই দুআতে হাত উঠাতে কোন সমস্যা নেই।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে: রবিউল ইসলাম।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply