আযানের জবাব দেওয়ার সঠিক নিয়ম।

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় মুফতী সাহেব! আপনার কাছে আযানের জবাব দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাই ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

যখন মুয়াযযিন আযান দেয় তখন আযান শুনে জবাব দেওয়া পুরুষ-মহিলা সকলের জন্য সুন্নত। আযানের জবাব দেওয়ার নিয়ম হলো, মুয়াযযিন প্রত্যেকটি বাক্য বলে থামার পর শ্রোতা ওই বাক্যটি নিজেও অনুরূপ ভাবে বলবে। কিন্তু মুয়াযযিন ‘হাইয়্যা আলাস সলাহ’ ও ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলার সময় শ্রোতা ‘লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলবে। এটাই বিশুদ্ধ অভিমত এবং সুন্নত। যদি কয়েকটি আযানের ধ্বনি একসাথে আসে তাহলে যেটা প্রথমে শুনবে শুধু তার উত্তর দিলেই হবে। প্রতিটি আযানের উত্তর দিতে হবে না তবে কেউ চাইলে দিতে পারবে।

ফজরের আযানে মুয়াযযিন ‘আসসলাতু খইরুম মিনান নাউম’ বললে তার জওয়াবে অনুরূপই বলতে হবে। এর জওয়াবে সাদাকতা অবাররতা বলার কোন প্রমাণ নেই।আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ এর জবাবে কেউ কেউ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে থাকে। এমনটি করা ভুল বরং আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহই্ বলতে হবে। অবশ্য অন্য সময়ে রাসূল (ﷺ)-এর নাম শুনলে বা পড়লে সংক্ষিপ্ত দরূদ হিসেবে ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা ঠিক আছে। আযানে বা অন্য কোন স্থানে নবী (ﷺ) এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুম্বন করে চোখে বুলানো বিদআত। এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য কোন দলিল নেই। এ সংক্রান্ত যত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সবই জাল-বানোয়াট। তাই এমন কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরী। (সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৩৫৪৫ ইমদাদুল ফাতাওয়া ৫/২৫৯)

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا سَمِعْتُمُ النِّدَاءَ، فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ المُؤَذِّنُ»

১.অর্থ: আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যখন তোমরা আযান শুনতে পাও তখন মুয়াযযিন যা বলে তোমরাও তার অনুরূপ বলবে। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬১১ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৩৮৩ হাদীসের মান: সহীহ)

عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ – أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ فَقَالَ أَحَدُكُمُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ فَإِذَا قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ . قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ . فَإِذَا قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ثُمَّ قَالَ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ ثُمَّ قَالَ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ ثُمَّ قَالَ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ قَالَ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ ثُمَّ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مِنْ قَلْبِهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ ”

২.অর্থ: উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ যখন মুয়াযযিন আযানের সময় আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলবে, তখন তোমরাও আল্লাহু আকবার বলবে। অতঃপর মুয়াযযিন যখন আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলবে তখন তোমরাও আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলবে। অতঃপর মুয়াযযিন যখন আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ বলবে- তখন তোমরাও আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ বলবে। অতঃপর মুয়াযযিন যখন হাইয়া আলাস্ সালাহ্ বলবে তখন তোমরা বলবে, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্। অতঃপর মুয়াযযিন যখন হাইয়া আলাল ফালাহ্ বলবে তখন তোমরা বলবে লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্। অতঃপর মুয়াযযিন যখন আল্লাহু আকবার বলবে তখন তোমরা আল্লাহু আকবার বলবে। অতঃপর মুয়াযযিন যখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলবে, তখন তোমরাও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলবে। তোমরা যদি আন্তরিকভাবে এরূপ বল তবে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৮৫ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৫২৭ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا سَمِعَ الْمُؤَذِّنَ يَتَشَهَّدُ قَالَ ” وَأَنَا وَأَنَا ”

৩.অর্থ: আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন মুয়াযযিনকে শাহাদাত ধ্বনি দিতে শুনতেন তখন তিনি বলতেন, আমিও অনুরূপ সাক্ষ্য দিচ্ছি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৫২৬ হাদীসের মান: সহীহ)

উপরোক্ত হাদীস ও আলোচনা দ্বারা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মুয়াযযিন যে বাক্য দ্বারা আযান দিবেন শ্রোতারা অনুরূপ বাক্য দ্বারাই আযানের জবাব দিবেন। তবে কয়েকটি বাক্য এর ব্যতিক্রম, আর এটিও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। অতএব আযানের সময় একান্ত প্রয়োজন না হলে সাধারণ দ্বীনি ও দুনিয়াবী কথা বা কাজে লিপ্ত থাকা অনুচিত। সাধারণ বক্তৃতা বা সেমিনার চলাকালে আযান হলে সাময়িক তা স্থগিত রেখে সবার জন্য আযানের জবাব দেওয়া উত্তম। তবে কেউ যদি এমনটি না করে তাহলে তার নিন্দা করা ঠিক নয়। কেননা আযানের জবাব দেওয়া শ্রবণকারী সব মুসলমানের জন্য ফরয বা ওয়াজিব নয় বরং সুন্নত।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে- মুহাম্মদ ওমর ফারুক।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *