প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! আমার প্রশ্ন হলো,অশুদ্ধ তিলাওয়াতকারীকে ইমাম নিয়োগ করা যাবে কি ? দলিলসহ জানতে চাই।
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
এমন অশুদ্ধ তিলাওয়াতকারী ব্যক্তিকে ইমাম নিয়োগ করা জায়েয নয়। যে কুরআন পড়তে গেলে এমন ভুল পড়ে যাতে শব্দের অর্থ বদলে যায়। ইমাম হওয়ার অধিক যোগ্য ঐ ব্যক্তি যে সহীহ শুদ্ধভাবে সবচেয়ে ভালো কুরআন পড়তে পারে। আর যারা কুরআনে কারীম শুদ্ধ করে পড়তে পারে, তাদের নামায অশুদ্ধ উচ্চারণকারী ইমামের পিছনে হবে না। যদি বাধ্য হয়ে এমন ইমামের পিছনে নামায পড়তেই হয় তাহলে উক্ত নামায আবার পুনরায় পড়তে হবে। তবে তার মত বা তার থেকে মূর্খ লোকদের নামায হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে ভুলের বিষয়টি যদি একটি বড় আয়াত বা তিনটি ছোট আয়াত ব্যতীত অন্য আয়াতে হয়। সেক্ষেত্রে নামায ত্রুটিপূর্ণ হলেও কিন্তু তার এবং তার পিছনের সবার নামায হয়ে যাবে।
وَ رَتِّلِ الۡقُرۡاٰنَ تَرۡتِیۡلًا
১.অর্থ: আর কুরআন আবৃত্তি কর ধীরে ধীরে স্পষ্ট
ও সুন্দর ভাবে। (সূরা মুযযাম্মিল: আয়াত নং ৪)
اَلَّذِیۡنَ اٰتَیۡنٰہُمُ الۡکِتٰبَ یَتۡلُوۡنَہٗ حَقَّ تِلَاوَتِہٖ
২.অর্থ: যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি তারা যখন তা তিলাওয়াত করে, যেভাবে তিলাওয়াত করা উচিত। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ১২১)
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا كَانُوا ثَلاَثَةً فَلْيَؤُمَّهُمْ أَحَدُهُمْ وَأَحَقُّهُمْ بِالإِمَامَةِ أَقْرَؤُهُمْ
৩.অর্থ: আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যদি তিনজন লোক একত্রিত হয় তাহলে একজন তাদের ইমামতি করবে। আর ইমাম হওয়ার সবচাইতে যোগ্য তিনি, যিনি তাদের মধ্যে কুরআন পাঠে সর্বাপেক্ষা অভিজ্ঞ। (ইফা. সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪০৩ হাদীসের মান: সহীহ)
قَالَ سَمِعْتُ أَبَا مَسْعُودٍ الأَنْصَارِيَّ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ فَإِنْ كَانُوا فِي الْقِرَاءَةِ سَوَاءً فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ فَإِنْ كَانُوا فِي السُّنَّةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً فَإِنْ كَانُوا فِي الْهِجْرَةِ سَوَاءً فَأَكْبَرُهُمْ سِنًّا وَلاَ يُؤَمُّ الرَّجُلُ فِي سُلْطَانِهِ وَلاَ يُجْلَسُ عَلَى تَكْرِمَتِهِ فِي بَيْتِهِ إِلاَّ بِإِذْنِهِ
৪.অর্থ: আবু মাসউদ আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআন বেশি ভাল পড়তে জানে সে লোকদের ইমামতি করবে। যদি কুরআন পাঠে সবাই সমান হয়, তাহলে যে ব্যক্তি বেশি হাদীস (সুন্নাহ) জানে সে ইমামতি করবে। যদি হাদীসের বেলায়ও সবাই সমান হয়, তাহলে যে ব্যক্তি প্রথম হিজরত করেছে সে ইমামতি করবে। যদি এ ব্যাপারেও সবাই সমান হয়, তাহলে যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে ইমামতি করবে। কোন ব্যক্তি যেন অপর ব্যক্তির ইমামতির স্থানে তার সম্মতি ছাড়া ইমামতি না করে এবং অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে তার ব্যক্তিগত আসনে না বসে। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৪০৬ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ২৩৫ হাদীসের মান: সহীহ)
উপরোক্ত কুরআনের আয়াত ও সহীহ হদীস থেকে এ কথাই প্রমাণিত হলো যে,নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য যতটুকু কুরআন তিলাওয়াত করা ফরয, ততটুকু কুরআন মুখস্থ ও শুদ্ধভাবে পড়তে সক্ষম হতে হবে। সুতরাং ফরয পরিমাণ কুরআন মুখস্থ না থাকলে এবং শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করতে না পারলে তার ইমামতি করা জায়েয হবে না। তবে হ্যাঁ তার মতো অশুদ্ধ তিলাওয়াতকারী লোকদের ইমামতি করতে পারবে। আর যদি ছোট খাটো তাজবীদের ভুল হয় তাহলে সকলেরই ইমামতি করতে পারবে। তবে সর্ব অবস্থায় ভালো কারী ইমাম নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মো. ফয়জুল্লাহ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply