অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ করা যাবে কি ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম! মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য অভিভাবকের অনুমতি শর্ত কিনা ? যদি কেউ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ করে তাহলে সেই বিবাহের হুকুম কী ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

বিবাহ বৈধ হওয়ার জন্য কমপক্ষে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষী থাকতে হবে। তাদের উপস্থিতিতে প্রাপ্তবয়স্ক পাত্র ও পাত্রী যদি মৌখিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব প্রদান ও প্রস্তাব গ্রহণ সম্পন্ন করে। তাহলে তাদের বিবাহ সহীহ হয়ে যাবে যদিও অভিভাবকের অনুমতি না থাকে। তবে এক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা হলো অভিভাবকের অনুমতিক্রমে বিবাহ করা। অন্যথায় এ বিবাহ শরঈ ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে অপরিপূর্ণ এবং অনুত্তম হবে। কিন্তু এর দ্বারা বিবাহ বাতিল হবে না। যে সকল হাদীস দ্বারা একথা বুঝা যায় যে, অভিভাবক ছাড়া বিবাহ সম্পন্ন হয় না। সেগুলোর অনেকগুলো জবাব মুহাদ্দিসীনে কেরাম ও ফুকাহায়ে কেরাম দিয়েছেন। যেমন তারা বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিবাহ পরিপূর্ণতাদানের জন্য অভিভাবক থাকা প্রয়োজন। কারণ অভিভাবক বিবাহের পরিপূরক। সুতরাং ইহকালীন ও পরকালীন বিশেষ কল্যাণ না থাকলে অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া বিবাহ করা উচিত নয়।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا

১.অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে নিজেই বেশি হকদার। (সহীহ মুসলিম,হাদীস নং ১৪২১ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৯৮ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ جَارِيَةً، بِكْرًا أَتَتِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَتْ أَنَّ أَبَاهَا زَوَّجَهَا وَهِيَ كَارِهَةٌ فَخَيَّرَهَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم

২.অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক কুমারী (প্রাপ্ত বয়স্ক) মেয়ে নবী (ﷺ) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ পেশ করে যে, তার পিতা তাকে এমন এক ব্যক্তির সাথে বিবাহ দিয়েছে,যে তার অপছন্দ। নবী (ﷺ) এ ব্যাপারে সে মেয়েকে ইখতিয়ার প্রদান করেন। (সে যাকে ইচ্ছে বিয়ে করতে পারে বা এ বিয়ে রাখতেও পারে)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৯৬ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৮৭৫ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ ابْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ جَاءَتْ فَتَاةٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ إِنَّ أَبِي زَوَّجَنِي ابْنَ أَخِيهِ لِيَرْفَعَ بِي خَسِيسَتَهُ قَالَ فَجَعَلَ الْأَمْرَ إِلَيْهَا فَقَالَتْ قَدْ أَجَزْتُ مَا صَنَعَ أَبِي وَلَكِنْ أَرَدْتُ أَنْ تَعْلَمَ النِّسَاءُ أَنْ لَيْسَ إِلَى الْآبَاءِ مِنْ الْأَمْرِ شَيْءٌ

৩.অর্থ: বুরায়দা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জনৈক মহিলা নবী (ﷺ) এর কাছে এসে বললো, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার কাছে বিয়ে দিয়েছে। যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। বর্ণনাকারী বলেনঃ তখন রসূলুল্লাহ (ﷺ) বিষয়টি মেয়ের ইখতিয়ারের উপর ন্যস্ত করেন। (অর্থাৎ ইচ্ছে করলে বিয়ে রাখতেও পারবে আবার ভেঙ্গেও দিতে পারবে) তিনি বলেনঃ আমার পিতা যা করেছেন, তা আমি মেনে নিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েরা যেন জেনে নেয় যে, বিয়ের ব্যাপারে পিতাদের (চূড়ান্ত) মতের অধিকার নেই। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৮৭৪ হাদীসের মান: সহীহ)

তাহকীক: আশ-শাওকানী রহ. আর-রুবাঈ (রহ.) ও আলবানী (রহ.) বলেন, এর সমস্ত রাবী সহীহ বুখারীর রাবী। ওয়াদিঈ (রহ.) বলেন, ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ। (আদ-দাররিল মুদিয়্যাহ ২০৪ ফাতহুল গফফার ১৪১৭/৩ আত-তালিকতুর রদিয়্যাহ ১৪১/২ সহীহুল মুসনাদ ১৫৩)

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَابْ
উত্তর লিখনে- হুমায়ূন কবির।
শিক্ষার্থীঃ মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শায়েখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *